চলতি অর্থবছরে কালো টাকা বৈধকরণে ভাটা

কালো টাকার মালিকরা তাদের অপ্রদর্শিত সম্পদ বৈধ করার আগ্রহ হারিয়েছেন। অন্তত এই উৎস থেকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সংগৃহীত করের পরিমাণ সেই কথাই বলছে।

কালো টাকার মালিকরা তাদের অপ্রদর্শিত সম্পদ বৈধ করার আগ্রহ হারিয়েছেন। অন্তত এই উৎস থেকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সংগৃহীত করের পরিমাণ সেই কথাই বলছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ প্রদর্শনের ফলে নতুন রেকর্ড তৈরি করে ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

অথচ, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৩০০ কোটি টাকার অপ্রদর্শিত সম্পদ থেকে ৯৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকার কর ও জরিমানা সংগ্রহ করেছে এনবিআর।

এর মধ্যে ৯৭ কোটি এসেছে অপ্রদর্শিত সম্পত্তি ও নগদ অর্থ বৈধকরণের মাধ্যমে এবং আড়াই কোটি এসেছে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে।

বাজেট ঘোষণার আগে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমোদন না থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, চলতি অর্থবছরে খুব বেশি সাড়া না পাওয়ায় আগামী অর্থবছরে সরকার কালো টাকা সাদা করার বিধান প্রত্যাহার করতে পারে।

কম সাড়া পাওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে করের হার বাড়ানো ও জরিমানা ধার্য করাকে চিহ্নিত করা যায়।

চলতি অর্থবছরে, পুঁজিবাজার, ব্যাংকের সঞ্চয়ী পণ্য অথবা জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত সম্পদের বৈধকরণের ক্ষেত্রে করের হার ২৫ শতাংশ এবং মোট করের ওপর আরও ৫ শতাংশ জরিমানা আরোপ করা হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরে করের পরিমাণ ১০ শতাংশ ছিল এবং কোনো জরিমানার বিধান ছিল না।

২০২১-২২ অর্থবছরে অপ্রদর্শিত সম্পদকে বৈধ করার জন্য নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে করের হার ১০ শতাংশ। তবে, কেউ এই সুবিধা নেননি।

বাড়ি, জমি, দালান অথবা অ্যাপার্টমেন্টের মতো অপ্রদর্শিত সম্পত্তিকে বৈধ করার জন্য ধার্য করের হার অপরিবর্তিত আছে। এ ক্ষেত্রে সম্পত্তির ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী করের হার নির্ধারণ করা হয়।

আগামী বছরের বাজেট নিয়ে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কালো টাকার মালিকদের এ ধরনের সুবিধা আবারও দেওয়া হবে কি না, সে প্রসঙ্গে এখনো কিছু বলেননি বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'এটি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে যৌক্তিক নয়, নৈতিকতার দিক দিয়ে গ্রহণযোগ্য নয় এবং যারা নিয়মিত কর দেন, তারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে এটিকে ভালোভাবে নেন না।'

তিনি বলেন, 'এই বিধানটি আইন অমান্যকারীদের দায়মুক্ত করে, যা সৎ করদাতাদের প্রতি একটি ভুল বার্তা দেয় এবং তাদেরকে নিয়মিত কর দেওয়ার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করে।'

প্রতিবেশী দেশ ভারতের অর্থনীতি থেকে কালো টাকার প্রভাব দূর করার সাফল্যের উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেন, 'আমাদের উচিৎ কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতাকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠার দিকে নজর দেওয়া—কর ফাঁকির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স বজায় রাখা।'

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন জানান, অনিচ্ছা সত্ত্বেও যারা কর খেলাপি হতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের আয়কে বৈধ করার আরেকটি সুযোগ দেওয়া উচিৎ। তবে, এই সুযোগ সারা বছর চালু থাকা উচিৎ নয়।

তিনি বলেন, 'তবে অবৈধ পথে অর্জিত অর্থের ক্ষেত্রে এটি কখনো বিবেচনা করা উচিৎ নয়।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Student politics, Buet and ‘Smart Bangladesh’

General students of Buet have been vehemently opposing the reintroduction of student politics on their campus, the reasons for which are powerful, painful, and obvious.

1h ago