যে আনন্দ শৈশবের

ছোট হওয়া ভারি মজা। বিশেষ করে ঈদের দিন। চাঁদরাত থেকেই ছোটদের মনে ছক কাটে সালামি সংগ্রহের। বাবা কত সালামি দেবে, মা, চাচা, মামা, ফুপুর থেকেইবা কত নেয়া যাবেÑ সব মিলিয়ে মোটা অঙ্কের কাল্পনিক বাজেট নিরূপণ হয়ে যায় একরাতেই। সালামি একমুখী; মানে বড়রা কেবল ছোটদের দেবে। তাই ভাইপো, ভাগ্নেদের কাছে যা আঙ্কেল সেলামি, আঙ্কেলের কাছে তাই হয়ে ওঠে আনন্দের। কিন্তু বড়দের কাছ থেকে টাকা আদায়ের এই মহাপরিকল্পনা শুরু হয়েছে কবে থেকে? প্রথম যেদিন ঈদ হয়েছিল সেদিন থেকে কি?

ছোট হওয়া ভারি মজা। বিশেষ করে ঈদের দিন। চাঁদরাত থেকেই ছোটদের মনে ছক কাটে সালামি সংগ্রহের। বাবা কত সালামি দেবে, মা, চাচা, মামা, ফুপুর থেকেইবা কত নেয়া যাবেÑ সব মিলিয়ে মোটা অঙ্কের কাল্পনিক বাজেট নিরূপণ হয়ে যায় একরাতেই। সালামি একমুখী; মানে বড়রা কেবল ছোটদের দেবে। তাই ভাইপো, ভাগ্নেদের কাছে যা আঙ্কেল সেলামি, আঙ্কেলের কাছে তাই হয়ে ওঠে আনন্দের। কিন্তু বড়দের কাছ থেকে টাকা আদায়ের এই মহাপরিকল্পনা শুরু হয়েছে কবে থেকে? প্রথম যেদিন ঈদ হয়েছিল সেদিন থেকে কি? শেষ নবী আসার আগে অন্য নবীদের আমলে রোজারীতি থাকলেও রোজার ঈদ বলতে কিছুই ছিল না। রোজার পর ঈদের প্রচলন ঘটে আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ীÑ দ্বিতীয় হিজরির পহেলা শাওয়াল তথা ইংরেজি ৬২৪ সালের ৩১ মার্চ, মদিনায়। আর মক্কায় তা শুরু হয়েছিল আরো ৬ বছর পর, মানে অষ্টম হিজরিতে, ইংরেজি ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে। আমাদের অঞ্চলে ঈদ আসে সুলতানি আমলে। বয়ঃকনিষ্ঠদের ঈদের দিনে টাকা দিয়ে আশীর্বাদ তথা দোয়া করার রেওয়াজ আমাদের দেশে বেশ চালু আছে। ধারণা করা হয় এই প্রথা আমাদের দেশ অবধি পৌঁছেছে সৌদি আরবের দেখানো পথ ধরে। মরুর দেশে অঞ্চল ভেদে ঈদের অনুষ্ঠান পালনে ভিন্নতা রয়েছে। ঈদের নামাজ শেষে দুপুর ভোজের আগে বয়োজ্যেষ্ঠদের বাড়িতে সালামি প্রাপ্তির আশায় আনাগোনা শুরু করে কনিষ্ঠরা। বড়রা এ সময় নগদ টাকাসহ বিভিন্ন দ্রব্যাদি খুশি মনে ছোটদের উপহার দেন। এমনকি দোকানিরাও চেনা-অচেনা শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন জিনিস উপহার হিসেবে দিয়ে থাকে। মূলত শিশুদের খুশি করতেই ঈদের দিনে ওদের হাতে বিশেষ কোনো উপহার ধরিয়ে দেয়া হয়। সে প্রথাই কালের বিবর্তনে আমাদের দেশে ঈদ সালামি নামে বিস্তার লাভ করে শেকড় গেঁড়ে বসেছে। তবে একেবারে সেধে সেধে বড়রা সালামি দিতে যাবে কেন! সে জন্য তাদের সম্মান প্রদর্শন করা ছোটদের ওপর যেন কর্তব্য বিশেষ। পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে পকেটের দিকে তাকিয়ে থাকা; যত বড় নোট বের হবে, মন ততই খুশি হয়ে উঠবে। অবশ্য ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা ‘পায়ে হাত দিয়ে সালাম’ করার এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেন না। তবে সালামি দেয়া বা নেয়ার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি নেই। যাহোক, খুশির কথা যখন উঠলই তখন সালামি চাকচিক্যের কিছু দুর্ভোগের কথা মনে করিয়ে দিই। পরিচ্ছন্ন শিশু মন রাঙাতে পরিচ্ছন্ন নতুন টাকার বিকল্প নেই। আর সে উদ্দেশ্যেই ঈদকে সামনে রেখে ব্যাংক কাউন্টারে জমে নতুন টাকা সংগ্রহের লম্বা লাইন। যারা একটু অধৈর্য তাদের সেই দুর্বলতার সুফল ভোগ করে ব্যাংকের বাইরে বসা টাকার অস্থায়ী বাজারগুলো। মাঝে মধ্যে দুই, পাঁচ, ১০ টাকার নতুন নোটের বান্ডিল কিনতে হয়Ñ ১০০ টাকারটি ১৫০ টাকা দিয়ে। বেশি ঠেকে গেলে ২০০ টাকা দিয়েও কিনতে হতে পারে! এছাড়াও ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিগুলোর টিকিট কিনতে গেলেও ভুগতে হয় সালামি বিড়ম্বনায়। খুশি হয়ে ওদের ঈদ সালামি দিতেই হবে, আর টিকেট হাতে পেতে চাইলে খুশি আপনাকে হতেই হবে। অবশ্য সালামেও আজকাল লেগেছে ডিজিটাল ছোঁয়া। মানি ট্রান্সফার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দাতা-গ্রহীতা মুখোমুখি হতে না পারলেও সালামি পৌঁছে দেয়া যায় নাছোড় কনিষ্ঠদের মুঠোফোনে। তাই ভালো লাগুক আর না লাগুক, সালামি না দিয়ে উপায় নেই।
 শিবলী আহমেদ
ছবি :  সংগ্রহ

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago