নিউজিল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে বাংলাদেশের 'প্রথম'

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

নিউজিল্যান্ডকে তাদের ইতিহাসের যৌথ সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে দিয়ে কাজটা অনেকখানি এগিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। মন্থর ও টার্নিং উইকেটে ব্যাট হাতে স্বাগতিকরা নিজেরাও ভুগল। কিন্তু লক্ষ্য একেবারেই ছোট হওয়ায় ধীরেসুস্থে খেলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল তারা।

বুধবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এই সংস্করণে কিউইদের বিপক্ষে এটাই টাইগারদের প্রথম জয়।

পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৬.৫ ওভারে ৬০ রানে অলআউট হয় টম ল্যাথামের নেতৃত্বাধীন সফরকারীরা। জবাবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল ৩০ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে ৬২ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে। ব্যাটে-বলে অবদান রেখে ম্যাচসেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান।

নিউজিল্যান্ডকে আটকে দিতে বাংলাদেশের সব বোলারই রাখেন দারুণ ভূমিকা। সবশেষ অস্ট্রেলিয়া সিরিজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সহায়ক উইকেটে মোস্তাফিজুর রহমান ১৩ রানে নেন ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট শিকার করেন সাকিব, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও নাসুম আহমেদ। বাকি উইকেটটি দখল করেন শেখ মেহেদী হাসান।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

লক্ষ্য তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারেই নাঈম শেখ বিদায় নেন। তাকে শর্ট কভারে হেনরি নিকোলসের ক্যাচ বানিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম বলেই উইকেটের স্বাদ নেন অভিষিক্ত কোল ম্যাককনকি। টিকতে পারেননি একাদশে ফেরা আরেক ওপেনার লিটন দাসও। এজাজ প্যাটেলের বলে স্টাম্পড হন তিনি।

নাঈম ও লিটন দুজনেরই সংগ্রহ ১ রান করে। তাতে তৃতীয় ওভারে ৭ রানে পতন হয় বাংলাদেশের ২ উইকেটের। পাওয়ার প্লেতে রান তোলার গতি ছিল মন্থর। ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ২২ রান।

ব্যাটসম্যানদের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সাকিব ছিল কিছুটা ভিন্ন মেজাজে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উইকেটে থাকতে পারেননি তিনি। অভিষিক্ত স্পিন অলরাউন্ডার রাচিন রবীন্দ্রর বলে উইকেটের পেছনে ল্যাথামের তালুবন্দি হন তিনি। সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৩৩ বলে ২৫ রান।

মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে সাকিবের তৃতীয় জুটি ছিল ৩০ রানের। এরপর আর কোনো বিপদ ঘটেনি। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন একাদশে ফেরা মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। নুরুল হাসান উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করায় ফিল্ডার হিসেবে মাঠে থাকা মুশফিক অপরাজিত থাকেন ২৬ বলে ১৬ রানে। মাহমুদউল্লাহ করেন ২২ বলে অপরাজিত ১৪ রান।

এর আগে টি-টোয়েন্টিতে তাদের যৌথ সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহে থামে নিউজিল্যান্ড। আগের নজিরও ছিল বাংলাদেশের মাটিতে। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও তারা ৬০ রানে অলআউট হয়েছিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই টি-টোয়েন্টিতে কোনো দলের সর্বনিম্ন রান।

প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই আসে সাফল্য। রবীন্দ্র শেখ মেহেদীর আচমকা লাফানো বল বুঝতেই পারেননি। ক্যাচ তুলে দেন বোলারের হাতে।

এক ওভার বিরতির পর তৃতীয় ওভারে আরেক উইকেট। উইল ইয়ং সাকিবের হুট করে নিচু হয়ে যাওয়া বল টেনে হন বোল্ড। চতুর্থ ওভারে এসে নাসুম আহমেদ হানেন জোড়া আঘাত।

স্লগ সুইপ করার সাহস দেখিয়ে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ধরা দেন ডিপ মিড উইকেটে। দুই বল পরই টম ব্লান্ডেল নাসুমের সোজা বলে হন বোল্ড। মাত্র ৯ রানেই পড়ে যায় নিউজিল্যান্ডের ৪ উইকেট। ধুঁকতে থাকা কিউইরা পাওয়ার প্লের ৬ ওভার ওই ৪ উইকেট হারিয়ে আনতে পারে মাত্র ১৭ রান।

এরপর জুটি বাঁধেন দলের বড় দুই ভরসা ল্যাথাম আর নিকোলস। উইকেটের ভাষা বুঝে নিয়ে এক-দুই করে আগাতে থাকেন তারা। থিতু হয়ে গিয়েছিল দুজন। জুটিটা বড় হওয়ার আভাস দিতেই ফের বিপদ।

সাইফউদ্দিনের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ফ্লিকের মতো খেলতে গিয়ে টাইমিং করতে পারেননি কিউই অধিনায়ক। ২৫ বলে ১৮ করা ল্যাথামের ক্যাচ যায় স্কয়ার লেগে।

ক্রিজে এসে অভিষিক্ত ম্যাককনকি টিকেছেন মাত্র ৩ বল। সাকিবের বলে ক্যাচ দেন মুশফিকুর রহিমের হাতে। পরের ওভারে আশা-ভরসা হয়ে থাকা নিকোলস সাইফউদ্দিনের বলে ধরা দেন মিড অনে। মোস্তাফিজের স্লোয়ারে এজাজ বোল্ড হওয়ার পর ডগ ব্রেসওয়েল ফেরেন ক্যাচ দিয়ে। তাতে ৫৫ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে বসে নিউজিল্যান্ড।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

এরপর শেষ দুই ব্যাটসম্যান যোগ করতে পারেন আরও ৮ রান। ইনিংসটা মুড়ে দেন মোস্তাফিজই। মিড অন থেকে পেছন দিকে দৌড়ে জ্যাকব ডাফির দুর্দান্ত ক্যাচ নেন সাইফউদ্দিন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল্যান্ড: ১৬.৫ ওভারে ৬০ (ব্লান্ডেল  ২, রবীন্দ্র ০, ইয়ং ৫, গ্র্যান্ডহোম ০, ল্যাথাম ১৮, নিকোলস ১৭, ম্যাককনকি ০, ব্রেসওয়েল ৫, এজাজ ৩, টিকনার ৩*, ডাফি ৩; শেখ মেহেদী ১/১৫, নাসুম ২/৫, সাকিব ২/১০, মোস্তাফিজ ৩/১২, মাহমুদউল্লাহ ০/৮, সাইফউদ্দিন ২/৭ )

বাংলাদেশ: ১৫ ওভারে ৬২/৩ (নাঈম ১, লিটন ১, সাকিব ২৫, মুশফিক ১৬*, মাহমুদউল্লাহ ১৪*; এজাজ ১/৭, ম্যাককনকি ১/১৯, রবীন্দ্র ১/২১, ডাফি ০/৩, ব্রেসওয়েল ০/৩, টিকনার ০/৯)।

ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: বাংলাদেশ পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।

ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান।

Comments

The Daily Star  | English

Cops get whole set of new uniforms

The Inspector General of Police (IGP) has issued a comprehensive new dress code titled Police Dress Rules, 2025, detailing rank-wise uniforms and accessories for all Bangladesh Police members.

3h ago