ঈদের ভ্রমণ প্রস্তুতি

দেখতে দেখতে রোজার দুই সপ্তাহ চলেই গেল! ভ্রমণপিপাসুদের সুবর্ণ সময় চলে এসেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, অফিস-আদালত বন্ধ, হারিয়ে যাওয়ার নেই যে মানা। পরিবার-পরিজন নিয়ে হলেও বেরিয়ে পড়ার এই তো সময়। তবে আজকাল ভ্রমণ যেন শখ নয়, নেশায় পরিণত হয়েছে। তাই সুযোগ পেলেই শহরের বাইরে বের হয়ে পড়ছে অনেক তরুণ-তরুণীর দল, কাঁধে ব্যাকপ্যাক চড়িয়ে। আর ঈদের মতো লম্বা ছুটি হলে তো পুরোই পোয়াবারো। সেই আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সেটাও মাথায় রাখা অতি জরুরি। ঈদের ছুটিতে নিজের আনন্দ ভ্রমণকে আরো সুখকর, স্মৃতিমধুর করার জন্য আসুন প্রস্তুতির ব্যাপারে সচেতন হই। জেনে নিই প্রয়োজনীয় করণীয়।

দেখতে দেখতে রোজার দুই সপ্তাহ চলেই গেল! ভ্রমণপিপাসুদের সুবর্ণ সময় চলে এসেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, অফিস-আদালত বন্ধ, হারিয়ে যাওয়ার নেই যে মানা। পরিবার-পরিজন নিয়ে হলেও বেরিয়ে পড়ার এই তো সময়। তবে আজকাল ভ্রমণ যেন শখ নয়, নেশায় পরিণত হয়েছে। তাই সুযোগ পেলেই শহরের বাইরে বের হয়ে পড়ছে অনেক তরুণ-তরুণীর দল, কাঁধে ব্যাকপ্যাক চড়িয়ে। আর ঈদের মতো লম্বা ছুটি হলে তো পুরোই পোয়াবারো। সেই আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সেটাও মাথায় রাখা অতি জরুরি। ঈদের ছুটিতে নিজের আনন্দ ভ্রমণকে আরো সুখকর, স্মৃতিমধুর করার জন্য আসুন প্রস্তুতির ব্যাপারে সচেতন হই। জেনে নিই প্রয়োজনীয় করণীয়।


ভ্রমণে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো পরিবহন। ভ্রমণে অপটু ব্যক্তিরা কিন্তু ভ্রমণের প্রস্তুতি নেয়ার আগেই একধাপ পিছিয়ে আছে। পটুরা তো আগেভাগেই বাস, ট্রেন, লঞ্চ, বিমানের অগ্রিম টিকেট কেটে বসে আছে। ঈদের আগেই কেবল নয়, ঈদের পরও এত বেশি মানুষ আজকাল বেরিয়ে পড়ে শহর ছেড়ে যে মাঝে মাঝে একটা সিট পেয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়া বেশ কঠিনই হয়। তাই দেরি না করে টিকেট কেটে রাখুন অগ্রিম। এর জন্য সাহায্য নিতে পারেন ঝযড়যড়ু.পড়স, নফঃরপশবঃং.পড়স, ষধঁহপযনফ.পড়স ওয়েবসাইটগুলোর। আর যদি দেশের বাইরে যাওয়ারই প্রস্তুতি থাকে তো যত দ্রুত সম্ভব টিকেট কিনে ফেলুন। ঈদের ছুটিতে আজকাল প্রচুর মানুষ ভারত, নেপাল, ভুটানে ঘুরতে যায় তা খেয়াল রাখতে হবে।


এছাড়াও আগেভাগে দেশের বাইরের প্লেনের টিকেট কেটে রাখলেও কিছুটা সাশ্রয় হয়। ঈদের সময় ঘুরতে বের হওয়ার সময় অনেকেই যে ভুলটা করে বসেন তা হলোÑ শখের বশে ঈদের জামা-কাপড় সঙ্গে নিয়ে বের হন। যেহেতু ঈদের পোশাকে ভারিক্কি ব্যাপারটা থেকেই যায়, তাই ভ্রমণে আরামদায়ক পোশাকের কথা সেখানেই চলে আসে। তাই যতটা আরামদায়ক পোশাক বাছাই করা যায় নিজের জন্য ততই ভালো। তাতে যদি ঈদের শখের পোশাকটি বাসায় রেখে যেতে হয় তো হোক না। এছাড়া ভ্রমণে আপনার শখের পোশাকটি নষ্ট হয়ে যাবে সেটা নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন না!


