ডিজিটাল প্রতারণা থেকে আপনার অর্থ সুরক্ষিত রাখুন
আপনি যদি অনলাইন শপিংয়ের জন্য ক্রেডিট অথবা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করতে চান, কিংবা এটিএম থেকে টাকা তুলতে চান, তাহলে আপনাকে একটি পিন নম্বর ব্যবহার করতে হবে। মোবাইল আর্থিক সেবা ব্যবহার করে অনলাইনে বা দোকানে উপস্থিত হয়ে সশরীরে কেনাকাটা করা, এক অ্যাকাউন্ট থেকে আরেক অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর ও বিল দেওয়াসহ অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রেও প্রক্রিয়াটি প্রায় একই।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্টারনেটের বিস্তার ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আগের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় অনলাইন শপিংয়ের জনপ্রিয়তা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এর জনপ্রিয়তা দ্রুত বেড়েছে।
যেহেতু আমরা এখন বিভিন্ন ধরনের আর্থিক লেনদেনের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছি, নিজের অ্যাকাউন্টকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে আপনার ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্যকে প্রতারণার ঝুঁকি থেকে বাঁচিয়ে রাখা একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে সাইবার অপরাধীরা অনলাইনে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার জন্য এখন আরও অনেক সূক্ষ্ম প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে পারে।
এ কারণে ব্যবহারকারীদেরকে অনলাইনে তথ্য চুরি হওয়ার ঝুঁকির মোকাবিলা করার জন্য কী কী উদ্যোগ নিতে হবে, তা ভালো করে বুঝে নিতে হবে
সব অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড বলতে বোঝানো হয় একটি গোপন সংখ্যা ও অক্ষরের সন্নিবেশ, যেটি অন্যরা সহজে অনুমান করে খুঁজে বের করতে পারবেন না। আপারকেস ও লোয়ারকেস ইংরেজি অক্ষর, সংখ্যা ও বিভিন্ন চিহ্নের (যেমন: অ্যান্ড, এট দ্য রেট, হ্যাশ ইত্যাদি) সমন্বয়ে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, পাসওয়ার্ড হচ্ছে অনলাইন প্রতারণার বিরুদ্ধে আপনার প্রাথমিক সুরক্ষা এবং এ ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত পাসওয়ার্ড বদলানো খুবই জরুরি। এটি অনলাইন প্রতারণা প্রতিহত করার জন্য খুবই উপযোগী একটি কৌশল।
আইটি বিশেষজ্ঞরা গ্রাহকদের নিজ নিজ কম্পিউটার, মোবাইল, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ডেবিট-ক্রেডিট ও এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড নিয়মিত পরিবর্তন করার উপদেশ দেন।
কখনোই আপনার গোপন তথ্য অন্যদের দেবেন না
কোনো ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কখনোই আপনাকে ফোন করে আপনার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত জানতে চাইবে না। সুতরাং এ ধরনের প্রতারকদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং কারও সঙ্গে আপনার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আলাপ করবেন না।
কখনোই কাউকে আপনার পিন জানাবেন না
ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক সেবাদাতারা সবসময় তাদের গ্রাহকদের উপদেশ দেয় নিজের পিন নম্বর অন্য কাউকে না জানাতে, কারণ সেক্ষেত্রে আপনার টাকা আত্মসাৎ করার কাজটি প্রতারকদের জন্য সহজ হয়ে যায়।
দুই স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুবিধা নিন
এক স্তরের প্রতিরক্ষার চেয়ে দুই স্তর বেশি কার্যকর। এ কারণে আপনার অ্যাকাউন্টকে প্রতারকদের কাছ থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য অবশ্যই টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা দুই স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা উচিত।
