সুস্বাস্থ্য পরিবার

খাবার টেবিলে বাবার জন্য অপেক্ষায় বসে আছে আনিশা, একসঙ্গে খাবে। আজ বাবার ফিরতে যেন একটু দেরিই হচ্ছে। এদিকে খিদেও পেয়েছে। কলিংবেল! মা দরজা খুললেই বাবা মেয়ের দিকে তাকিয়েই সরি বলে টেবিলে খেতে বসল শার্ট গুটিয়ে। অমনি আনিশা বলল, বাবা আগে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি আর একটু বসছি। তুমি তো বাইরে থেকে এসেছ, হাত না ধুয়ে...। বাবা নিজের ভুলটা বুঝে চট করে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসল। মা বাকি খাবার গরম করে একসঙ্গে খেতে বসল। বাবাকে আনিশা বলল, সরি বাবা তুমিও শিখিয়েছ বাইরে ধুলো-ময়লা, রোগজীবাণু থাকে, তাই বাইরে থেকে এসে ফ্রেশভাবে হাত-মুখ না ধুয়ে খাবার খেতে নেই। সত্যিই তাই কিন্তু প্রতিটি ঘরেই যদি আমরা এই সচেতনতা বজায় রাখি, তাহলে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ থেকে আমরা এবং আমাদের পরিবারকে দূরে রাখতে পারি।

এখন গরম, আর এ সময় ঘাম হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু বেশিক্ষণ ঘামে ভেজা থাকা অসুস্থ হওয়ার শুরু। তাই বিশেষ করে ছোটদের ক্ষেত্রে ঘাম হলে তাড়াতাড়ি সে ঘাম মুছে ঠা-া স্থানে রাখা। খেলা করুক, ছবি আঁকুক যা-ই করুক খেয়াল রাখা যেন ঘেমে না যায়, ঘাম থেকে র্যাশ, চুলকানি, ঠা-া সর্দি ও জ্বর আসতে পারে, তাই সজাগ দৃষ্টি রাখুন। ছোটদের সঙ্গে সঙ্গে বড়দের ক্ষেত্রে এ জিনিসটা খেয়াল করা জরুরি। এছাড়া তীব্র বৃষ্টির কারণে প্রায়ই রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যায়। বৃষ্টির পানির সঙ্গে রাস্তার নোংরা ময়লা পানিতে থাকে নানা জীবাণু। এড়িয়ে চলুন। কারণ এই ময়লা পানি বাচ্চাদের ত্বকে লাগলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় ত্বকে ইনফেকশন হতে পারে। তাই এ রকম অবস্থায় পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে এসে জীবাণুমুক্ত সাবান দিয়ে গোসল করে নিন। শিশুদের পাশাপাশি বড়দেরও সতর্ক থাকা উচিত।

এই সময়ে বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকলে জ্বর-ঠা-ার আশঙ্কা থাকে। নানা ধরনের ভাইরাসের প্রকোপে সুস্থ থাকা কঠিন। ঘরের সুস্বাস্থ্যকর খাবার, বিশুদ্ধ পানি পান, মওসুমি ফল খাওয়ার পাশাপাশি রাস্তার খোলা ও বাসি খাবার এড়িয়ে চললে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে আসে। সুস্বাস্থ্য বহাল রাখার জন্য প্রথম শর্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। এছাড়া ব্যবহার করা তোয়ালে, রুমাল, ব্রাশ আলাদা রাখুন, বাড়ির টয়লেট পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন। টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে ভালো করে হাত-মুখ ধুয়ে নিন। রান্নাঘর পরিষ্কার রাখুন। থালাবাসন ধোয়ার স্থান নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।

