তামিমের দ্রুততম সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশড করল বাংলাদেশ 

Tamim Iqbal
ছবি: জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট

ব্যাট করার জন্য বেশ ভালো উইকেটে বড় পুঁজি পেয়েছিল জিম্বাবুয়ে। প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থতার পর রান তাড়ায় তামিম ইকবাল সেরা অবস্থায় থাকায় সেই পুঁজিও টপকানো হয়ে গেল সহজ। তার দারুণ সেঞ্চুরির পর শেষটায় ঝড় তুলে অনায়াসে কাজ সারেন নুরুল হাসান সোহান।

হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে বাংলাদেশ জিতল ৫ উইকেটে। এতে ঘরের মাঠেও স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে হলো হোয়াইটওয়াশড।

আগে ব্যাট করে রেজিস চাকাভার ৮৫, সিকান্দার রাজা আর রায়ান বার্লের ঝড়ো দুই ফিফটিতে জিম্বাবুয়ে করেছিল ২৯৮ রান। তামিমের ৯৭ বলে ১১২ রান আর ছয়ে নামা সোহানের ৩৯ বলে ৪৫ রানে ২ ওভার আগেই জিতে যায় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।

এই জয়ে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ১০ পয়েন্ট। ওয়ানডে সুপার লিগে এই সিরিজ থেকে  মূল্যমান ৩০ পয়েন্টের পুরোটাই পকেটে পুরল বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার তিনশো ছুঁইছুঁই রান তাড়ায় দুই ওপেনার আনেন দারুণ শুরু। লিটন দাস নেমেই ছিলেন সাবলীল। দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারিতে দ্রুত রান বাড়ানোর কাজটা শুরু করেন তিনিই।

ক্রিজে গিয়ে সময় নিয়ে থিতু হওয়া তামিম পরে আত্মবিশ্বাস পেয়ে খেলতে থাকেন আগ্রাসী মেজাজে। দুই পাশেই রান আসতে থাকায় অনায়াসে এগুতে থাকে বাংলাদেশের চাকা।

উইকেটে ব্যাটসম্যানদের জন্য বেশ অনুকূলে থাকায় তেমন কোন সমস্যাই হচ্ছিল না তাদের। এই জুটি এগুচ্ছিল শতরানের দিকেই। স্পিন আক্রমণে আসতেই ছন্দপতন হয়ে যায় লিটনের। ওয়েসলি মাধভেরেকে সুইপ করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ উঠিয়ে দেন সিরিজে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরিয়ানের ব্যাট থেকে আসে ৩৭ বলে ৩২ রান।

দ্বিতীয় উইকেটে সাকিবকে নিয়েও জমে যায় তামিমের আরেক জুটি। এবারও কোন স্বাচ্ছন্দ্যেই বেরুতে থাকে রান। আগের ম্যাচে হিরো সাকিব এদিনও দেখা দেন ছন্দে। ৫৯ রানের জুটির পর সাকিবকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রো আনেন লুক জঙ্গুই। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৩০ রান করা সাকিব।

তামিম ছিলেন সেরা অবস্থায়। বোলারদের উপর দাপট দেখিয়ে খেলা করে দেন সহজ। মাত্র ৮৭ বলে ক্যারিয়ারের দ্রুততম সেঞ্চুরি তুলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ওয়ানডেতে এটি তার ১৪তম শতক, যার ৭টি এলো দেশের বাইরে।

চারে নামা মোহাম্মদ মিঠুন এদিনও ছিলেন না স্বস্তিতে। তবে এক পাশে তামিম রান বের করতে থাকায় তৃতীয় উইকেটে ফিফটির জুটি এসে যায়। ৩৫তম ডোনাল্ড টিরিপানো পর পর ফিরিয়ে দেন তামিম ও মাহমুদউল্লাহকে। খেলায় ফেরার সামান্য সম্ভাবনা জাগে জিম্বাবুয়ের। কিন্তু সেটা মিলিয়ে যেতেও সময় লাগেনি। ক্রিজে নেমেই দারুণ চনমনে সময় পার করতে থাকেন সাড়ে চার বছর পর ওয়ানডে খেলতে সোহান।

