এমন ব্যাটিংয়ের সাফাই গেয়ে গেলেন শান্ত

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

একবার রিভিউ নিয়ে বাঁচলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু তাতে শিক্ষা হলো কোথায়? ঠিকই স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বিলিয়ে এলেন উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজও একই কায়দায় হলেন বোল্ড। এর আগে সাদমান ইসলাম প্রতিপক্ষকে করালেন ক্যাচিং অনুশীলন। আর ম্যাচটা যে লাল বলের তা হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক। দ্রুততার সঙ্গে একটা রান চুরি করতে গিয়ে কাটা পড়লেন রানআউটে।

মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিনের শেষ বেলার চিত্র এটি। বাংলাদেশের বাকি ব্যাটাররাও অদ্ভুত অ্যাপ্রোচে বাজে শটে উইকেট হারান। তাতে ৩০০ রান তুলে পাকিস্তানের করা ইনিংস ঘোষণায় ফলোঅনে পড়ার বড় শঙ্কায় পড়েছে তারা। মাত্র ৭৬ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়ে লেজ বেরিয়ে গেছে। প্রতিপক্ষকে ফের ব্যাটিংয়ে পাঠাতে হলে শেষ ৩ উইকেটে করতে হবে আরও ২৫ রান।

অথচ তৃতীয় দিনের পুরোটাই গিয়েছে বৃষ্টির পেটে। প্রথম দিনে খেলা হয়নি অনেকটা সময়। মাঝে দ্বিতীয় দিনে নামমাত্র কিছু ওভার খেলা হয়েছে। মিরপুর টেস্টের পরিণতি এক প্রকার নির্ধারিত করে দিয়েছিল বৃষ্টিই। সেটা নিষ্প্রাণ একটি ড্র। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যেন বৃষ্টির তৈরি করা ভাগ্য মানতে নারাজ। তার চেয়ে উইকেট বিলিয়ে ম্যাচ 'হেরে' যাওয়াই যেন লক্ষ্য। বিস্ময়কর শোনালেও ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে এমনটাই মনে হয়েছে।

তারচেয়েও বিস্ময়কর ছিল দিনের শেষে সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হাসান শান্তর মন্তব্য। দলের আগ্রাসী ব্যাটিং অ্যাপ্রোচের সাফাই গেয়ে যান তিনি, 'এক্সিকিউশন একদিন হবে। যত বেশি হবে, সাফল্যের পরিমাণ তত বেশি থাকবে। আজকে হয়নি, হয়তো পরের ইনিংসে হবে। এমন না যে, আমরা পারি না বা আমরা এর আগে করিনি। আজকে হয়তো হয়নি।'

নিজেদের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচকে সঠিক বানাতে পুরনো উদাহরণও টেনে আনেন বাঁহাতি এ টপ অর্ডার ব্যাটার, 'আমরা এর থেকেও ভালো ক্রিকেট খেলেছি। আগের ২-৩টি ম্যাচে আমরা ৩০০-৪০০ রান করেছি, এমনকি শ্রীলঙ্কায় ৫০০-ও করেছি। আগের চেয়ে আমাদের ধারাবাহিকতা বেড়েছে। এমন নয় যে এই ম্যাচ বা গত ম্যাচের মতো। আজকের দিনটা খারাপ ছিল, ভালো করতে পারিনি। তার মানে এই নয় যে আমাদের সামর্থ্য এতটুকুই। আমরা এর থেকে বড় বড় রানও করে এসেছি।'

রক্ষণাত্মক খেললে আরও বেশি আউট হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বলেই এমন ব্যাটিং, জানান শান্ত, 'সাধারণ পরিকল্পনাই ছিল। যার যার ন্যাচারাল গেম খেলার পরিকল্পনা ছিল। ওরকম আলাদা কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের একটা কারণ ছিল, উইকেটে যত রক্ষণাত্মক খেলবেন, তত কঠিন হয়ে উঠবে। এখানে রান করাও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ব্যাটাররা যার যে শটে ভালো দক্ষতা আছে, তারা সেই শট খেলতে চেয়েছে। এখানে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেললে আউট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। দুর্ভাগ্যবশত এক্সিকিউশন ওরকম হয়নি। এই উইকেটে রক্ষণাত্মক থাকলেই সমস্যা হত।'

এদিন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছিল, ম্যাচ বাঁচানোর চেয়ে রান করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্লগ সুইপের মতো ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলেছেন তারা হরহামেশাই। আর এত সুইপ খেলতে যাওয়ার ব্যাখ্যাও দেন তিনি, 'টার্নিং উইকেটে এলবিডব্লিউ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমন উইকেটে সবাই সুইপের ওপরেই বেশি আস্থা রাখে। এজন্যই সবাই সুইপ খেলার পরিকল্পনা করেছে।'

তবে তাতে লাভ হয়নি। এমন আত্মঘাতী ব্যাটিংয়ের স্বাভাবিক পরিণতিই মেলে টাইগারদের। সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি এখন তারা তাকিয়ে আছে তাইজুল ইসলামের মতো লেজের ব্যাটারের দিকে। শান্তর ভাষায়, 'আমার মনে হয়, কালকের (বুধবার) দিনটা খুব ইম্পরট্যান্ট। সাকিব ভাই ও তাইজুল ভাই যদি পার্টনারশিপ করতে পারে, আরও কিছু রান করতে পারি, তাহলে একটা ভালো অবস্থানে যাব। কাল আবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ আছে। খুব ভালো ব্যাটিং করতে হবে।'

অথচ বৃষ্টিস্নাত মিরপুরের উইকেটে কত সাবলীলভাবেই না ব্যাটিং করেন পাকিস্তানের ব্যাটাররা। খুব বড় ইনিংস কেউ খেলতে না পারলেও চার ব্যাটার ফিফটি করেন। তারা ইনিংস ঘোষণার পর ড্রয়ের বাইরে ফল হয়তো ভাবেননি প্রচণ্ড আশাবাদীরাও। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা নিরাশাবাদী ব্যক্তিদেরও চাঙা করে দিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Tax corruption key barrier to business growth: CPD survey

Corruption among tax officials has emerged as the single biggest barrier to business growth, according to a survey by local think tank Centre for Policy Dialogue (CPD).

3h ago