পরিচর্যা
পুরো রোজার মাস শপিং করে, রোদে পুড়ে ত্বক মলিন হয়ে যায়। কিন্তু ত্বকের চিন্তায় তো আর শপিং বাদ দেয়া যায় না! তাই ঈদের আগেই যদি নিয়ম মেনে কিছু ত্বকের যতœ নিয়ে রাখা যায় তাহলে ঈদের দিনে আপনি হয়ে উঠবেন উৎসবের মধ্যমণি।
শপিংয়ে বেরোনোর আধাঘণ্টা আগে মুখে, হাতে, গলায় সানস্ক্রিন লোশন মেখে নিন। যদি দীর্ঘক্ষণ বাইরে রোদে থাকতে হয়, তাহলে দু’তিন ঘণ্টা পর মুখ ধুয়ে আবার মেখে নিন। এছাড়া ছাতা ব্যবহার করে রোদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। এই গরমে ত্বক বার বার ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। কেননা এ সময় রোদে, ধুলা-বালিতে ত্বক খুবই অপরিষ্কার হয়ে পড়ে। ফলে ব্রণের প্রকোপ বেড়ে যায়। নিয়মিত দিনে অন্তত দু’বার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া এবং সপ্তাহে দু’দিন স্ক্র্যাবিং করলে ত্বক ভালো থাকবে। তাছাড়াও এ সময় যেহেতু রোজা রেখে শপিংয়ের জন্য অনেক ঘোরাঘুরি করতে হয়, তাই ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান আপনার শরীর এবং ত্বককে সুস্থ রাখবে।
যদি নিতান্তই ত্বক পুড়ে যায়, তাহলে টমেটোর রস কিংবা লেবুর রস একটি তুলার বলে লাগিয়ে ত্বকে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। লেবুর রস কখনো সরাসরি মুখে লাগাবেন না, সামান্য পানি মিশিয়ে নিন। টমেটোর রস ন্যাচারাল ব্লিচ হিসেবে পরিচিত। আরেকটি কাজ এই গরমের সময় করে নিতে পারেন। আইস বক্সে টমেটো, শসা, তরমুজ ইত্যাদি আলাদা রস করে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। বাইরে থেকে ফিরেই বরফের একটা টুকরো মুখে ঘষে ঘষে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত চর্চায় ত্বক উজ্বল হয়ে উঠবে।
ঈদের এক সপ্তাহ আগে সেরে নিন পার্লারের যাবতীয় কাজ। এমনকি চুলের স্টাইলটাও বদলে দিতে পারেন এ সময়। তবে চুলের স্টাইল বদলানোর আগে নজর দিন চুলের স্বাস্থ্যের দিকে। এই গরমে চুল তেল চটচটে হয়ে যেন খুশকির উপদ্রব না বাড়িয়ে দেয়, তার জন্য নিয়মিত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না। সপ্তাহে দু’দিন চুলের ধরন বুঝে লাগিয়ে নিন পছন্দমতো হেয়ার প্যাক।
পুরুষের জন্য রূপচর্চা
রূপচর্চার অধিকার শুধু নারীর জন্যই সে ধারণা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি অনেক আগেই। তাই এবারের ঈদে পুরুষের ত্বকচর্চা কেমন হবে সেটাও একটু জেনে নেই।
স্বাভাবিকভাবেই নারীদের তুলনায় পুরুষেরা বাইরে ঘোরাঘুরি করেন বেশি, তাই তাদের ত্বকও হয় বেশি মলিন, রুক্ষ এবং শুষ্ক। এছাড়া মেয়েদের তুলনায় পুরুষের ত্বক একটু বেশি পুরু বলে তাদের চর্চাটাও নারীর তুলনায় ভিন্ন। আজকাল যে কোনো জেন্টস পার্লারে গিয়ে ত্বকের ধরন বুঝে ত্বকের জন্য ফেসিয়াল, পেডিকিওর, মেনিকিওর করে নিতে পারেন। যারা পার্লারে যেতে চান না, তাদের জন্য রইল কিছু ঘরোয়া টিপস।
