ঈদ হোক বর্ণিল

ঈদ নিয়ে নানা আয়োজনের রীতি আমাদের দেশে চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু বর্তমান সময়ে পোশাক, খাবার বা জীবনযাপন সবকিছুতেই একটু বাড়াবাড়ি চোখে পড়ে। অতি অর্থ যোগের মাধ্যমে লোক দেখানোর প্রবণতা একটু বেশি। আমাদের ছেলেবেলার ঈদগুলোও সাদাকালো ছিল না, যথেষ্ট রঙিন ছিল। তখন সাজ-পোশাক, রান্না বা টিভি অনুষ্ঠান সবই স্বাভাবিক ছিল। পাঠকদের কথা জানি না, কিন্তু সেই সময়ের ঈদগুলো আমি অনেক মিস করি। এখন ফ্যাশন হাউসের পোশাক বেশিরভাগই চড়া দামের। কিন্তু দামের লাগাম ধরা গেলে তা থাকত সবার নাগালে। দাম বেশি কেনÑ মিডিয়ার এমন প্রশ্নের উত্তরে হাউসের স্বত্বাধিকারীরা বলেন, সবকিছুর দাম বেশি, তাই আমাদেরও দাম বাড়াতে হয়। ক্রেতারা এই দামেও পোশাক কিনছে, কিন্তু দাম অনুযায়ী অনেকাংশেই মিটছে না তাদের চাহিদা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে আমরা ফ্যাশনের ট্রেন্ড তৈরি করতে পারতাম, যা এখনো সম্ভব হয়নি। ফ্যাশন হাউসগুলো প্রতি বছর ঈদে নতুন নতুন থিম নিয়ে কাজ করার এই ট্রেন্ডটা চালু করতে পারে। পোশাকে নান্দনিকতা আনতে হবে এবং কম খরচে ভালো মানের পোশাক তুলে দিতে হবে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে।
ঈদের আনন্দ, এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে সিনেমা এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠান। প্রতি বছরই ঈদকে কেন্দ্র করে সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। ঈদের সিনেমার পেছনে পরিচালক, প্রযোজকদের যতেœরও কোনো কমতি থাকে না। সিনেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবারই নিরন্তর প্রয়াস থাকে সিনেমাটিকে ব্যবসায়িকভাবে সফল করার। কিছুদিন আগে শাকিব খান প্রেস কনফারেন্স করে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঈদের সিনেমা নিয়ে। ঈদে একই নায়কের একাধিক সিনেমা মুক্তি পেলে দর্শক যেমন ছবিগুলোর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে, তেমনি সবগুলো সিনেমারই ব্যবসায়িকভাবে ভালো করার সুযোগও নষ্ট হয়ে যায়। আমি শাকিব খানকে বাহবা দেই এত বছর ধরে একাই একটি দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ধরে রাখার জন্য এবং দেরিতে হলেও এটা বুঝে সবাইকে জানানোর জন্য যে, একই ঈদে তার একাধিক সিনেমা মুক্তি পাওয়া সবার জন্য অলাভজনক। আমার মনে হয় নির্মাতা এবং প্রযোজকদেরও এই বিষয়টি খুবই ভালোভাবে বোঝা উচিত ইন্ডাস্ট্রি তথা নিজেদের স্বার্থে। আর টেলিভিশন নিয়ে যে আয়োজন তা আমাকে আরো বেশি ভাবায়। প্রতি বছর ঈদে প্রায় ৭ থেকে ৮শ’ নাটক হয় তা কে দেখে এটা আমার কাছে অষ্টম আশ্চর্য। এবার শুনছি এই সংখ্যা বেড়ে হয়ে যাবে প্রায় ২ হাজার। কে দেখে এত নাটক? আমার মনে হয় চ্যানেলগুলো যদি এই সংখ্যা না বাড়িয়ে বরং টিভি অনুষ্ঠান বা নাটকের মানের দিকে আরো যতœবান হোন এবং ভালোভাবে নজর দেন, তাহলে অনেক বেশি ভালো হয়। প্রতি বছর ঈদের ৭ দিনব্যাপী প্রোগ্রামে প্রতিটি চ্যানেল যদি সাতটি বা বড়জোর ১৪টি ভালো প্রোগ্রাম করে, তাহলে আমার মনে হয় দর্শকও আনন্দ পাবে এবং চ্যানেলগুলোও উপকৃত হবে। আমরা সব চ্যানেলের ঈদের শ্রেষ্ঠ অনুষ্ঠান নিয়ে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারি এবং তার ভেতর থেকে ঈদের শ্রেষ্ঠ অনুষ্ঠানের জন্য পুরস্কার দিতে পারি। সব চ্যানেলকেই জানাচ্ছি, তারা যদি আগ্রহী থাকে তবে আমরা আগামীতে এই পুরস্কার চালু করব।
গানের ক্ষেত্রে অবস্থা আরো খারাপের দিকে। এখন অডিও বাজারের খুবই দুঃসময়। অডিও প্রকাশকদের অনেকে বলে যে, এখন একটি অডিও সিডি শিল্পীদের ভিজিটিং কার্ডের মতো। যেটা দেখিয়ে তারা বলবে, এই যে আমার একটি সিডি বের হয়েছে। এই পর্যায় থেকে গানের উত্তরণ প্রয়োজন। হাজারটা গান না হয়ে ভালো অল্প কিছু গান হোক, মানুষ তা শুনবে এবং ধীরে ধীরে অডিও বাজারও আবার ভিন্ন রূপে ভালো অবস্থানে ফিরে আসবে।
ঈদের দিন অনেক কিছুর ভিড়ে সব থেকে আকর্ষণীয় যে জিনিসটি হয়, তা হলো খাবার। ছোটবেলায় এমনকি কিশোর বা যুবক বয়সে যেসব খাবারের নামও শুনিনি, সেসব খাবার এখন আমরা ঈদে খাই। তারপরও সেই পুরনো রীতি অনুযায়ী সেমাই, পায়েস বা পোলাওর মতো নিয়মিত রান্নাগুলোও কিন্তু এখনো হয়। মানুষ এখনো ঈদের খাবার হিসেবে এগুলোকে পছন্দ করে। তারপরও ঈদে মানুষের বাসায় এখন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় নানারকম নিত্যনতুন মুখরোচক খাবার তৈরিতে। আমার মনে হয় ঐতিহ্য ধরে রেখে কিছু পরিবর্তন হতেই পারে। এত আয়োজনের মধ্যে সবার আগে যেটা মাথায় রাখা উচিত তা হলো স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করা। সবকিছুর মাঝেও প্রতি বছরই ঈদ আসে আর চারদিক আমরা রাঙিয়ে তুলি আনন্দ আর ভালোবাসায়। এ বছরের ঈদ আপনাদের অনেক ভালো কাটুক, সবাই ভালো থাকুন আর অবশ্যই সুস্থ থাকুন। সবাইকে ঈদ মোবারক।

রাফি হোসেন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus promises election on time

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday reaffirmed his commitment to holding the 13th national election in the first half of February next year.

7h ago