উইলিয়ামের ইচ্ছাশক্তির আখ্যান, রূপকথাকেও যা হার মানায়

ছবি: সংগৃহীত

মাত্র তিন বছর বয়সেই যে শিশুটি এক বিরল রকমের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কোনোমতে বেঁচে ছিল, সে-ই কিনা সকল বাধা পেরিয়ে ১৭ বছর বয়সে অলিম্পিকের মতো ক্রীড়াযজ্ঞে খেলতে নেমেছে!

অলক্ষুণে ক্যান্সার সে সময় তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছিল। ডাক্তাররা বলেছিলেন, তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ১০ শতাংশ। শিশু উইলিয়াম ফ্ল্যাহারটির তখন প্রয়োজন ছিল বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট। ভাগ্য ভালো, ডোনার হিসেবে সে পেয়ে যায় স্বয়ং আপন বড় ভাই চার্লসকে। বড় হলেও চার্লসের বয়স তখন কেবল সাত!

সব কিছু ছাপিয়ে সফলভাবে সম্পন্ন হয় উইলিয়ামের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট। ১০ দিনের মাথায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে যায় সে। এরপর চলে লাগাতার কেমোথেরাপি। অবশেষে উইলিয়ামের বয়স পাঁচ পূর্ণ হলে তার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। চার্লসের মতো স্কিয়িংয়ের (পায়ের পাতায় দুটি সরু পাত লাগিয়ে বরফের ওপর দিয়ে চলার খেলা) ছাড়পত্র পায়। ঢাল বেয়ে এই স্কি করাটা যে তার হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক!

কিন্তু এরপর আরেক বিপত্তি। এবার স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু না। পুরো ফ্ল্যাহারটি পরিবার যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে দক্ষিণে যাত্রা করে এবং পুয়ের্তো রিকোতে পাড়ি জমায়। তবে দুই সহোদরের আমেরিকাতে যাতায়াত অব্যাহত থাকে। স্কিয়িংয়ের খাতিরে। কারণ, পুয়ের্তো রিকোর উষ্ণ আবহাওয়া মোটেও স্কি করার জন্য উপযুক্ত নয়। আর বলা চলে, দেশটির স্কিয়িং কিংবা অন্যান্য শীতকালীন খেলাধুলার কোনো অবকাঠামোই ছিল না।

দেখতে দেখতে কয়েকটি বছর কেটে যায়। ২০১৮ সালে রচিত হয় ইতিহাস। পিয়ংচাং শীতকালীন অলিম্পিকে সুযোগ পেয়ে যায় চার্লস। ২০ বছরের ব্যবধানে পুয়ের্তো রিকোর কেউ প্রতিনিধিত্ব এই আসরে। চার বছর পর এবার বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকে দেশটির পতাকা বহন করছে উইলিয়াম।

পুরো বিশ্ব ফ্ল্যাহারটি ভাইদের অর্জনে অভিভূত! তবে দুঃখের ব্যাপার হলো তাদের বাবা ডেনিস ফ্ল্যাহারটি বেঁচে নেই। তিন বছর আগে তিনি পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। এর আগে পুয়ের্তো রিকোতে শীতকালীন ক্রীড়ার ক্ষেত্র তৈরিতে তিনি ভূমিকা রাখেন, যেন তার ছেলেদের সর্বোচ্চ স্তরে স্কিয়িং করার স্বপ্ন টিকে থাকে। সেই স্বপ্ন রূপ নিয়েছে বাস্তবে।

এতবার উইলিয়ামের রক্ত ট্রান্সফিউসন (স্থানান্তর) করতে হয়েছে যে তার মা অ্যান ফ্ল্যাহারটির ভাষ্যমতে, ২০ বারের পর তারা গোনাই ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি সন্তানকে সঙ্গ দিচ্ছেন বেইজিংয়ে। কারণ, উইলিয়ামের বয়স এখনও ১৮ হয়নি। অ্যান জানান, 'তাকে (উইলিয়ামকে) পাহাড় বেয়ে নেমে ফিনিশ লাইন অতিক্রম করতে দেখতে আমার আর তর সইছে না। আমি জানি না কীভাবে আমার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করব!'

এবারের আসরের প্রস্তুতির জন্য চিকিৎসকের ছুরি-কাঁচির নিচে যাওয়া পিছিয়েছে উইলিয়াম। বর্তমানে তার চোয়ালে একটি টিউমার আছে, সার্জারির মাধ্যমে যা অপসারণ করতে হবে।

ইতোমধ্যে আলপাইন স্কিয়িংয়ে ছেলেদের জায়ান্ট স্লালোমে অংশ নিয়েছে উইলিয়াম। ৮৯ জন প্রতিযোগীর মধ্যে কেবল ৪৬ জন শেষ করতে পারে প্রতিযোগিতা। কৈশোরের শেষদিকে থাকা উইলিয়াম পেয়েছে ৪০তম স্থান। তার সময় লেগেছে ২ মিনিট ৪১.৪২ সেকেন্ড।

'স্কিয়িং আমাকে চাপমুক্ত হতে সাহায্য করে,' জানায় উইলিয়াম। সে যোগ করে, 'সব কিছু পেছনে ঠেলে উঠে আসার যে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে, এরকম কত জন বলতে পারবে যে তারা শীতকালীন অলিম্পিকে খেলতে পেরেছে?'
  
উইলিয়াম ফ্ল্যাহারটি: স্মরণীয় এই নামটি উচ্চারিত হবে যুগে যুগে।

Comments

The Daily Star  | English
Tariffs

Economic lessons from the tariff war

Our understanding of tariffs might not be complete.

7h ago