ত্বকের যতেœ ফেসিয়াল আর স্ক্র্যাবিংয়ের বিকল্প নেই। সপ্তাহে দু’দিন স্ক্র্যাবিংয়ের ফলে নাকের দু’পাশের ব্ল্যাক হেডস দূর হবে। আর ফেসওয়াশ দূর করবে আপনার রোজকার ধুলোবালি। ১/২ চামচ লেবুর রস, ১/২ চামচ মধুর সঙ্গে একটু চিনি মিশিয়ে স্ক্র্যাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ৫ মিনিট হালকা হাতে ঘষুণ, বিশেষ করে নাকের দু’পাশে এবং গালে। এরপর মুখ ধুয়ে ফেলুন ঠা-া পানিতে। ছুটির দিনটা কাজে লাগান মুখে ফেসপ্যাক দিয়ে। এক চামচ কাঁচা হলুদের সঙ্গে কাঁচা দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে সম্পূর্ণ মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। কাঁচা হলুদ ত্বকের কোমলতা ধরে রাখে এবং কাঁচা দুধ স্কিনের কমপ্লেকশনকে আরও ফর্সা করতে সাহায্য করে। রোদে ঘোরাঘুরি করার সময় মুখে সানস্ক্রিন লোশন মেখে বের হতে ভুলবেন না যেন। যারা কাজের চাপে এটুকুও সময় পান না, তারা মাসে একবার পার্লারে গিয়ে করে নিন ফেসিয়াল।
সপ্তাহের ছুটির দিনটা রাখুন মেনিকিওর, পেডিকিওরের জন্য। পার্লারে না হলে ঘরেই করুন। প্রথমে হাত-পায়ের নখগুলো সুন্দর করে শেপ করে নিন। একটি পাত্রে গরম পানিতে শ্যাম্পু, লবণ ও লেবুর রস মিশিয়ে তাতে হাত ও পা ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। তারপর তোয়ালে দিয়ে হাত ও পা মুছে নিন। এরপর নখে ক্রিম দিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। সতর্কতার সঙ্গে নখের গোড়ায় জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে স্ক্র্যাব ঘষে মৃত কোষ তুলে ফেলুন। পায়ের তলা, গোড়ালিতে ভালো করে স্ক্র্যাবার ঘষে নিন। এরপর মুলতানি মাটি, মধু এবং গোলাপ জলের পেস্ট তৈরি করে হাত-পায়ে মেখে ১৫ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। হাত-পা মুছে ময়েশ্চারাইজিং লোশন লাগিয়ে নিন।
চুলের যতেœ নিয়মিত তেল দেয়া, শ্যাম্পু করা, কন্ডিশনিং করা খুবই জরুরি কাজ। খুশকির সমস্যায় ভুগলে মেহেদি সেই সমস্যা সমাধানে সহায়ক। এর সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ, দই বা কফি অল্প গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করে মাথায় লাগান। আধাঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। চুল হবে খুশকিমুক্ত স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
ঈদের সাজসজ্জা
ঈদের আগের রাতেই আরেকবার ভালো করে দেখে নিন কিছু বাদ পড়ে গেল কিনা। হাতে সময় রেখেই একবার চেক করে নিন যেন বাদ পড়লেও কিনে আনতে পারেন। সেই সঙ্গে আপনার হাতের মেহেদি আর নখ রাঙানোর কাজটাও এই রাতেই সেরে ফেলতে পারেন।
উৎসবের দিনে হাজার কাজের ভিড়ে নিজেকে পরিপাটি রাখাটা মুন্সিয়ানার কাজ। তাই সকালেই গোসল সেরে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে অতিথি আপ্যায়নে মন দিলে বরং ভালো হয়। কারইবা ভালো লাগে বেড়াতে এসে সুন্দর সাজানো ঘরে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত গৃহিণীকে দেখতে?