ধুঁকতে থাকা মিঠুনকে আড়াল করে দলের রানের চাকা দ্রতই সচল করে দেন তিনি। জিম্বাবুয়ে ক্রমশ সরে যায় ম্যাচ থেকে। তাদের বোলরাও ভাল লাইন - লেংথে বল করতে পারেননি। কোনভাবেই চাপ দিতে পারেননি বাংলাদেশকে। পঞ্চম উইকেটে ৫৫ বলেই আসে ৬৪ রান। যাতে সোহানের অবদান ৩৯ আর মিঠুনের কেবল ১৫।

বারবার পরাস্ত হয়ে প্রতিপক্ষকে সুযোগ করে দেওয়া মিঠুন তার লড়াই থামান মাধভেরের স্পিনে। ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হওয়ার আগে ৫৭ বলে ৩০ করেছেন তিনি।

পরে আফিফ হোসেনকে নিয়ে ঝটপট ম্যাচ শেষ করে দেন সোহান।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ে পেয়েছিল সতর্ক শুরু। সিরিজে এই প্রথমবার তাদের ওপেনিং জুটি থেকে আসে ৩০ রানের বেশি। সাকিবের সোজা বলে সুইপ করতে গিয়ে এলবডব্লিউ হয়ে ফেরত যান টাডিওয়ানশে মারুমানি। নবম ওভারে দলের ৩৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।

সিরিজে দারুণ ছন্দে থাকা কিপার ব্যাটসম্যান চাকাভাকে এদিন ওপেন করতে পাঠানো হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের মূল্য তিনি দিয়েছেন দারুণভাবে।

দ্বিতীয় উইকেটেও ব্র্যান্ডন টেইলরকে নিয়ে অনায়াসে এগুচ্ছিলেন তিনি। আগের ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনক আউটের শিকার হওয়া টেইলর এদিনও শুরুটা পান ভাল। বড় কিছুরই আভাস মেলে তাদের ব্যাটে।

কিন্তু শক্ত ভিতটা নষ্ট করার জন্য টেইলর এবার নিজেকে ছাড়া কাউকেই দুষতে পারবেন না। কোন বোলারই যখন তাদের বিপদে ফেলতে পারছেন না নিজেই নিলেন উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব।  ৪২ রানের জুটির পর মাহমুদউল্লাহর অতি নীরিহ এক বলে আয়েশি শটে ক্যাচ উঠিয়ে দেন মিড অফে।

বড় এই উইকেট পড়লেও চারে নেমে ডিওন মেয়ার্স বুঝতে দেননি একটুও। জমে যায় চাকাভা-মেয়ার্স জুটি। স্পিনারদের এক, দুই করে নিয়ে সামলে সাইফুদ্দিনকে পিটিয়ে রান এগিয়ে নেন মেয়ার্স-চাকাভা। এই জুটি বাংলাদেশের চিন্তার কারণই হয়ে যাচ্ছিল। মাহমুদউল্লাহর বলে শেষ পর্যন্ত ভাঙ্গে ৭১ রানের জুটি।

মাহমুদউল্লাহর ভেতরে ঢোকা এক ডেলিভারিতে দ্রুত রান বের করার চেষ্টায় স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন ৩৮ বলে ৩৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলা মেয়ার্স। খানিকপর মোস্তাফিজুর রহমানের নতুন স্পেলে পড়ে আরেক উইকেট। আগের ম্যাচে ফিফটি করা ওয়েসলি মাধভেরে মোস্তাফিজের কাটার পড়তে না পেরে সহজ ক্যাচ দেন শর্ট মিড অনে।

দারুণ খেলছিলেন চাকাভা। উইকেটে চারপাশেই দ্রুত রান বের করছিলে তিনি। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটা তিন অঙ্কের দিকেই এগুচ্ছিল। তাসকিন আহমেদের বলে সাংঘাতিক এক ভুলে ডুবলেন তিনি। স্টাম্প বরাবর ফুল লেংথের বল অদ্ভুত কায়দায় অনসাইডে খেলতে গিয়ে পরাস্ত হলেন, উপড়ে গেল তার স্টাম্প।

৯১ বলে ৭ চার, ১ ছক্কায় ৮৪ করে তিনি ফিরতে ব্যাকফুটে চলে যায় স্বাগতিকরা। ১৭২ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ায় চ্যালঞ্জিং পুঁজি পাওয়ার আশা ফিকে হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু রাজা ছিলেন, একাদশে ফেরা রায়ান বার্লও দাঁড়িয়ে গেলেন। তাদের ইতিবাচক অ্যাপ্রোচের সঙ্গে বাংলাদেশের আলগা বোলিং মিলে গেলে ঘুরে যায় গল্প। শেষ ১০ ওভারেই আসে ৯৪ রান!   রাজা থিতু হতে সময় নিয়েছিলেন বেশ খানিকটা। এক পর্যায়ে ৬ রান করেছিলেন ২১ বলে। কিন্তু সব পুষিয়ে পরে ৪৯ বলে তুলে নেন ফিফটি। ৪৮তম ওভারে গিয়ে আউট হওয়ার আগে করেছেন ৫৪ বলে ৫৭ রান।