পোষা বিড়াল, কুকুররকে বিছানা বা সোফায় উঠতে দেবেন না। এ সময় টাটকা খাবার খাওয়া শ্রেয়। খাবার টাটকা হলেও অনেক সময় থালাবাসনের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। সে জন্য থালা-গ্লাস ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। বিশেষ করে খোলা খাবার এড়িয়ে চলুন। পানি ভালো করে ফুটিয়ে পান করুন। শিশুর ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। শিশুকে দীর্ঘ সময় বাইরে নিয়ে গেলে সঙ্গে তার খাবার পানি ও অতিরিক্ত খাবার নিন। বাসার কাজে ব্যবহৃত যেকোনো কাপড়ের টুকরো যা দিয়ে ধুলোবালি বা ঘর মোছা হয়, সে ময়লা কাপড় কাজ শেষ হওয়ার পর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন। প্রয়োজনে হ্যান্ডশেক করলেও হাত ধুয়ে ফেলুন। ফুটপাথের কমদামি সুগন্ধি ব্যবহার করবেন না। এ থেকে স্কিনের নানা সমস্যা হতে পারে।

অনেক সময় হাত পরিষ্কার না করে আঙুল মুখে দিয়ে ফেলি। এতে অনেক ব্যাকটেরিয়া মুখের ভেতরে চলে যেতে পারে। বাইরে যে ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে তা পরিচ্ছন্ন রাখুন।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যচর্চার মাধ্যমে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। মূলত পরিষ্কার থাকার মাধ্যমে আপনি অর্ধেকের বেশি রোগ প্রতিরোধ করতে পারবেন। হাত ধোয়ার অভ্যাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যচর্চার জন্য অপরিহার্য। নিয়ম ও সময়মতো হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস, ডায়রিয়া, কৃমিরোগসহ আরো অনেক জীবাণু দ্বারা সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। হাত ধোয়া অবশ্যই জরুরি। হাত ধোয়ার অভ্যাস সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়। আর এজন্য তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। আমরা যখন হাত দিয়ে নানা কাজ করি, এটা-সেটা ধরি, তখন অসংখ্য জীবাণু হাতে লেগে যায়। এক মিলিমিটার লোমকূপের গোড়ায় প্রায় ৫০ হাজার জীবাণু থাকতে পারে। এসব জীবাণু খালি চোখে দেখা যায় না। এরপর আমরা সেই হাত পরিষ্কার না করে খাবার, মুখ, চোখ, নাক স্পর্শ করি। এর ফলে আমরা সংক্রমিত হই। অন্যকে স্পর্শ করে তাকেও আমরা জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত করতে পারি। যাওয়ার আগে ও পরে খাবার-দাবারে হাত দেয়ার আগে বাথরুম ব্যবহারের পর, কাঁচা মাছ, মাংস, ডিম বা শাকসবজি স্পর্শ করার শিশুদের ডায়াপার পরিবর্তনের পর ময়লা-আবর্জনা স্পর্শ করার পর ইত্যাদি আরো নানারকম জীবাণু দ¦ারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাজ করার পর অবশ্যই হাত-মুখ সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে সাবান দিয়ে গোসল করে ফেলুন। অপরিচ্ছন্নভাবে কখনই খাবার মুখে দেয়া যাবে না।
হাত ধোয়ার কিছু নির্দিষ্ট ধাপ রয়েছে। ধাপগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। প্রথমে পানি দিয়ে হাত ভেজাতে হবে। তারপর সাবান নিয়ে দুই হাতে মেখে ফেনা করতে হবে।

দুই হাত যে ফেনা ব্যবহার করে দুই হাতের উভয় দিকে আঙুলের ফাঁক পরিষ্কার করুন। নখের নিচে সাইডে ধুয়ে কবজি পর্যন্ত ভালোভাবে ঘষে নিতে হবে। সময় বেশি লাগবে না, তবে আপনি হবেন জীবাণুমুক্ত।
নিজেকে পরিষ্কার রাখার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের পরিবেশ পরিষ্কার, ধুলো-ময়লামুক্ত রাখুন। বিশেষ করে রান্নাঘর। ময়লা জমিয়ে রাখবেন না। সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে ফেলুন। নইলে রোগজীবাণু বাসা বাঁধতে দেরি করবে না। একটি সুস্থ পরিবার আপনাকে রাখতে পারে চিন্তামুক্ত।
সব কাজ সঠিক নিয়মে করতে পারলে পরিবারের সবাই সুখী ও স্বাস্থ্যসম্মত থাকবে। পরিচ্ছন্ন জীবন গড়–ন, সুস্থ থাকুন।
রাহনুমা শর্মী
ছবি : সংগ্রহ
Comments