এমন উইকেটে ব্যাটসম্যানদের বিচার করাই কঠিন

মিরপুরে ব্যাটসম্যানদের ভোগান্তি ছিল নিয়মিত দৃশ্য। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

চতুর্থ ম্যাচ শেষে ড্যানিয়েল ক্রিস্টিয়ান বলছিলেন মিরপুরে ১২০ রান মানে অন্য উইকেটে সেটা ১৯০ রানের সমান। তার মতে এমন কঠিন উইকেট নেই দুনিয়ার আর কোথাও। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও বলেছিলেন শেষ ম্যাচের উইকেট ছিল বড়জোর ১২০ রানের। এমন দুরূহ কন্ডিশনে কোন ব্যাটসম্যান রান না পেলে তাকে মুণ্ডপাত করার বাস্তবতা কোথায়?

ঘরের মাঠে অতি মন্থর ও টার্নিং উইকেট বানিয়ে যে ফল প্রত্যাশা করেছিল বাংলাদেশ,  সেটাই এসেছে। প্রথম তিন ম্যাচেই নিশ্চিত হয়েছে সিরিজ। চতুর্থ ম্যাচে এসে পা হড়কালেও শেষটা আবার রাঙানোর সুযোগ থাকছে। আর প্রথম তিন ধাক্কায় বেসামাল অজিরা কিছুটা তাল পেয়ে ব্যবধানটা অন্তত ৩-২ করতে চাইবে নিশ্চিতভাবে।

সোমবার মিরপুর  মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের শেষ ম্যাচের উইকেট নাটকীয় বদলের সম্ভাবনা কম। আরেকটি ঘূর্ণি উইকেটে দুদলের ব্যাটসম্যানদের খাবি খাওয়ার দৃশ্য দেখতে প্রস্তুত হতে পারেন দর্শকরা। কন্ডিশনের বাস্তবতার কারণেই ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে বিনোদন পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

গোটা সিরিজকে টি-টোয়েন্টির জন্য একদম আদর্শ বলার উপায় নেই। দেখা যায়নি বড় রান। সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর কেবল ১৩১। হালের টি-টোয়েন্টিতে যেটা বেশ মামুলি। চার ম্যাচের মধ্যে দুই দলের হয়ে এসেছে মাত্র দুই ফিফটি। তাও মন্থর গতিতে। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের ১০৪ রান তাড়া করতে গিয়ে ক্রিস্টিয়ান সাকিব আল হাসানের এক ওভারে মেরে দিয়েছিলেন ৫ ছয়। কিন্তু ৩০ রানের ওভারের পরও ম্যাচ জিততে ১৯ ওভার ব্যাট করতে হয়েছে অজিদের। এই ছবিই বুঝিয়ে দেয় মিরপুরের বাইশ গজের অবস্থা।

স্পিনারদের বল তো বিপদজনক হচ্ছেই, পেসাররা স্লোয়ার আর নাকাল করলে খেলাই যাচ্ছে না। মূল কারণ বল উইকেটে হিট করার পর হালকা থেমে যাচ্ছে তারপর টার্ন করে বেরিয়ে যাচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে লাফিয়ে উঠছে, কখনো আচমকা নিচু হয়ে যাচ্ছে।

এতরকমের ঘটনা ঘটার মাঝে ব্যাটসম্যানদের দ্বিধায় পড়াটা খুব স্বাভাবিক। যেখানে রানের খেলা টি-টোয়েন্টিতে টিকে থাকার বিলাসিতাও করার উপায় নেই।

চার ম্যাচেই দেখা গেছে, পাওয়ার প্লের মধ্যেই রান আনা বেশি কঠিন। এই উইকেটে খুব সহজে বাউন্ডারি মারা যায় না। রান বাড়াতে হয় এক, দুই করে। পাওয়ার প্লের মধ্যে আবার ফিল্ডাররা থাকেন বৃত্তের ভেতর। ওপেনারদের অবস্থা তাই হয় নাভিশ্বাস উঠার মতো!

যেসব ব্যাটসম্যান একটু মেরে খেলতে পছন্দ করেন তাদের জন্যও হয়েছে বিপদ। দ্রুত রান না আসার চাপ তাদের করে ফেলছে অস্থির। তালগোল পাকিয়ে ভুল করছেন ক্রমাগত। সৌম্য সরকার, শামীম পাটোয়ারি, আলেক্স ক্যারিদের বেলায় দেখা গেছে এই সমস্যা। অবশ্য আরেকটু স্মার্ট ক্রিকেট খেললে রান বেশি করার সুযোগ ছিল। সিরিজজুড়ে আফিফ হোসেনের ব্যাটে স্মার্ট ক্রিকেটের সাবলীল ভাষা দেখা গেছে। বাদবাকি সবাই খেলেছেন চরম অস্বস্তি নিয়ে।

উইকেটের পরিস্থিতি ছিল এমন ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যানও এখানে খেলে হারিয়েছেন তাল। এই সিরিজে ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স বিচার করা হবে একটু কঠোর।

সিরিজে চার ম্যাচই একই একাদশ খেলিয়েছে বাংলাদেশ। হাতে যোগ্য বিকল্প কম থাকায় বদলের দিকে বাংলাদেশ যাবে কিনা সেটা দেখার বিষয়। হারতে থাকায় অস্ট্রেলিয়া ঘন ঘন একাদশে এনেছে পরিবর্তন। প্রথম তিন ম্যাচে তারা ভরসা করেছিল পেসারদের উপরই। তিন পেসার দিয়ে বল করিয়েছিল বেশিরভাগ ওভার। সেটা হয়েছে বুমেরাং।

চার নম্বর ম্যাচে এসে কৌশল বদলে স্পিন শক্তি বাড়ায়। স্পিনাররা করেন ১২ ওভার। তাতেই মিলে ভালো ফল। শনিবারের ওই ম্যাচে ১২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা মিচেল সোয়েপসন জানিয়েছেন, কন্ডিশন বিচারে তিন স্পিনারের কৌশলটা তাদের কাজে লেগেছে। এই কম্বিনেশনেই তাই শেষ বেলায় দেখা যাওয়ার কথা অস্ট্রেলিয়াকে।

মোস্তাফিজুর রহমানের উপরই আলোটা বেশি থাকার কথা। চার ম্যাচে মোট ১৬ ওভার বল করে তিনি দিয়েছেন কেবল ৫৭ রান, উইকেট নিয়েছেন ৭টি। টি-টোয়েন্টি এই সিরিজে ওভারপ্রতি খরচ করেছেন মাত্র ৩.৫৬ রান! মিরপুরের উইকেট অবশ্য মোস্তাফিজের জন্য ছিল আদর্শ। একের পর এক ডট বল করে গেছেন। কাটারে নাজেহাল করেছেন ব্যাটসম্যানদের। বল উইকেটে পড়ে থেমে টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়ায় ব্যাটসম্যানদের খেলা ছিল কঠিন। শেষ ম্যাচেও এসব দৃশ্য দেখা যাওয়ার কথা।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus leaves Dhaka for Ctg on first visit as chief adviser

Prof Yunus departed Hazrat Shahjalal International Airport at 8:45am

33m ago