খাল ভরাট করে মহাসড়ক, জলাবদ্ধতায় স্থবির ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্প নগরী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ-আখাউড়া-আগরতলা ফোরলেন‌ মহাসড়ক নির্মাণ কাজের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের খাল সম্পূর্ণ ভরাট করে ফেলায় গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্প নগরী এলাকা। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে এই শিল্প নগরীর কার্যক্রম।
কারখানাগুলোর ভেতরে ঢুকে গেছে পানি। ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ-আখাউড়া-আগরতলা ফোরলেন‌ মহাসড়ক নির্মাণ কাজের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের খাল সম্পূর্ণ ভরাট করে ফেলায় গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্প নগরী এলাকা। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে এই শিল্প নগরীর কার্যক্রম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রোকন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, 'ফোরলেন প্রকল্পের কাজের জন্য পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বিসিক শিল্প নগরীতে চরম দুরবস্থা চলছে। শিল্প নগরীর বিভিন্ন রাস্তা ও কলকারখানায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ৪০টি কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের অফিসের আঙিনাও পানিতে তলিয়ে গেছে।'

গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্প নগরী এলাকা। ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

এই কর্মকর্তা জানান, এই শিল্প নগরীতে অ্যালুমিনিয়াম, সোডিয়াম সিলিকেট, তেল, সাবান, ময়দা ও বিস্কুট কারখানাসহ বিভিন্ন ধরণের ৭২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তবে করোনা মহামারির প্রভাব, গ্যাস ও মূলধন সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ১২টি কারখানা বর্তমানে বন্ধ আছে। চালু থাকা বাকি ৬০টি কারখানার মধ্যে জলাবদ্ধতার কারণে ৪০টি কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

তিনি আরও জানান, আশুগঞ্জ-আখাউড়া-আগরতলা ফোরলেন‌ মহাসড়ক নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকেই তারা বিসিকে জলাবদ্ধতার আশংকা করেছিলেন। সেই আশংকার বিষয়টি তারা তাদের প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে ফোরলেনের প্রকল্প পরিচালককে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছিলেন। সম্প্রতি বিষয়টি তারা স্থানীয় প্রকল্প ব্যবস্থাপককেও জানিয়েছেন। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তাদের অফিস আঙিনা ও রাস্তা তলিয়ে যাওয়াসহ কলকারখানার ভেতরে পানি ঢুকে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন শিল্প নগরীর ভেতরে সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার না করায় বেহাল দশায় রয়েছে পুরো এলাকাটি। সম্প্রতি আশুগঞ্জ-আখাউড়া-আগরতলা ফোরলেন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এই শিল্প নগরীর পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। এতে শিল্প নগরীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যানবাহনের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

তারা আরও জানান, পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি নোংরা পানিতে অনেকেই রোগাক্রান্ত হচ্ছেন।

উৎপাদন বন্ধ হওয়া শিল্প কারখানার মালিকরা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পরতে হবে তাদের।

নিউ মা-মনি সোপ ফ্যাক্টরির মালিক আকতার হোসেন বলেন, 'আমার ফ্যাক্টরির ভেতরে হাঁটু পানি। গ্যাসের চুলাসহ অনেক কাঁচামাল ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আমার ফ্যাক্টরিতে ২৫ জন কর্মচারী কাজ করেন। সামনে ঈদ। এ সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। কর্মচারীদের বেতন দেওয়াও কঠিন হয়ে যাবে। তাছাড়া প্রতিদিন আমাদের ব্যাংকে দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে এই কয়েক দিনেই আমার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হবে।'

গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্প নগরী এলাকা। ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেডরেক্স সায়েন্স লিমিটেডের প্ল্যান্ট ম্যানেজার রাজীব কুমার দাস বলেন, 'পুরো ফ্যাক্টরি পানিতে তলিয়ে গেছে। গত ৩ দিন ধরে জলাবদ্ধতার কারণে উৎপাদন বন্ধ।'

কারখানায় আসা বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা বলছেন, জলাবদ্ধতা ও ভাঙা সড়কে পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

জলাবদ্ধ সড়কে দাঁড়িয়ে কথা হয় স্থানীয় মুন্নী সোপ ফ্যাক্টরির ট্রাকচালক রুবেল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'বিসিকের সব রাস্তা ভাঙা। এর মধ্যে রাস্তা পানিতে ডুবে যাওয়ায় গাড়ি টানতে কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে ব্রেক কাজ করে না। গাড়িতে উঠতে-নামতেও কষ্ট হয়। কেমিক্যালের পানি হওয়ায় হাত-পা জ্বালা করে। এ অবস্থা চলতে থাকলে মালিক যদি গাড়ি পাঠাতে রাজি না হয়, তাহলে আমরা পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়বো।'

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্প নগরী ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্প নগরী ব্যবসায়িকভাবে দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এই শিল্প নগরী সম্প্রসারণের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু জলাবদ্ধতা এভাবে স্থায়ী রূপ নিলে এবং সহসা এর নিরসন না নিলে এই বিসিকের পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকবে।'

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ফোরলেন প্রকল্পের উপব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ বলেন, 'এক সময় সড়কের পাশে যে খাল ছিল সেই খাল দিয়ে বিসিকের পানি নিষ্কাশন হতো। বিসিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আমাদের একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছে। আমরা তাদেরকে পাকা ড্রেন নির্মাণের কথা বলেছিলাম। এখন যে জলাবদ্ধতা তৈরি হলো, এই নিয়ে আমরা প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবো। আমরা বিসিকের কেমিক্যাল গার্বেজ ফেলার জন্য একটা জায়গা খুঁজছি। জায়গা পেলে এর সুরাহা করবো। তখন জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব হবে।'

৯০ এর দশকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরতলীর নন্দনপুর এলাকায় ২২ একর জায়গায় গড়ে তোলা হয় এই শিল্প নগরী।

Comments