৬ষ্ঠ উইকেটে বার্লের সঙ্গে আসে তার ১১২ রানের জুটি। স্পিনারদের বল রাজা সামলেছেন দারুণভাবে। পেসারদের বলে রান বাড়ানো হয়েছে সহজ। লম্বা সময় পর ফিরে আগের ম্যাচে একটু জড়তা ছিল তার ব্যাটে। সব কাটিয়ে আজ মারলেন ৭ চার আর সাকিবকে বিশাল এক ছয়।

বার্লের ইনিংসও অদ্ভুত বৈপরীত্যে ভরা। প্রথম ১২ রান করতে লেগেছিল ২৫ বল। অথচ এরপর আউট হওয়ার সময় তার নামের পাশে লেখা থাকল ৪৩ বলে ৫৯!  অর্থাৎ পরের ১৮ বলেই তুলেছেন ৪৭। যার বেশিরভাগটাই সাইফুদ্দিনকে পিটিয়ে। ৪ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কা মেরেছেন তিনি।

৪৭তম ওভারেই দুই ছক্কায় তুলে নেন ২২ রান। আউট হয়েছেন সাইফুদ্দিনের বলেই। ফ্লিক করে এক ছয়ের পর সোজা আরেকটি ছক্কা মারার চেষ্টায় ধরা পড়েন বাউন্ডারি লাইনে। পুরো ম্যাচে বাজে বল করা সাইফুদ্দিন স্লগ ওভারে ব্যাটসম্যানদের দ্রুত রান তোলার তাড়ায় পেয়ে যান আরও দুই উইকেট। ডোনাল্ড টিরিপানো আর টেন্ডাই চাতারা তার বলে মারতে গিয়ে হন বোল্ড। টপাটপ উইকেট পড়তে থাকায় শেষ দুই ওভারে আসে কেবল ১০ রান।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ৮ ওভারে ৮৭ রান বিলিয়ে সাইফুদ্দিনই সবচেয়ে খরুচে। তাসকিনকে পাওয়া যায়নি সেরা ছন্দে। সাকিব ভাল করলেও একাদশে ফেরা মোস্তাফিজের ধার দেখা যায়নি সেভাবে। বরং সবচেয়ে ভাল বল করেছেন দুইশোতম ওয়ানডে খেলতে নামা মাহমুউল্লাহ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

জিম্বাবুয়ে: ৪৯.৩ ওভারে ২৯৮ (চাকাভা ৮৪, মারুমানি ৮, টেইলর ২৮, মেয়ার্স ৩৪, মাধভেরে ৩, রাজা  ৫৪, বার্ল  ৫৯, জঙ্গুই ৪* , টিরিপানো ০, চাতারা ১, মুজারাবানি ০  ; তাসকিন , সাইফুদ্দিন ৩/৮৭ ,  মোস্তাফিজ ৩/৫৭, মাহমুদউল্লাহ ২/৪৫,  সাকিব ১/৪৬, মোসাদ্দেক ০/১৩)

বাংলাদেশ: ৪৮ ওভারে ৩০২/৫    (লিটন ৩২, তামিম ১১২, সাকিব ৩০, মিঠুন ৩০,   মাহমুদউল্লাহ ০,  নুরুল ৪৫* , আফিফ  ২৬*;  মুজারাবানি ০/৪৩ , চাতারা ০/৫৬, জঙ্গুই ১/৪৬, টিরিপানো ২/৬১, মাধভেরে ২/৪৫, রাজা ০/২৩,  বার্ল ০/২৫)

ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তামিম ইকবাল।

সিরিজ: বাংলাদেশ ৩-০ তে জয়ী।

ম্যান অব দ্য সিরিজ: সাকিব আল হাসান। 

Comments

The Daily Star  | English

US bomber jets leave UK base; Iran launches 'Fattah-1 missiles' towards Israel

Israel and Iran attacked each other for a sixth straight day on Wednesday, and Israeli air power reigns over Iran, but needs US for deeper impact

10h ago