ই-কমার্স

গেটওয়েতে আটকে থাকা ই-কমার্সের ২১০ কোটি টাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা

ই-ভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এসেছে তাদের বেশ কয়েকজনকে ইতোমধ্যে হাজতে নেওয়া হয়েছে। অগ্রিম টাকা নিয়েও সময়মত পণ্য ডেলিভারি না দেওয়া থেকে মূলত এ সমস্যার সূত্রপাত। এখন এই আইনি জটিলতার কারণে হাজারো গ্রাহকের টাকা বিভিন্ন পেমেন্ট চ্যানেলে আটকে আছে।
প্রতীকী ছবি | স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ই-ভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এসেছে তাদের বেশ কয়েকজনকে ইতোমধ্যে হাজতে নেওয়া হয়েছে। অগ্রিম টাকা নিয়েও সময়মত পণ্য ডেলিভারি না দেওয়া থেকে মূলত এ সমস্যার সূত্রপাত। এখন এই আইনি জটিলতার কারণে হাজারো গ্রাহকের টাকা বিভিন্ন পেমেন্ট চ্যানেলে আটকে আছে।

অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভারি না দেওয়ার অভিযোগ বাড়তে থাকায় সরকার এ বছরের জুলাই থেকে ই-কমার্স ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ জারি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই নীতিমালা জারি হওয়ার পর ভোক্তারা বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে ৪৯০ কোটি টাকার পণ্য অর্ডার করেছেন।

ইতোমধ্যে ভোক্তারা ২৮০ কোটি টাকার পণ্য বুঝে পেয়েছেন।

বাকি ২১০ কোটি টাকা বিভিন্ন পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি), পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর ও মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) গেটওয়েতে আটকে আছে, কারণ এই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো ভোক্তাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দেয়নি এবং পেমেন্ট গেটওয়ে সেবাদাতাদের এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি।

পিএসপি এবং এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানান, ১ জুলাই থেকে শুরু করে তারা ভোক্তাদের করা পেমেন্টগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রাস্ট-কাম-সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে (টিসিএসএ) রাখছে এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্যের ডেলিভারি নিশ্চিত করার তথ্যের অপেক্ষায় আছে।

ডেলিভারি নিশ্চিত না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে ভোক্তাদের অগ্রিম পেমেন্ট টিসিএসএতে রাখা হচ্ছে।

টিসিএসএগুলো তত্ত্বাবধায়ক অ্যাকাউন্ট হিসেবে কাজ করে, যেখানে এমএফএস প্রতিষ্ঠান ও ই-মানি সেবাদাতাদের ই-মানির বিপরীতে নগদ টাকা সংরক্ষণ করা হয়।

নিয়মানুযায়ী ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারির সময়সীমা পার হলেও পিএসপি বা এমএফএস সেবাদাতারা ভোক্তাদের কোনো ধরনের রিফান্ড দিতে পারে না।

এক্ষেত্রে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পিএসপি বা অন্যান্য পেমেন্ট গেটওয়ে অপারেটরদের কাছে যেতে হবে। এ ধরনের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত পেমেন্ট সেবাদাতারা এই টাকা টিসিএসএতে আটকে রাখতে বাধ্য।

তবে ই-ভ্যালি বা ই-অরেঞ্জের মত ব্যবসা সংকুচিত করা বা প্রায় অকার্যকর হয়ে যাওয়া ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ভোক্তাদের ১০ দিনের নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পর কী পরিণতি হবে, তা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে

পিএসপি, পিএসও এবং এমএফএস সেবাদাতাদের ব্যাংকার ও কর্মকর্তারা জানান, তাদের কাছে ভোক্তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কোন নির্দেশনা না থাকায় তারা এক্ষেত্রে অসহায়।

দেশের বৃহত্তম এমএফএস ও পেমেন্ট গেটওয়ে অপারেটর বিকাশের মুখপাত্র শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের কাছ থেকে আসতে হবে। তবে আমরা এটুকু বলতে পারি, পণ্য ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত টাকা আমাদের গেটওয়েতে থাকবে।'

গত ১৬ সেপ্টেম্বর একজন ভোক্তা ই-ভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। ফলশ্রুতিতে বিষয়টি সবার নজরে আসে।

অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করার পর র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব) জানায়, ই-ভ্যালির ভোক্তাদের পরিশোধ করা ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা একাধিক অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের কাছে আছে।

ভোক্তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ই-অরেঞ্জের শীর্ষ কর্মকর্তারাও হাজতে আছেন।

ডালিম জানান, ই-ভ্যালির সঙ্গে তাদের পেমেন্ট গেটওয়ে এখনো চালু আছে। পণ্য ডেলিভারি সম্পর্কে নিশ্চয়তা পেলেই কেবল ই-ভ্যালির অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হচ্ছে, জানান তিনি।

অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পেমেন্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সাউথ ইস্ট ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, 'পেমেন্ট নিশ্চিত করার আগে আমরা ভোক্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হই তিনি পণ্য বুঝে পেয়েছেন কী না।'

'পিএসপি হিসেবে আমরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে কোন নির্দেশনা ছাড়া গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দিতে পারি না', বলেন তিনি।

এমএফএস অপারেটর নগদও জানিয়েছে তারা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের নির্দেশ ছাড়া টাকা রিফান্ড করতে পারে না।

এসএসএল ওয়্যারলেস লিমিটেড দেশের সবচেয়ে বড় পেমেন্ট গেটওয়ে পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানের চিফ টেকনিকাল অফিসার মো ইফতেখার আলম ইসহাক জানান, ভোক্তার সঙ্গে তাদের কোনো সরাসরি সংযোগ নেই।

তিনি বলেন, 'ভোক্তার টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল।

ব্যাংকার ও পিএসওরা জানিয়েছে, জুলাইর পরে যদি কেউ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে পণ্য কিনে থাকেন, তাহলে তিনি যে ব্যাংক থেকে কার্ডটি সংগ্রহ করেছেন, তাদের কাছে পণ্য না পাওয়ার অভিযোগ জানাতে পারেন।

তবে এমএফএসের ক্ষেত্রে এখনো সরকার এ ধরনের প্রক্রিয়া চালু করেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, পেমেন্ট গেটওয়েগুলো পণ্যের মূল্য ফেরত দিতে পারবে না, কারণ পরবর্তীতে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম যদি পণ্য ডেলিভারি দিয়ে অর্থ দাবি করে, সেক্ষেত্রে তারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বে।

তিনি বলেন, 'যেসব ভোক্তা ১ জুলাইর পরে পণ্য কিনেছেন, তারা যাতে অভিযোগ করে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থ ফিরে পেতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক যৌথ ভাবে একটি উপায় বের করার চেষ্টা করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, সরকার চেষ্টা করছে রিফান্ড বা ভোক্তার টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার একটি আইনি প্রক্রিয়া তৈরি করতে। তবে জুলাইর আগে হওয়া পেমেন্টগুলোর ক্ষেত্রে ভোক্তাদের আদালতে দায়ের করা মামলার নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, জানান তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, 'আমরা সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করব।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

The invisible ones

Of the over 7 crore people employed in Bangladesh, 85 percent (nearly 6 crore) are vulnerable as they work in the informal sector, which lacks basic social and legal protection, and employment benefits.

9h ago