অস্ট্রেলিয়াকে সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে বিধ্বস্ত করল বাংলাদেশ

সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে অজিদের ৬০ রানে হারিয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

অতি আশাবাদী কেউও হয়তো এমনটা ভাবেননি! সিরিজ আগেই ঘরে তোলার পর অস্ট্রেলিয়াকে টি-টোয়েন্টিতে তাদের সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাওয়ার তিক্ত স্বাদ দিল বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বোলিং নৈপুণ্যে অল্প পুঁজি নিয়েও এই সংস্করণে রানের হিসাবে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় পেল টাইগাররা।

সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে অজিদের ৬০ রানে হারিয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। তাদের ছুঁড়ে দেওয়া ১২৩ রানের লক্ষ্যে নেমে বরাবরের মতো মন্থর ও টার্নিং উইকেটে সফরকারীরা অলআউট হয় কেবল ৬২ রানে। তখনও বাকি ছিল ইনিংসের ৩৮ বল! শেষ ৭ উইকেট তারা হারায় ৩০ বলের মধ্যে। সেসময়ে তারা যোগ করতে পারে মাত্র ১৪ রান।

এতে বাংলাদেশের পক্ষে সিরিজের ফল দাঁড়িয়েছে ৪-১। একই ভেন্যুতে প্রথম তিন ম্যাচে টানা জয়ের পর আগের ম্যাচে হেরেছিল তারা।

টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার আগের সর্বনিম্ন সংগ্রহ ছিল ৭৯ রান। ১৬ বছর আগে ২০০৫ সালে সাউদাম্পটনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই রানে অলআউট হয়েছিল তারা। ওভারের হিসেবেও এটি অজিদের সবচেয়ে দ্রুত গুটিয়ে যাওয়ার নজির। ইংলিশদের বিপক্ষে ওই ম্যাচে তারা খেলতে পেরেছিল ১৪.৩ ওভার। এদিন তারা টিকতে পারে মোটে ১৩.৪ ওভার।

রানের হিসাবে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০১২ সালে বেলফাস্টে ৭১ রানে জিতেছিল তারা। লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের ৫ উইকেটে ১৯০ রানের জবাবে আইরিশরা পুরো ওভার খেলে করেছিল ৮ উইকেটে ১১৯ রান।

প্রথম পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে এদিন টি-টোয়েন্টিতে অন্তত এক হাজার রান ও ১০০ উইকেট শিকারের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। হাজার রান তিনি পেরিয়েছেন বহু আগে। ইতিহাস গড়ার ম্যাচে সাকিব পেলেন ৪ উইকেট। ৩.৪ ওভারে তিনি কেবল দেন ৯ রান। একাদশে ফেরা সাইফউদ্দিন ৩ উইকেট নেন ১২ রানে।

ম্যাচসেরা ও সিরিজসেরার পুরস্কার গেছে বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিবের ঝুলিতে। সিরিজে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১১৪ রান করার পাশাপাশি তিনি শিকার করেন ৭ উইকেট।

অস্ট্রেলিয়ার দুর্দশার শুরু দ্বিতীয় ওভারেই। আক্রমণে গিয়েই ড্যান ক্রিস্টিয়ানকে বোল্ড করেন নাসুম আহমেদ। তিনে নামা মিচেল মার্শকেও থিতু হতে দেননি এই বাঁহাতি স্পিনার। ফলে ১৭ রানে পতন হয় তাদের ২ উইকেটের।

অজি অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড ও বেন ম্যাকডারমট ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। তৃতীয় উইকেটে তারা যোগ করেন ২১ রান। অষ্টম ওভারে বল হাতে নিয়ে ওয়েডের স্টাম্প উপড়ে নেন সাকিব। দলের পক্ষে ২২ বলে সর্বোচ্চ ২২ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

পরের ওভারে ম্যাকডারমট ফিরতি ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহকে। তার সংগ্রহ ১৬ বলে ১৭ রান। তিনি ও ওয়েড ছাড়া অজিদের আর কোনো ব্যাটসম্যান পারেননি দুই অঙ্কে যেতে। ফলে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে তাদের ইনিংস।

এরপর মঞ্চে আবির্ভূত হন সাইফউদ্দিন। একাদশ ওভারে তিন বলের মধ্যে জোড়া শিকার ধরেন তিনি। অ্যালেক্স ক্যারি হন বোল্ড, মোজেজ হেনরিকস ক্যাচ দেন নুরুল হাসান সোহানের হাতে।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

পরের ওভারে অ্যাশটন টার্নারকে ফিরিয়ে টি-টোয়েন্টিতে নিজের শততম উইকেট দখল করেন সাকিব। নতুন করে তিনি আরও একবার নিজের নাম ওঠান রেকর্ড বইতে। তিনি ও সাইফউদ্দিন মিলে লোয়ার অর্ডারও ছেঁটে ফেললে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে কম রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পুরো ২০ ওভার খেলে বাংলাদেশ তোলে ৮ উইকেটে ১২২ রান। ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটি আর ছয় ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কে পৌঁছালেও কেউই ইনিংস টানতে পারেননি। ওপেনার নাঈম শেখ ২৩ বলে সর্বোচ্চ ২৩ রান করেন।

অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ পাঁচে নেমে ১৯ রান করেন ১৪ বলে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৮ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। অস্ট্রেলিয়ার নাথান এলিস ১৬ ও ক্রিস্টিয়ান ১৭ রানে ২টি করে উইকেট নেন।

১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ৫ উইকেটে ১০২। পিচের কথা বিবেচনায় নিয়েও সেখান থেকে ১৩০-১৪০ রানে পৌঁছানো ছিল খুবই সম্ভব। কিন্তু অজি বোলারদের সামনে রীতিমতো খাবি খায় স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। শেষ ৫ ওভারে তারা যোগ করতে পারে কেবল ২০ রান। তবে সেই পুঁজিই যথেষ্ট হয়েছে সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে চতুর্থবারের মতো হারাতে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২২/৮ (শেখ মেহেদী ১৩, নাঈম ২৩, সাকিব ১১, সৌম্য ১৬, মাহমুদউল্লাহ ১৯, নুরুল ৮, আফিফ ১০, মোসাদ্দেক ৪*, সাইফউদ্দিন ০, মোসাতফিজ ০*; টার্নার ১/১৬, অ্যাগার ১/২৮, জাম্পা ১/২৪,এলিস ২/১৬, ক্রিস্টিয়ান ২/১৭, সোয়েপসন ০/১৪)

অস্ট্রেলিয়া: ১৩.৪ ওভারে ৬২ অলআউট (ক্রিস্টিয়ান ৩, ওয়েড ২২, মার্শ ৪, ম্যাকডারমট ১৭, ক্যারি ৩, হেনরিকেস ৩, টার্নার ১, অ্যাগার ২, এলিস ১, সোয়েপসন ১*, জাম্পা ৪; শেখ মেহেদী ০/২০, নাসুম ২/৮, মোস্তাফিজ ০/৩, সাইফউদ্দিন ৩/১২, সাকিব ৪/৯, মাহমুদউল্লাহ ১/৯)।

ফল: বাংলাদেশ ৬০ রানে জয়ী।

সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ৪-১ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান।

সিরিজসেরা: সাকিব আল হাসান।

Comments

The Daily Star  | English
World Press Freedom Day 2024

Has Bangladesh gained anything by a restrictive press?

The latest Bangladesh Bank restriction on journalists is anti-democratic, anti-free press and anti-public interest.

9h ago