ফেসবুক ভিত্তিক পোশাক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

একটি ফেসবুক পেজ থেকে স্ত্রীর জন্য ২টি গাউন অর্ডার করেছিলেন ঢাকার রাজারবাগের বাসিন্দা হোসেন আহমেদ। এর জন্য আগাম পরিশোধ করেন ৩ হাজার ৩৪০ টাকা।

একটি ফেসবুক পেজ থেকে স্ত্রীর জন্য ২টি গাউন অর্ডার করেছিলেন ঢাকার রাজারবাগের বাসিন্দা হোসেন আহমেদ। এর জন্য আগাম পরিশোধ করেন ৩ হাজার ৩৪০ টাকা।

অর্ডার করার সময় ইভা ফ্যাশন শপ তাকে জানায়, গাউনগুলো ১৪ অক্টোবরের মধ্যে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছে যাবে।

অবশেষে ১৬ অক্টোবর ডেলিভারি দেওয়া হয়, কিন্তু প্যাকেট খোলার পর বিস্মিত হয়ে হোসেন লক্ষ্য করেন, গাউনের পরিবর্তে তাকে ২টি 'নিম্নমানের' শাড়ি পাঠানো হয়েছে।

তিনি বিক্রেতাকে বিষয়টি জানান। উত্তরে তারা তাকে জানায়, ভুলবশত তার পণ্যগুলো খাগড়াছড়িতে পাঠানো হয়েছে এবং এর ফলে তাকে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দিয়ে পণ্যগুলো সেখান থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

পেশায় একটি আইসক্রিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ও বিপণন কর্মকর্তা হোসেন ২০ অক্টোবর সাভারের নিউ মার্কেট এলাকার রাজ্জাক প্লাজায় যান। তিনি অনলাইন শপের মালিকদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলে বিষয়টির মীমাংসা করতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে জানতে পারেন, সেখানে এই নামে কোনো দোকানই নেই।

তিনি বিক্রেতার মোবাইলে ফোন করে জানান, রাজ্জাক প্লাজায় এরকম কোনো দোকান নেই। তখন ফোনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তি তাকে হত্যার হুমকি দেন বলে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে অভিযোগ করেন হোসেন।

ঝামেলা এড়াতে তিনি দ্রুত এলাকা ছেড়ে চলে যান। 'আমি আমার পণ্যের ডেলিভারি আর পাইনি', বলেন তিনি।

এই সংবাদদাতা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে দেওয়া ফোন নাম্বারে বেশ কয়েকবার ফোন করেন, কিন্তু প্রতিবারই ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

খুলনার শিববাড়ি মোড়ের বাসিন্দা শিউলি সানা সম্প্রতি তৃশা ফ্যাশন হাউস নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা দামের একটি পোশাক অর্ডার করেন। এর জন্য তিনি ১৫০ টাকা অগ্রিম দেন। কয়েক দিন পরে তার ঠিকানায় একটি পার্সেল আসে। সালোয়ার কামিজের পরিবর্তে সেখানে এক টুকরো কাপড় ছিল।

তিনি ফেসবুক পেজে দেওয়া ফোন নম্বরের মাধ্যমে বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাননি।

বিক্রেতার দেওয়া রশিদের ঠিকানা অনুযায়ী শিউলির এক আত্মীয় ঢাকার মিরপুর-১ এর মুক্তবাংলা মার্কেটে যান, কিন্তু সেখানে তিনি তৃষা ফ্যাশন হাউজ নামে কোনো দোকান খুঁজে পাননি।

এই সংবাদদাতা ওই ফেসবুক পেজে দেওয়া বিক্রেতার ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করে নাম্বারটি বন্ধ পেয়েছেন।

ফেসবুক পেজে কেনাকাটায় আরও অনেকেরই অভিজ্ঞতা হোসেন ও শিউলির মতো।

২০১৭ এর জুলাই থেকে ২০২১ এর আগস্ট পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ৯৮২টি ফেসবুক পেজের বিরুদ্ধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা অধিদপ্তরে (ডিএনসিআরপি) অভিযোগ করা হয়েছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ৬৯৪টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়নি।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর তথ্য অনুযায়ী দেশে আড়াই লাখ কেনাবেচার ফেসবুক পেজ আছে যারা এফ-কমার্স প্রতিষ্ঠান নামে পরিচিত।

গত দুই বছরে করোনাভাইরাস মহামারি ও লকডাউনের কারণে বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও ফেসবুক ভিত্তিক ব্যবসার মাধ্যমে ই-কমার্সের বিপুল প্রসার ঘটেছে।

তবে কিছু বিতর্কিত ব্যবসায়িক পন্থার কারণে এই খাতের সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নজিরবিহীন মূল্য ছাড়, পণ্য ডেলিভারিতে বিলম্ব এবং কিছু প্রতিষ্ঠানের ভুল পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার ব্যাপারগুলো এক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডিএনসিআরপির মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, 'কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে যেনে তারপর ভোক্তাদের সেখানে পণ্য ক্রয়ের জন্য অর্ডার করা উচিত। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে সবার আগে ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে।'

ফ্যাশন হাউস অঞ্জনস এর স্বত্বাধিকারী শাহীন আহমেদ ভোক্তাদেরকে ফেসবুক ভিত্তিক শপ থেকে পণ্য কেনার সময় মূল্য পরিশোধের জন্য ক্যাশ অন ডেলিভারি পদ্ধতি ব্যবহার করার উপদেশ দেন।

তিনি বলেন, 'এতে ভোক্তারা যেকোনো ধরনের ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবেন।'

সরকারি সংস্থাগুলোর উচিত ফেসবুক ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনলাইন স্টোর চালানোর জন্য লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা, যোগ করেন তিনি।

ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস্ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শাহীন বলেন, 'যখন কারো ট্রেড লাইসেন্স বা নিবন্ধন থাকে না, তখন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেও কোনো লাভ হয় না।'

সরকার ই-কমার্স খাতের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, কিন্তু এখনো ফেসবুক ভিত্তিক বাণিজ্যের জন্য কোনো নীতিমালা তৈরি করা হয়নি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক এবং ডিজিটাল কমার্স সেলের সাবেক প্রধান হাফিজুর রহমান বলেন, 'আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।'

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান জানান, সরকারের উচিত এফ-কমার্স নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করা।

প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Create right conditions for Rohingya repatriation: G7

Foreign ministers from the Group of Seven (G7) countries have stressed the need to create conditions for the voluntary, safe, dignified, and sustainable return of all Rohingya refugees and displaced persons to Myanmar

5h ago