ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘কালো তালিকায়’ আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়

৫ ব্যাংকের 'অফিসার (ক্যাশ)' পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার পর ভবিষ্যতে এ ধরনের পরীক্ষা পরিচালনার সুযোগ না দিতে আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়কে 'কালো তালিকাভুক্ত' করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ছবি: সংগৃহীত

৫ ব্যাংকের 'অফিসার (ক্যাশ)' পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার পর ভবিষ্যতে এ ধরনের পরীক্ষা পরিচালনার সুযোগ না দিতে আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়কে 'কালো তালিকাভুক্ত' করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশে ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় (বিএসসিএস)'র আওতায় গত ০৬ নভেম্বর ২০২১ তারিখে ৫টি ব্যাংকের 'অফিসার (ক্যাশ)' পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত পরীক্ষা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ছিল আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। উক্ত পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এ প্রেক্ষিতে বিএসসিএস কর্তৃক উক্ত পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া, আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় বিএসসিএস'র আরও দু'টি পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় তা ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে এবং আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়কে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরীক্ষা পরিচালনার সুযোগ না দেওয়ার জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।'

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, উল্লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং অধিকতর তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে। তবে, ওই প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য 'সিসিটিভি অপারেটর' পদে ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ায় প্রাথমিকভাবে ব্যাংকের যুগ্মপরিচালক জনাব আবদুল্লাহ আল মাবুদ এবং মো. আলমাস আলীকে চলতি বছরের ১৩ জুন সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং অভিযোগের সার্বিক বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কোনো নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়। এজাতীয় সেবা ক্রয়ের/গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রচলিত সব বিধি-বিধান স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিপালন নিশ্চিত করেই বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের নির্বাহী কমিটির অনুমোদনক্রমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের কোনো পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে আহছানউল্লাহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে পত্রিকায় যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম পরিচালনা করে। অপরদিকে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় (বিএসসিএস) শুধুমাত্র সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের লোকবল নিয়োগের জন্য নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ এবং ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় (বিএসসিএস) দু'টি আলাদা প্রশাসনিক ইউনিট যা দু'জন ভিন্ন ভিন্ন ডেপুটি গভর্নরের ওপর ন্যস্ত আছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রে তারা আলাদাভাবে কাজ করেন। তাই এ পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একে অপরের  কাজে প্রভাবিত করার কোনো এখতিয়ার বা সুযোগ নেই। সুতরাং এ বিষয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে তা-ও সঠিক নয়।

এতে আরও বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিত রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত ও নিয়ন্ত্রিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন্স (জগএ) ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইনভেস্টমেন্ট কমিটির (আইসি) মাধ্যমে। অপারেশনাল বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট অপারেশনাল ম্যানুয়ালের নির্দেশনার আলোকে। রিজার্ভের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম দৈনিক ভিত্তিতে অডিটও হয়ে থাকে। ফলে, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রমে কোনো একক বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো অবকাশ নেই। একইভাবে রিজার্ভের বিনিয়োগ থেকে কারো পক্ষে ব্যক্তিগত কোনো অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করারও সুযোগ নেই। উল্লিখিত নিয়মনীতি ও গাইডলাইন্স এর আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক অত্যন্ত দক্ষতা এবং সফলতার সাথে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসছে। রিজার্ভ হতে বিনিয়োগ করা সব অর্থই মুনাফাসহ সঠিক সময়ে আদায় হয়েছে এবং হচ্ছে। বিনিয়োগ করা আসল বা সুদ যথাসময়ে আদায় বা ফেরত না পাওয়ার কোনো দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে অদ্যাবধি ঘটেনি। তাই এ বিষয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে তাও বস্তুনিষ্ঠ এবং সঠিক নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত জালিয়াতির বিষয়ে সম্প্রতি কতিপয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনেকাংশেই তথ্যভিত্তিক, বস্তুনিষ্ঠ এবং সঠিক নয়। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যাপক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সে ব্যাপারেও বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক আছে। নাম উল্লেখ না করে একজন ডেপুটি গভর্নরের বিরুদ্ধে যেসব তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অসত্য ও ভিত্তিহীন। উক্ত সংবাদ প্রকাশের পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র থেকে যাচাই করে নেওয়ার সুযোগ ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক স্বচ্ছতা বিধানে সর্বদাই যত্নশীল বলেই প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় করে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও এই ধারা নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থাকবে। অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশিত হলে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক তথা দেশের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়ে থাকে যা জাতীয় স্বার্থে কখনো কাম্য নয়।

Comments

The Daily Star  | English

Upazila Polls: AL, BNP struggle to keep a grip on grassroots

The upazila election has exposed how neither of the two major parties, the Awami League and BNP, has full control over the grassroots leaders.

5h ago