এ বছর তুলার চাহিদা আরও বাড়বে

মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বিপণন বছরে বাংলাদেশে তুলার অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বাড়বে। তৈরি পোশাকের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ড অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে ওয়ার্ক অর্ডার স্থানান্তর করার কারণেই মূলত এই প্রবৃদ্ধি।
স্থানীয় মিল ও স্পিনাররা বিপণন বছর ২০২১-২২ এ ৮৮ লাখ ১০ হাজার বেল তুলা ব্যবহার করবেন। যা ১ বছর আগের চেয়ে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা তাদের পণ্যের জন্য বিকল্প উৎস খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত তুলা ও তুলাজাত পণ্যের সর্বশেষ পূর্বাভাসে ইউএসডিএ জানিয়েছে, বাংলাদেশ ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি অর্ডার পাচ্ছে।
১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৩১ আগস্টে শেষ হওয়া বিপণন বছরের জন্য ইউএসডিএর পূর্বাভাসে স্থানীয় তৈরি পোশাক কারখানায় সুতা ও কাপড়ের অপেক্ষাকৃত বেশি চাহিদাকে আমলে নেওয়া হয়েছে।
তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থানের প্রতিফলন হিসেবে ২০২০-২১ বিপণন বছরে এর আগের বছরের তুলনায় তুলার ব্যবহার ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে।
এ ছাড়াও, স্থানীয় উদ্যোক্তারা বৈশ্বিক বাজারে তাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে হাতে বোনা কাপড়ে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তুলা আমদানিকারী দেশ। স্থানীয় তৈরি পোশাক শিল্প তুলা আমদানির ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল হওয়ায় আমদানির দিক দিয়ে চীনের পরেই বাংলাদেশের স্থান।
বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ৭৪ শতাংশেরও বেশি তুলার তৈরি পোশাক। তবে এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। সামগ্রিকভাবে, বিশ্বের ৭৮ শতাংশ তৈরি পোশাকের মূল উপকরণ হচ্ছে হাতে বোনা কাপড়।
বাংলাদেশে তুলা স্পিন করার সক্ষমতা বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় স্পিনাররা নিটিং খাতের ৯৫ শতাংশ সুতা এবং ওভেন খাতের ৪০ শতাংশ উপকরণের জোগান দিতে সক্ষম।
ইউএসডিএ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সুতা ও কাপড়ের বার্ষিক ব্যবহারের পরিমাণ বিপণন বছর ২০২১-২২ এ যথাক্রমে ৯ লাখ ৫০ হাজার টন ও ৬৩০ কোটি মিটারে উন্নীত হতে পারে। এর আগের বছর সুতা ও কাপড়ের ব্যবহার ছিল যথাক্রমে ৯ লাখ ৪০ হাজার টন ও ৬২০ কোটি মিটার।
মার্কিন সংস্থাটি বাংলাদেশের তুলা আমদানির পূর্বাভাসকে সংশোধন করে একই সময়সীমার মধ্যে ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়িয়ে ৮২ লাখ বেলে উন্নীত করেছে।
তবে তুলা আমদানির পরিমাণ গত বছরের ৮৭ লাখ ৫০ হাজার বেল থেকে কমে যাবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চ মূল্যের কারণে স্থানীয় স্পিনাররা আগের বছরের মজুদ থেকে তুলা ব্যবহার করা অব্যাহত রাখবেন।
২০২১-২২ বিপণন বছরের শেষে মজুদ থাকবে ২ হাজার ৪০০ বেল। যা ইউএসডিএ আনুষ্ঠানিক পূর্বাভাসের চেয়ে প্রায় ৪ শতাংশ কম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় মিলগুলো ভারতে থেকে সবচেয়ে বেশি তুলা আমদানি করেন। প্রতিবেশী দেশটি থেকে কলকাতার সমুদ্র বন্দর ও বেনাপোলের স্থল বন্দরের মাধ্যমে তুলা আমদানি হয়।
প্রতিবেদনে ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে ভৌগোলিক দূরত্ব কম থাকার কারণে চালান আসতে সময় কম লাগে। ফলে, পরিবহন ও অন্যান্য লজিস্টিক খরচও তুলনামূলক কম হয়।
২০২০-২১ বিপণন বছরে তুলা আমদানির ৩২ শতাংশ ভারত থেকে এসেছে। এরপরে আছে ব্রাজিল (১৫%), বেনিন (১২%) ও যুক্তরাষ্ট্র (৯%)।
ইউএসডি প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্থানীয় তুলা উৎপাদন দেশের মিলগুলোর চাহিদার ২ শতাংশেরও কম মেটায়।
বাংলাদেশের বর্তমানে ৪৩৩টি সুতার কারখানা ও ৮২৭টি কাপড়ের কারখানা রয়েছে। এ ছাড়াও, ১৯টি সিনথেটিক স্পিনিং মিল ও ৮টি অ্যাক্রিলিক স্পিনিং মিলও চালু আছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশের বার্ষিক সুতা স্পিনিং ও কাপড় উৎপাদনের সক্ষমতা হচ্ছে যথাক্রমে ৩৩০ কোটি কেজি ও ৭৮০ কোটি মিটার।
বাংলাদেশ বছরে ১ কোটি ১৫ লাখ বেল অপরিশোধিত তুলা ব্যবহারের সক্ষমতা রয়েছে। তবে বর্তমানে ৮৫ লাখ বেল তুলা ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রতিবেদনের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২১-২২ বিপণন বছরে সুতা উৎপাদন ৭৫০ হাজার টনে পৌঁছাবে। চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এই হার আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব আনে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে। অনেক ব্র্যান্ড সে সময় তাদের অর্ডার বাতিল করে। ফলে, আগের বছরের তুলনায় ২০২০ সালে রপ্তানির পরিমাণ ১৭ শতাংশ কমে যায়।
তবে পশ্চিমের দেশগুলোর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় ২০২১ সালের ২য় প্রান্তিক থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে অর্ডারের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানির পরিমাণ ২৮ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৮৫০ কোটি ডলার হয়েছে।
বিটিএমএ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ জানান, ইউএসডিএর সর্বশেষ প্রতিবেদনটি নির্ভুল। কারণ সুতা ও কাপড়ের চাহিদা অনেক বেড়েছে এবং স্থানীয় মিল মালিকরা তাদের সক্ষমতা বাড়িয়েছে।
তিনি যোগ করেন, চাহিদা বাড়তে থাকায় ২০২২ সাল নাগাদ তুলার ব্যবহার ৯০ লাখ বেলে পৌঁছাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments