বন্ধু হলের বর্ণনায় যেমন ছিল ওয়ার্নের শেষ দিন

শুক্রবারের দিনটা ছিল স্বাভাবিক, দিনটা ছিল ফুরফুরে। বিখ্যাত বন্ধু শেন ওয়ার্নের সঙ্গে আনন্দেই থাকার কথা ছিল টম হলের। কিন্তু আকস্মিকভাবে দিনের শেষভাগ হয়ে যায় ভয়াবহ, বিপর্যস্ত। যার কোনো আভাসই ছিল না দিনের শুরুতে। থাইল্যান্ডের কোহ সামুইয়ের ভিলায় ওয়ার্নের জীবনের শেষ দিনটা উঠে এসেছে হলের বর্ণনায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনাভিত্তিক দ্য স্পোর্টিং নিউজ ওয়েবসাইটের প্রধান নির্বাহী হল। ওয়ার্নের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব দীর্ঘ ১৫ বছরের। জীবনের শেষ দিনটিতেও আরও তিনজনের সঙ্গে ওয়ার্নের পাশে ছিলেন তিনি।
সেদিন ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্নের প্রথম জিজ্ঞাসা ছিল, 'অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি টেস্টটা কোথায় দেখা যাবে?' আজ টেস্টের শেষ দিনে এসে মনে হচ্ছে সেটা কত দূরের ঘটনা!
হল জানান, 'ক্রিকেট, অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল লিগ, গলফ আর পরিবার ছিল ওয়ার্নের সব কিছু জুড়ে। এসবের বাইরে থাকতে পারত না ওয়ার্নি।'
হল জানান, পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার খেলা কিছু দূর গড়ানোর পর হঠাৎ লাফিয়ে উঠেন ওয়ার্ন। বলেন, 'বন্ধু, আমি তোমার জন্য উপহার নিয়ে আসছি।' বলেই দ্রুত ছুটে যান নিজের রুমে।
হল ভাবছিলেন, সেভেন জিরো এইট জিন অথবা কোনো বই কিংবা কোনো টি-শার্ট নিয়ে আসবেন। কিন্তু ওয়ার্ন ফেরেন হাতভর্তি পোশাক নিয়ে, 'সেসব দেখে নিও আর গ্যাজ (ওয়ার্নের অন্য দুই বন্ধু) নড়েচড়ে ওঠে। নিও ক্যামেরা বের করে।'
'শেন আমার সঙ্গে গত বছর স্পোর্টিং নিউজে কাজ করেছে। এই কারণে সে আমাকে ২০০৫ অ্যাশেজের জাম্পার, ২০০৮ আইপিএলের জার্সি, একটি ওয়ানডে ম্যাচের জার্সি ও ক্যাপ দিল।'

বন্ধুকে অমূল্য স্মারকগুলো দিয়ে ওয়ার্ন বলেন, এসব যেন স্পোর্টিং নিউজের অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের অফিসে রাখা হয়।
এরপর আইপিএলের প্রথম মৌসুম নিয়ে অনেক গল্প বেরিয়ে আসে। অনেক অচেনা খেলোয়াড়কে নিয়ে কীভাবে ওয়ার্ন রাজস্থান রয়্যালস দলটাকে এক সুতোয় বাঁধলেন সেসব গল্প। রাজস্থান প্রথম ম্যাচটা বাজেভাবে হারার পর ওয়ার্ন মনোজ বাদালেকে (ফ্র্যাঞ্চাইজিটির অন্যতম মালিক) বলেছিলেন, 'ঘাবড়ে যেও না বন্ধু, আমরা ফিরব।'

শুধু ফিরে আসাই নয়, সেবার ওয়ার্নের অধিনায়কত্বের মুন্সিয়ানায় আইপিএল ট্রফিও ঘুরে তুলেছিল রাজস্থান।
ওয়ার্ন ও তার বন্ধুরা মেতে ওঠেন তুমুল আড্ডায়। তাস খেলা, মেক্সিকোয় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা থেকে আইপিএলের আগামী মৌসুম- নানান কিছু ছিল তাদের আলোচনায়। সেই আনন্দ আড্ডা যে কয়েক ঘন্টার মধ্যে চরম বিষাদে রূপ নেবে তা কে আর টের পেয়ছিল!
আড্ডার পর তারা খাওয়া-দাওয়া করার সিদ্ধান্ত নেন। হলের বর্ণনায় উঠে এসেছে তাদের শেষ খাবারের গল্প, 'শেনের সঙ্গে অনেক বড় জায়গায় খেয়েছি। তবে সেদিন আমরা এক প্লেট ভেজিমাইট অন টোস্ট (অস্ট্রেলিয়ান খাবার) খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।'
খাবারের স্বাদে আপ্লুত ওয়ার্ন বলে ওঠেন, 'বাটার দেওয়া ভেজিমাইটের কোনো তুলনা নেই।'
হল আবেগাক্রান্ত হয়ে লেখেন, 'এই খাবারটাই তার শেষ খাবার হয়ে থাকল। খাবার শেষে আমি উঠে গেলাম। ও তার সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতে রুমে গেল।'
সব কিছুই চলছে স্বাভাবিক। অসুস্থতার কোনো আভাসই নেই। হলরা কি কিছুই টের পাননি? তিনি জানান, ওয়ার্নের কদিন আগে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার ব্যাপারটা তারা জানতেন না। তবে একজন বন্ধুকে সেদিন হালকা বুকে ব্যথার কথা বলেছিলেন, 'সে এক বন্ধুকে হালকা বুকে ব্যথা ও নিশ্বাসের সমস্যার কথা বলছিল।'
কিন্তু বাড়তি ওজনের জন্য এমনটা হয়ে থাকতে পারে বলে তখন সেটাকে আর গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
Comments