ঈদের পর ঘোরাঘুরির সময় আরেকটা জরুরি ব্যাপার খেয়াল রাখা উচিত আর তা হলোÑ খাদ্যাভ্যাস! এক মাস রোজা শেষে নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে এসে পড়লে আমাদের পরিপাকতন্ত্র হঠাৎই একটা বিশাল ধাক্কা খায়। তাই বুঝে-শুনে খাওয়াটা এই সময়ের জন্যই সবচেয়ে বেশি জরুরি। ‘ঈদে এসেছেন, কিছু না খেয়ে গেলে হয়’ টাইপের বাঙালি আবদার তো থাকেই। সব মিলিয়ে অনেকেরই হয়তো পেটের সমস্যা দেখা দেয়। সেই ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে আগেভাগে  কিছুটা সতর্ক হয়ে গেলে ভালো হয়। ঘুরতে গিয়ে পেট ব্যথায় কাতরানোর থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক ভালো। মজাদার বাসার খাবার হোক আর রেস্টুরেন্টের রিচ ফুডই হোক; জীবনে অনেক খাওয়া যাবে কিন্তু বছরে ঈদের ছুটি কিন্তু ঘুরে-ফিরে দুইটার বেশি আসবে না! সাবধানতা হিসেবে সঙ্গে রাখুন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, ইসবগুলের ভুষিও নিয়ে নিতে পারেন। এছাড়াও সাধারণ কিছু সমস্যা এড়াতে সঙ্গে রাখুন পেইন কিলার, মশা তাড়ানোর মলম কিংবা স্প্রে, ফুড পয়জনিংয়ের সাধারণ ওষুধ। মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যই সব সুখের মূল!
এবার ঈদ কিন্তু ভরা বর্ষায়। কিন্তু তাই বলে ভ্রমণপিপাসুরা ঘরে বসে তো আর দিন কাটাবে না! তাই ব্যাগ গোছানোর ক্ষেত্রেও একটু নিন বাড়তি প্রস্তুতি। নিজের জন্য না হলেও ব্যাকপ্যাকটির জন্য রেইনকভার সংগ্রহ করে নিন। রাখতে পারেন ব্যাগে ভরে নেয়ার মতো ছোট ছাতা। আর নিতে পারেন রেইনকোট। বিশেষত বাচ্চাদের জন্য। যত ভালো ব্যাগই হোক, কোনো ব্যাগই আসলে ১০০ শতাংশ ওয়াটারপ্রুফ বলা যায় না। সাধের ক্যামেরা, মোবাইল ফোন বাঁচানোর জন্য ও ভেজা কাপড় বহন করার জন্য পলিথিন রাখুন সঙ্গে। জুতা, বুট, হিলের সঙ্গে সঙ্গে স্লিপারও রাখতে পারেন এই বর্ষায়। এছাড়াও মেয়েদের সঙ্গী হতে পারে ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ বক্স! সবমিলিয়ে নেতিবাচক আবহাওয়ার জন্য আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখাই ভালো, যাতে কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না হয়। অনেকেই ঘুরতে যাওয়ার আগে টেনশন করেনÑ কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন, থাকবেনইবা কোথায়। অনেকেই দ্বারস্থ হন ট্যুর অপারেটর, ট্র্যাভেল এজেন্সির। এতে ঠিকঠাকমতো ঘুরে আসা যায় ঠিকই কিন্তু নিজেদের স্বাধীনতা কিছুটা খর্ব হয় বটে! একটু সচেতন হয়ে যদি ইন্টারনেটে কিছু সময় ব্যয় করা যায় তাহলে কিন্তু সব তথ্যই পাওয়া যায়। যে কোনো জায়গার ইনফরমেশনের ক্ষেত্রে সাহায্য নিতে পারেন টিওবি (ট্র্যাভেলারস অব বাংলাদেশ) নামের ফেসবুক বেজড গ্রুপের, আছে বেড়াই বাংলাদেশ, রয়েছে বিন্দাস নামের তরুণদের গ্রুপ। দেশের বাইরে যেতে হলে ব্রাউজিং করতে পারেন ওই দেশের ট্যুরিজম বোর্ডের ওয়েবসাইটগুলোতে, পড়ে নিতে পারেন সংশ্লিষ্ট ব্লগ। নিজেই নিজের প্ল্যান গুছিয়ে ফেলুন; কোনদিন, কখন, কোথায়, কীভাবে যাবেন। এতে মজার একটা স্বাধীনতা আছে।
এছাড়াও এসব গ্রুপের অনেকেই এখন ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে অলাভজনক ইভেন্টের আয়োজন করছে দেশ ও বিদেশের অনেক জায়গায়। যাচাই-বাছাই করে এসব অনেক গ্রুপের সঙ্গে আপনিও শামিল হয়ে যেতে পারেন সহজেই! ঈদের ছুটি কিছুটা রোমন্থন করে রাখার জন্য ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই। ঈদের ছুটির মতো বছরের এই কিছু সময়েই ব্যবসা, চাকরির ব্যস্ততা ভুলে পরিবারকে মন খুলে সময় দেয়া যায়। সেসব মুহূর্ত যেন ক্ষণিকের ভুলে কিংবা অবহেলায় নষ্ট না হয়, সেদিকে নজর দেয়া আবশ্যক। ঈদ হোক আনন্দময়, ভ্রমণ হোক চিরস্মরণীয়।
 সাখাওয়াত হোসেন সাফাত
ছবি : লেখক ও সংগ্রহ

 

Comments

The Daily Star  | English

Upazila Polls: AL, BNP struggle to keep a grip on grassroots

The upazila election has exposed how neither of the two major parties, the Awami League and BNP, has full control over the grassroots leaders.

1h ago