দুই স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু থাকলে শুধু পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা যায় না, সঙ্গে আপনার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল ফোনে বা ইমেইলে পাঠানো ওয়ান টাইম পিন বা পাসওয়ার্ডও (ওটিপি) প্রবেশ করাতে হয়।
সন্দেহজনক ওয়েবসাইট এড়িয়ে চলুন
সাইবার প্রতারণার শিকার হওয়ার একটি বড় কারণ হচ্ছে অরক্ষিত ও অনিরাপদ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করা। এই ওয়েবসাইটগুলো হ্যাকিংয়ের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে এবং এ ধরনের সাইট থেকে হ্যাকাররা প্রায়ই গ্রাহকদের সব তথ্য সংগ্রহ করতে পারে বলে ভারতের ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।
পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন
বিভিন্ন জায়গায় জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত বা পাবলিক ওয়াইফাই সেবা পাওয়া যায়। আপনি যদি এ ধরনের ওয়াইফাই ব্যবহার করে সংবাদ পড়েন বা ব্লগ পোস্ট দেখেন, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। তবে আপনার যদি কোনো কারণে কোনো ধরনের অ্যাকাউন্টে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগ ইন করার প্রয়োজন হয়, যেমন: অনলাইন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা, তাহলে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে তা না করাই ভালো।
পাবলিক ওয়াইফাইয়ের উন্মুক্ত সংযোগে অনুপ্রবেশ করে সাইবার অপরাধীরা খুব সহজেই আপনার অনলাইন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড চুরি করে ফেলতে পারে।
ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অ্যালার্ট সেট করুন
যদি গ্রাহকরা তাদের মোবাইল ও অন্যান্য ডিভাইসে অ্যালার্ট সিস্টেম চালু করেন, তাহলে যখনই আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোনো অস্বাভাবিক কার্যক্রম সংঘটিত হবে, তখনই আপনাকে সতর্ক করে দেওয়া হবে।
আপনার ক্রেডিট রিপোর্ট নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং কোনো কার্ড (এটিএম/ডেবিট/ক্রেডিট) হারিয়ে গেলে শিগগির কর্তৃপক্ষকে জানান। আপনার ব্যাংকের বিস্তারিত তথ্য অথবা ওটিপির ব্যাপারে কাউকে ফোনে জানাবেন না। পর্যটনবান্ধব জায়গাগুলোতে এটিএম ব্যবহার করা পরিহার করুন এবং আপনার অ্যাকাউন্টকে সুরক্ষিত রাখতে সতর্কতার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করুন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কমিশন মানুষকে উপদেশ দিয়েছে, যেসব অনলাইন বিক্রেতা শুধুমাত্র গিফট কার্ড, মানি ট্রান্সফার বা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে পেমেন্ট নেয়, তাদের কাছ থেকে কিছু না কিনতে, কারণ পরবর্তীতে এ ধরনের আর্থিক লেনদেনের কোনো হদিশ পাওয়া যায় না এবং প্রয়োজন হলেও এসব লেনদেন বাতিল করা যায় না। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বাণিজ্য কমিশনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, দ্রুত টাকা পাওয়ার জন্য অপরাধীরা প্রায়ই মানুষকে এসব পন্থায় পণ্য ও সেবার মূল্য পরিশোধ করতে বলে। সার্বিকভাবে বাণিজ্য কমিশন অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুপারিশ করেছে।
যদি কোনো বিক্রেতা দামী ব্র্যান্ডের পণ্য খুবই কম দামে বিক্রি করতে চান, তাহলে সে পণ্যগুলো নকল হতে পারে। যদি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে কোনো পণ্যের স্টক না থাকে, তাহলে আপনি ধরে নিতে পারেন অখ্যাত কোনো অনলাইন বিক্রেতার কাছেও সে পণ্যের স্টক থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।
বিশেষজ্ঞরা অনলাইন শপিংয়ে ডেবিট কার্ড ব্যবহার না করারও সুপারিশ করেন। কারণ কোনো কারণে যদি আপনার অ্যাকাউন্টের তথ্য অন্যের হাতে চলে যায়, তাহলে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি টাকা সরিয়ে ফেলা হতে পারে।
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments