‘পে লেটার’ সেবা চালু করছে পাঠাও

বাংলাদেশি ভোক্তারা এখন 'বাই নাও, পে লেটার' (বিএনপিএল) সেবা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম পাঠাও আজ ১৬ নভেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবা চালু করতে যাচ্ছে।

মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে অনলাইন শপিংয়ের ব্যবহার গত এক বছরে অনেক বেড়েছে এবং একই সঙ্গে বিএনপিএলও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

এই সেবার মাধ্যমে ক্রেতারা পণ্যের মূল্য কোনো বাড়তি সুদ না দিয়েই কয়েকটি কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারেন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিস্তি পরিশোধ না করলে একটি 'লেট ফি' দিতে হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোক্তারা কোনো বাড়তি আর্থিক চাপে না পড়েও নিজ ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে পারেন।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিএনপিএল সেবার মাধ্যমে গত দিওয়ালী মৌসুমে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিক্রি হয়েছে, যার ফলে ব্যবসায়ীরা মহামারির ধাক্কা অনেকাংশে কাটাতে পেরেছেন।

সারা বিশ্বে এই খাতে শীর্ষে আছে সুইডেনের প্রতিষ্ঠান ক্লারনা। ক্লারনা ৪৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যমান নিয়ে ইউরোপের সবচেয়ে ধনাঢ্য ফিনটেক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এরপরে আছে সিডনী ভিত্তিক আফটারপে, যাদেরকে টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্কোয়ার গত আগস্টে ২৯ বিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নিয়েছে।

এমন কী মাস্টারকার্ডের মতো প্রথাগত পেমেন্ট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এই খাত থেকে কিছু বাড়তি আয় করার জোরালো চেষ্টা চালাচ্ছে। এই খাতের ক্ষেত্রে যে মতবাদটি সবাই মেনে নিচ্ছেন তা হলো, মিলেনিয়াল এবং জেনারেশন জেড এর ভোক্তারা ক্রেডিট কার্ড বা এ ধরণের কিছুর ওপর ভরসা রাখতে পারেন না, কিন্তু তারা পণ্য কেনার জন্য টাকা ধার নিতে আগ্রহী।

পাঠাও এর রাইড শেয়ারিং, খাদ্য ডেলিভারি এবং লজিস্টিকস সেবার ভোক্তাদের মধ্যে প্রচুর তরুণ-তরুণী রয়েছেন, যার কারণে এই সেবা তাদের ব্যবসাকে আরও এগিয়ে নিতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইকুইটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রেডবার্নের মতে, এই সেবা নতুন ভোক্তা পেতে অসামান্য উদ্যোগ হিসেবে কাজ করতে পারে।

বর্তমানে, পাঠাও ফুড ব্যবহারকারীরা খাবার অর্ডার করার সময় একবারই মোবাইলে চাপ দিয়ে 'পে লেটার' বেছে নিয়ে অর্ডার নিশ্চিত করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পরে পেমেন্ট করার শর্তে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত খাবার অর্ডার দেওয়া যেতে পারে। পুরো বকেয়া পরিশোধ করা হলে আবারও ভোক্তা একই সুবিধা পাবেন।

পাঠাও তাদের ভোক্তাদের 'পে লেটার' সেবার জন্য বাড়তি কোনো চার্জ নেবে না। ১৫ দিনের 'স্পেন্ডিং পিরিয়ড' বা খরচের সময়সীমা শেষে ৩০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। এই সময়সীমা শেষে বকেয়া পরিশোধ করা না হলে ২০০ টাকা পর্যন্ত লেট ফি চার্জ করা হতে পারে। পাঠাও তাদের অ্যাপের মাধ্যমে সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ভোক্তাদেরকে বকেয়া পরিশোধ করার কথা মনে করিয়ে দেবে।

বকেয়া পরিশোধ করার জন্য যেকোনো ডিজিটাল পেমেন্ট প্রক্রিয়া ব্যবহার করা যাবে এবং এই ৩০ দিন সময়সীমার মধ্যে তারা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী ভাগ ভাগ করে বকেয়া পরিশোধ করতে পারবেন।

পাঠাও এর উন্নত ডেটা ও অ্যানালিটিক্স ইঞ্জিনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা লয়্যাল ভোক্তাদের জন্য বর্তমানে এই সুবিধাটি চালু করা হয়েছে।

২০২২ এর প্রথম প্রান্তিক থেকে এই সেবার আওতা সম্প্রসারণ করা হবে এবং এটি ফুড ছাড়া পাঠাও এর অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রে এবং উপযোগী ভোক্তাদের জন্যও উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

পাঠাও এর নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহিম আহমেদ বলেন, 'এখন সময় এসেছে উন্নত বিশ্বের সহজ ব্যবহার্য সেবা বাংলাদেশিদের কাছে নিয়ে আসার। সে পথে যাত্রার অনেক ধাপের মধ্যে প্রথম ধাপ হচ্ছে "পে লেটার" সেবা চালু করা।'

গতকাল প্রতিষ্ঠানটি একটি বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম মোবাইল ও ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত। তাদের ধার নেওয়ার প্রয়োজন ও যোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা অস্বাভাবিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হন।

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেসব দেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবচেয়ে কম তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশেরও কম মানুষ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন।

এ ছাড়াও, মানুষের আয়ের ব্যবধান এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সম্পর্কে ধারনার অভাবে বেশিরভাগ লেনদেন নগদ অর্থের মাধ্যমে হচ্ছে।

পাঠাও তাদের উন্নত প্রযুক্তি ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল ক্রেডিটের জগতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

ফাহিম আরও বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবৃদ্ধি অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারবো।'

বর্তমানে বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম শপআপ বিএনপিএল সেবা দিচ্ছে। কিন্তু এটি শুধুমাত্র ছোট খুচরা বিক্রেতাদের জন্য প্রযোজ্য। ভোক্তারা এই সেবা ব্যবহার করার সুযোগ পান না।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy

The number of Bangladeshis crossing the perilous Mediterranean Sea to reach Italy has doubled in the first two months this year in comparison with the same period last year.

7h ago