সরকারের জরুরি ভিত্তিতে ইসি আইন প্রণয়ন করা উচিত

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গত বুধবার ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২১’-এর প্রস্তাবিত আইনের চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করেছে। আমরা সরকারকে সুজনের দাখিল করা খসড়া আইনের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি ।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গত বুধবার 'প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২১'-এর প্রস্তাবিত আইনের চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করেছে। আমরা সরকারকে সুজনের দাখিল করা খসড়া আইনের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।

সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের বিধান থাকলেও গত ৫০ বছরে কোনো সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নেয়নি। ধারাবাহিকভাবে সরকারগুলো এমন একটি গুরুতর সাংবিধানিক আদেশ উপেক্ষা করেছে, যা জনগণের গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকারকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে। এটা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগজনক।

নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের ব্যাপক অবিশ্বাস এবং ভোটারদের মধ্যে ভয়াবহ উদাসীনতার পটভূমিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফলে, এখনই এই ধরনের আইন প্রণয়নের উপযুক্ত সময়, যা  আগেই আমাদের নির্বাচন সংক্রান্ত বিতর্ক থেকে বাঁচাতে পারতো।

যাই হোক, নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি; যেমনটি গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের সময় দেখা গেছে, যেখানে মাত্র ৩৪ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি ছিল এবং গত বছরের ২১ মার্চ ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনের সময়  যখন লজ্জাজনকভাবে মাত্র ৫ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়ে—তখন এটা স্পষ্ট যে, আমাদের গণতন্ত্র কখনোই এত বেশি বিপদে পড়েনি এবং এই ধরনের আইন আর কখনোই এত বেশি প্রয়োজন ছিল না। প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় 'নির্বাচিত' হওয়ার অভ্যাস (উদাহরণস্বরূপ, গত সেপ্টেম্বরে ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন) বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রকৃত অবস্থার বা গণতন্ত্রের অভাবের ইঙ্গিত দেয়। যখন ভোটার বা বিরোধী প্রার্থী কেউই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না, তখন আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা যে ব্যর্থ হয়েছে, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার একটি মাত্র উপায় রয়েছে। আর তা হলো—এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যেখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং যেটি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। জনগণ, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের কাছে সন্তোষজনক শর্তের মাধ্যমে কীভাবে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করা হবে, সে বিষয়ে বিশদ বর্ণনা থাকা একটি আইন প্রণয়ন করা সেই প্রক্রিয়ার একটি অপরিহার্য প্রথম ধাপ। এর কোনো বিকল্প নেই। আইন প্রণয়নের জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই, এমন অজুহাত আমরা মেনে নিতে পারি না। আইন প্রণয়নের জন্য এখনও অনেক সময় আছে। বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট নাগরিকরা ইতোমধ্যে তা স্পষ্ট করেছেন। সেইসঙ্গে সরকারকে এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে তাদের ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন।

তাদের জনপ্রিয়তা কখনোই এত বেশি ছিল না— ক্ষমতাসীন দল যদি সত্যিকার অর্থে নিজেদের এ দাবিতে বিশ্বাস রাখে, তাহলে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে তাদের ভয় পাওয়া উচিত নয়। এ ধরনের নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো আইনের মাধ্যমে স্পষ্ট করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলো এ ধরনের আইন প্রণয়নে সফল হয়েছে—তাহলে আমরা কেন পারব না? সময়ের অভাব বা অন্য কোনো কারণ যে এটি না হওয়ার কারণ না, তা স্পষ্ট। একমাত্র যে জিনিসটির অনুপস্থিতি আমরা দেখি, তা হলো রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি। সেটিই আসল চ্যালেঞ্জ।

অনুবাদ করেছেন মুনীর মমতাজ

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshi students terrified over attack on foreigners in Kyrgyzstan

Mobs attacked medical students, including Bangladeshis and Indians, in Kyrgyzstani capital Bishkek on Friday and now they are staying indoors fearing further attacks

5h ago