ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বাড়বে

মূলত রাজস্ব আদায়ে স্থবিরতা ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে।

মূলত রাজস্ব আদায়ে স্থবিরতা ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে।

চলতি অর্থবছরে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সরকার ১ জুলাই থেকে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ১৯ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

তবে ২৬ মের মধ্যে ঋণের পরিমাণ বেড়ে ২৬ হাজার ৭৪১ কোটিতে পৌঁছায়। অর্থাৎ, সরকার মাত্র ১ মাসের মধ্যে ৭ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

বিশ্লেষকরা জানান, সরকার জুন মাসে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ আরও বাড়াতে পারে, কারণ এটিই অর্থবছরের শেষ মাস এবং সাধারণত এ মাসেই সব ধরনের বকেয়া পরিশোধ করা হয়।

তারা আরও জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখনও বেশ খানিকটা পিছিয়ে আছে, যার ফলে ব্যাংকগুলো থেকে বড় আকারে ঋণ নিতে সরকার বাধ্য হবে।

এনবিআরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে এপ্রিল পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা।

এ ছাড়াও, গত বছর বিনিয়োগ স্ল্যাব চালু এবং সুদের হার ১ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে।

চলমান অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। আগের বছর একই সময়ে বিনিয়োগের তুলনায় এটি ৫০ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জানান, সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়া শুরু করায় ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার বেড়ে যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, মে মাসে ১০ বছর মেয়াদী ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার ছিল ৮ শতাংশ, যেটি এক বছর আগে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ ছিল।

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর আরও জানান, সুদের হার বাড়তে থাকায় অনেক ব্যাংক সরকারকে ঋণ দিতে আগ্রহী হবে।

তার মতে, সরকার যদি আরও বেশি ঋণ নেয়, তাহলে সিকিউরিটিজের সুদের হারও সে অনুযায়ী বাড়তে থাকবে।

তিনি বলেন, এই প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের সময় বেসরকারি খাতকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করবে, কারণ তাদের তহবিলের বিপরীতে প্রভিশনিং বজায় রাখতে হবে। উল্লেখ্য, বেসরকারি খাতে সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ।

এছাড়াও, ব্যক্তি পর্যায়ে বিতরণ করা কিছু তহবিল খেলাপি হয়ে যেতে পারে। যে কারণে ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত প্রভিশনিং করতে হবে।

'তবে সরকারকে দেওয়া তহবিলের ক্ষেত্রে এমন কোনও ঝুঁকি নেই', যোগ করেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রাক্তন কর্মকর্তা মনসুর।

তিনি বলেন, ঋণের সুদের হারের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার করা হলে ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ঋণ দিতে আরও উৎসাহিত হবে।

তিনি বলেন, এই ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার করা হলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ক্ষেত্রে চলমান সঙ্কটও কমে আসবে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, ব্যাংকগুলো এখন টাকার বিনিময়ে মার্কিন ডলার কিনছে, যা অর্থ বাজারে তারল্যের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

ঋণের হারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়া হলে আমদানি-পরবর্তী অর্থায়নের ক্ষেত্রে সুদের হার বাড়বে বলে জানান মনসুর।

এতে শেষ পর্যন্ত আমদানি কমবে, যা পরবর্তীতে মার্কিন ডলারের বিপরীতে বিনিময় হারের চলমান চাপ থেকে টাকাকে কিছুটা স্বস্তি দেবে।

যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার ব্যাংক থেকে কত ঋণ নেবে, সে বিষয়ে জুনে অর্থ মন্ত্রণালয় অকশন ক্যালেন্ডার তৈরি করেছ। সেখানে এ মাসে ব্যাংকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে আভাস দেওয়া হয়েছে।

'এই প্রেক্ষাপটে টি-বিল ও বন্ডে সুদের হার আরও বাড়বে, যা ব্যাংকগুলোর জন্য ইতিবাচক', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, ব্যক্তি পর্যায়ে তহবিল বিতরণের সময় ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়।

এ মুহূর্তে ব্যাংকিং খাতের তারল্য পরিস্থিতি চাপের মুখে রয়েছে, জানান তিনি।

যমুনা ব্যাংকের পরিচালক ইলিয়াস উদ্দিন মত প্রকাশ করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে।

তিনি আরও জানান, ডলারের তুলনায় স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন মুদ্রাস্ফীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ২৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ব্যাংকিং উৎস থেকে ঋণ নেওয়া কোনো খারাপ উদ্যোগ নয়, বরং সরকারের উচিত এই তহবিল দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা।

তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সরকারের অর্থায়ন ঘাটতি ছিল ১৭ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা, কিন্তু চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কোনো ঘাটতি ছিল না।

এই ঘাটতি চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে উদ্বৃত্তে পরিণত হয় এবং পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। 

২০২১ ও ২০২০ অর্থবছরে ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২৮ হাজার ৪৩২ কোটি এবং ৭৯ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।

Comments

The Daily Star  | English

Heat takes a toll on expecting mothers

Pregnant women are more prone to heat-related illnesses like exhaustion and heatstroke

13h ago