বিপদ থেকে বাঁচিয়ে ভারতকে খেলায় ফেরালেন পূজারা-রাহানে

দুজনেই ছিলেন রান খরায়। ভারতের পরীক্ষিত সৈনিক হলেও চেতশ্বর পূজারা আর আজিঙ্কা রাহানের একাদশে জায়গা পাওয়া নিয়েও কিছু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। এমন অবস্থায় দলের চরম বিপদে জুটি বেধে ঠিকই কাণ্ডারি হলেন তারা। এই দুজনের ব্যাটে লর্ডস টেস্টে লড়াই বাঁচিয়ে রাখল ভারত।
রোববার আলোকস্বল্পতায় চতুর্থ দিনের খেলা আগেভাগে শেষ হওয়ার আগে ভারত-ইংল্যান্ড দুই দলই আছে সমান তালে। হাতে শেষ ৪ উইকেট নিয়ে ভারতের লিড ১৫৪ রানের।
ব্যাট করার জন্য ভীষণ কঠিন পরিস্থিতিতে ভারতের স্কোরকার্ড হতে পারত আরও হতশ্রী। চতুর্থ উইকেটে রাহানে-পূজারার শতরানের জুটি তা হতে দেয়নি। ৬ উইকেটে ১৮১ রান নিয়ে দিন শেষ করা ভারত অবশ্য পঞ্চম দিনে তাকিয়ে থাকবে ক্রিজে থাকা একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান রিশভ পান্তের দিকে।
দ্বিতীয় ইনিংসে এখনো পর্যন্ত দলের সেরা রাহানে ১৪৬ বলে আউট হয়েছেন ৬১ করে। চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তায় ২০৬ বলে ৪৫ করে ফেরেন পূজারা।
আগের দিন ইংল্যান্ডকে গুটিয়ে যাওয়ার পর ২৭ রানে পিছিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ভারত। প্রথম ইনিংসে দুই ওপেনার দেখিয়েছিলেন ঝলক, এবার তারা হন ব্যর্থ। এবারও অতি সতর্ক পথে শুরু করেন তারা। প্রথম ঘন্টা পারও করে দিয়েছিলেন। তবে স্কোরবোর্ডে তখনও খুব বেশি রান নেই। দশম ওভারে দলের ১৮ রানে মার্ক উডের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন লোকেশ রাহুল। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান এবার করেন কেবল ৫ রান।
খানিক পর রোহিত শর্মাকে হারায় ভারত। উডকে পুল করতে গিয়ে ২১ করা রোহিত ধরা পড়েন ডিপ স্কয়ার লেগে।
অধিনায়ক বিরাট কোহলি আরও একবার শুরুটা পেয়েও ইনিংস টানতে পারেননি। স্যাম কারানের বুদ্ধিদীপ্ত এক ডেলিভারিতে উইকেটে পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ২০ করা ভারত অধিনায়ক।
৫৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া ভারত তখন ভরসা হিসেবে পায় পূজারা-রাহানেকে। দুজনেই রান করার চেয়ে টিকে থাকায় দেন মন। কঠিন সময় পার হতে থাকে ধীরে ধীরে। সময় নিয়ে থিতু হয়ে পরে তারা বাড়াতে থাকেন রান।
১০ ইনিংস থেকে ফিফটির দেখা না পাওয়া পূজারা প্রমাণ করতে থাকেন নিজেকে। ৭ ইনিংস থেকে রানের খোঁজে থাকা রাহানেও তাই। দুই দুজনের ব্যাটে তিন অঙ্কের লিড ছাড়ায় ভারত।
এবারও যদিও ফিফটি পাওয়া হয়নি পূজারার। কাজটা অসম্পূর্ণ রেখে ফিরলেও ৪৫ রানের ইনিংসের ম্যাচের প্রেক্ষিতে অনেক মূল্য থাকার কথা। শতরানের জুটির পর উডই এসে কাবু করেন পূজারাকে। আচমকা বাড়তি বাউন্সের বলে গ্লাভস লাগিয়ে স্লিলে ধরা দেন ভারতের নাম্বার থ্রি।
ততক্ষণে ফিফটি তুলে রাহানে বড় কিছুরই আভাস দিচ্ছিলেন। স্কোরিং শটের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেটাই হয়ত ইতি টানে তার। অফ স্পিনার মঈন আলিকে কাট করতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।
এসব পরিস্থিতি আদর্শ ব্যাটসম্যান রবীন্দ্র জাদেজা। ইংল্যান্ড এসে শেষ দুই ইনিংসে সেই চাহিদাই মিটিয়েছিলেন। এবার পারেননি। অবশ্য কৃতিত্ব দিতে হবে মঈনকে। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে মাত্র ৩ রানে জাদেজাকে থামিয়ে ফের নাটাই নিজেদের দিকে নেন তিনি।
১৪ রানে অপরাজিত পান্ত, ৪ রান নিয়ে খেলা ইশান্তকে নিয়ে কতদূর যেতে পারবেন তার উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। ভারতের হাতে থাকা বাকি তিনজন মোহাম্মদ শামি, জাসপ্রিট বুমরাহ আর মোহাম্মদ সিরাজের উপর খুব বেশ রান আশা করা বাড়াবাড়ি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
(চতুর্থ দিন শেষে)
ভারত প্রথম ইনিংস: ৩৬৪
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৩৯১
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস: ৮২ ওভারে ১৮১/৬ (রাহুল ৫, রোহিত ২১, পূজারা ৪৫, কোহলি ২০, রাহানে ৬১, পান্ত ১৪*, জাদেজা ৩, ইশান্ত ৪* ; অ্যান্ডারসন ০/২৩, রবিনসন ০/২০, উড ৩/৪০, কারান ১/৩০, মঈন ২/৫২, রুট ০/৯)
Comments