'বঙ্গবন্ধু আশ্বস্ত করেছিলেন যে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই'

পুরো জাতি আজ (বৃহস্পতিবার) যখন স্বাধীনতার ৫০তম বছর উদযাপন করছে, তখন খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি করেছে, সেদিকে ফিরে তাকানো যেতে পারে। এই সময়ে, ফুটবলকে ছাড়িয়ে ক্রিকেট দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলায় পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর এই খেলাটির পুনর্গঠনে সহায়ক শক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন জাতীয় দলের প্রথম অধিনায়ক রকিবুল হাসান। দ্য ডেইলি স্টারের মাজহার উদ্দিনের সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি কথা বলেছেন ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রা এবং এর বর্তমান অবস্থান নিয়ে। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশগুলো তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

দ্য ডেইলি স্টার: স্বাধীনতার ৫০ বছরে পেছনে ফিরে তাকালে, ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?

রকিবুল হাসান: আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আগে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। তবে, আমি উল্লেখ করতে চাই যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটি আসলে ৪৮তম বছর। কারণ স্বাধীনতার পরের দুই বছর আমাদেরকে ক্রিকেট প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করতে হয়েছিল। তখন গুজব ছিল যে ক্রিকেট একটি ব্যয়বহুল খেলা এবং আমাদের এই খেলাটিকে সমর্থন দেওয়া উচিত নয়।

আমরা স্বাধীনতার পর ক্রিকেট শুরু করার ব্যাপারে উচ্চাশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। কারণ আমরা নিজেদের দেশ পেয়েছিলাম। স্পষ্টতই, মুক্তিযুদ্ধের পরে সবকিছু স্থবির হয়ে গিয়েছিল এবং একই সময়ে, খেলাধুলার সামগ্রীর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।

তখন আমরা বুঝলাম আর যে আর কোনো উপায় নেই। তাই আমি উদ্যোগ নিয়ে তানভীর মাজহার তান্না ও শেখ কামালকে সঙ্গে করে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করি।

তার আগে প্রায় পঞ্চাশ জন ক্রিকেটার জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং স্মারকলিপি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কার্যালয়ে যাওয়ার আগে আমাদের ক্রীড়া সরঞ্জাম পুড়িয়ে ফেলে। আমরা প্রেসক্লাবের দিকে যাওয়ার সময় কয়েক জন লোক এসে শেখ কামালের সঙ্গে কথা বলে। তারা আমাদের জানিয়েছিল, বঙ্গবন্ধু সব শুনেছেন এবং আশ্বস্ত করেছেন যে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

আমি এটা স্মরণ করে অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করছি যে বঙ্গবন্ধু ৭২ ঘন্টার মধ্যে সকল সমস্যার সমাধান করেছিলেন এবং তারপর স্বাধীনতার দুই বছর পর বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখান থেকে এখন আমরা এই অবস্থানে পৌঁছেছি।

স্টার: ৫০ বছর পর বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন কোথায়?

রকিবুল: স্বাধীনতার পর সারা দেশে জেলা পর্যায়ে ক্রিকেট শুরু হয়েছিল। পিচগুলো স্পোর্টিং ছিল এবং সত্যিকারের বাউন্স ছিল। ক্লাব পর্যায়ের ক্রিকেট ছিল খুবই প্রতিযোগিতামূলক। আমাদের ক্রিকেট অনেক দূর এগিয়েছে এবং এখন আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় বলে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তাল মেলানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অবশ্যই, পিচ একটি বড় ভূমিকা পালন করে। অথচ আপনি বিশ্বজুড়ে ফাস্ট বোলারদের আধিপত্য যখন দেখতে পাচ্ছেন, তখন আমাদের বোলারদের প্রতিপক্ষকে হুমকিতে ফেলতে সংগ্রাম করতে হয়। আমাদের সারা দেশের পিচের মান উন্নত করতে হবে। প্রকৃত সমস্যাগুলোকে ঢেকে রাখার চেষ্টা এবং কেবল র‌্যাঙ্কিং ও স্বল্পমেয়াদী অর্জন নিয়ে চিন্তা করার পরিবর্তে আসল সমস্যাগুলোর সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ।

স্টার: আপনার মতে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অর্জন কী?

রকিবুল: আমি জানি না অন্যরা কী ভাবছে। তবে আমরা আমাদের পূর্বসূরিদের অবদান ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখাই। স্বাধীনতার পরের ওই লড়াইয়ের দিনগুলো ছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট কখনোই আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে পারত না।

১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয় এবং ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ অভিষেকে পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় অবশ্যই সাফল্যের শীর্ষ পর্যায়ে থাকবে। তারপর রয়েছে ২০০৭ সালে পাওয়া জয়গুলো (বিশ্বকাপে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে), ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছানো এবং অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়। নারী ক্রিকেটও অনেক দূর এগিয়েছে এবং তারা এশিয়া কাপ জিতেছে। আর যুবাদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের কথা কে ভুলতে পারে?

স্টার: আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কোথায় দেখতে চান?

রকিবুল: আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বিশ্ব ক্রিকেটে একটি পরাশক্তি হিসেবে দেখতে চাই। সব সংস্করণের সেরা তিনে দেখতে চাই। আমি ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামকে উদ্ধৃত করে বলতে চাই, 'স্বপ্ন তা নয় যা আপনি ঘুমিয়ে দেখেন, এটি এমন কিছু যা আপনাকে ঘুমাতে দেয় না।' তাই বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ভবিষ্যতের জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে, একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
special security for foreign investors in Bangladesh

Police, Bida launch special security measures for foreign investors

Held meeting with officials of foreign companies, introduced dedicated emergency contact line

3h ago