যেহেতু গরমের সময়, আর বাড়িতেও থাকবে নানান কাজের ঝামেলা; তাই সুতি কিংবা লিলেনের হালকা আরামদায়ক পোশাকই থাকুক সকাল-দুপুর জুড়ে। শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ অথবা কুর্তা যেটাই হোক, তার সঙ্গে মানানসই হালকা গহনা পরে নিন। পায়ে দুই ফিতার চটি কিংবা অল্প হিলের স্যান্ডেলই ভালো। সেই সঙ্গে কপালের ছোট্ট টিপ আপনাকে করে তুলবে অনবদ্য।
যেহেতু উৎসব বলে কথা, একটু হালকা মেকআপ করাই যায়। গরমে মেকআপের ক্ষেত্রে প্রথমেই যা মনে আসে তা হলো যেন গলে নষ্ট না হয়ে যায়। তাই মেকআপের প্রথমেই মুখ ধুয়ে একটি বরফের টুকরো নিয়ে মুখে ১৫ মিনিট ঘষে নিন। এতে মেকআপ স্থায়ী হবে। যদি সম্ভব হয় মুখে মেকআপের আগে লাগিয়ে নিন ফেস প্রাইমার। ফেস প্রাইমার মুখকে অয়েল ফ্রি রাখে। এই গরমে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক বেস ব্যবহার করুন। পাউডার বেস এ সময়ের জন্য ভালো। কাজল কিংবা আইলাইনার হতে হবে পানিরোধক, যেন ঘেমে-নেয়ে চোখের বারোটা না বেজে যায়। ব্লাশন এবং লিপস্টিকের রঙ হালকা হওয়াই বাঞ্ছনীয়। লিপস্টিকের ক্ষেত্রে ম্যাট লিপস্টিকই বেছে নিন এই গরমে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে ফেসবুক বুলিয়ে নিতে পারলে পুরোটা সময়ই আপনি থাকবেন টিপটপ।
দিনের জমকালো সাজতে না পারার আক্ষেপটাকে দূর করে দিন রাতের বেলা। এ সময় আপনার পরনে যদি থাকে ট্রেন্ডি শাড়ি কিংবা জমকালো সালোয়ার-কামিজ তাহলে সাজের ক্ষেত্রেও সেই আভিজাত্যের ছোঁয়া থাকতে হবে। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পরুন নতুন কোনো ডিজাইনের ব্লাউজ কিংবা সাহসী হলে পিঠখোলা সিøভলেস। আধুনিকতার সঙ্গে থাকবে আরামও।
রাতের মেকআপ দিনের নিয়মেই করুন, কেবল একটু গাঢ় করে সাজুন, নিজের মনমতো। দিনের মেকআপ পুরোটাই তুলে ফেলে নতুন করে মেকআপ করুন আবার। রাতে চোখের সাজ হবে ভারী। আইলাইনারের সঙ্গে কাজলের সার্থক ব্যবহারে চোখ দুটোকে স্মোকি আই করে নিতে পারেন। আইশ্যাডো দিন কালো আর গাঢ় বাদামির মিশেলে। চোখের পাপড়িতে বোতলের গায়ে লেখা ‘এক্সট্রা ভলিউম’ মাশকারা দুই কোট লাগিয়ে নিন। এক কোট শুকিয়ে গেলেই আরেক কোট লাগাবেন।
ব্লাশনের জন্য বেছে নিন হালকা গোলাপি রঙ। বাদামি রঙের ব্লাশনও ভালো লাগবে। ঠোঁটে দিন উজ্জ্বল রঙের লিপস্টিক। উজ্জ্বল লাল, কমলা, ম্যাজেন্টা রঙগুলো বেছে নিতে পারেন আপনার ঠোঁটের জন্য। হালকা গোলাপি, কমলা রঙগুলোও জমকালো ভাব এনে দিতে পারে আপনার ঠোঁটে। আপনার পোশাকটি যদি হয় ওয়েস্টার্ন, তবে ন্যুড কালারের লিপস্টিকও ব্যবহার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন ঠোঁট এবং চোখের সাজ হবে একটি অপরটির বিপরীত। একটি হালকা হলে অপরটি হবে ভারী।
রাতের সাজের মূল আকর্ষণ হলো অ্যাক্সেসরিজ। কানে-গলায় পরুন জমকালো গহনা, তবে কানে দুল বেশি বড় হলে গলায় না পরলেও চলে। হাতে নিন পোশাকের সঙ্গে মানানসই ক্লাচ আর পায়ে হাই হিল। এই গরমে চুল খোলা না রেখে বরং বেঁধে নিলেই ভালো। বর্তমান ফ্যাশনে চুলের নানারকম স্টাইল চলছে। পার্লারে যেতে না চাইলে ইউ টিউব ঘুরে নিজেই নতুন কিছু ট্রাই করে নিন। চাইলে চুলে জড়িয়ে নিতে পারেন বেল ফুলের মালা কিংবা রঙিন জারবারা। সবশেষে হাতের কবজি, গলা, ঘাড় বা কানের লতির পেছনের অংশে স্প্রে করে নিন হালকা সুগন্ধের পারফিউম। খেয়াল রাখবেন, পারফিউম কখনো পোশাকে লাগাবেন না।
শুধু সাজলেই হবে না, সাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলুন আপনার ব্যক্তিত্বকে। পরিপাটি করে নিজেকে সাজিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বেরিয়ে পড়–ন ঈদের দাওয়াতে, উৎসবে হয়ে উঠুন মধ্যমণি।
মাহবুবা আকতার
ছবি : সংগ্রহ
Comments