লর্ডসে ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে ভারতের দুর্দান্ত জয় 

ছবি: আইসিসি

দিনের প্রথমভাগে নবম উইকেটে অবিশ্বাস্য এক জুটিতে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ শামি আর জাসপ্রিট বুমরাহ। তাতেই তেতে উঠার জ্বালানি পাওয়া ভারত বল হাতে হয়ে উঠল আরও দুর্দান্ত। ভারতের চার পেসারের সামনে জো রুটদের সব প্রতিরোধ ভেস্তে গেল। ভারত পেল দুর্দান্ত জয়। 

সোমবার লর্ডস টেস্টে রোমাঞ্চ ছড়ানো শেষ দিনের শেষ ঘন্টায় গিয়ে হয়েছে ফয়াসালা। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ভারত জিতে নিয়েছে ১৫১ রান। 

৬০ ওভারের মতন টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামা স্বাগতিকরা ৫১.৫ ওভারে অলআউট হয়ে যায় ১২০ রান। ইংলিশদের গুটিয়ে দিতে ৩২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ। ৩৩ রানে ৩ শিকার ধরেন বুমরাহ। ১৩ রানে ২ উইকেট নেন ইশান্ত শর্মা আর ১৩ রান দিয়ে ১ উইকেট পান শামি। 

 

এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে বিরাট কোহলির দল লিড নিল ১-০ ব্যবধানে। 

অথচ পঞ্চম দিনের শুরুতে খেলার নাটাই ভালোভাবেই ছিল ইংল্যান্ডের হাতে। ৪ উইকেট হাতে রেখে ১৫৪ রানে এগিয়ে দিন শুরুর পর শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান রিশভ পান্তকে হারাতে দেরি হয়নি। আর ৮ রান যোগ করেই তিনি বিদায় নেন। 

তখন ভারতের টেল এন্ডারদের ছেঁটে সহজ লক্ষ্য পাওয়ারই সম্ভাবনা ছিল ইংল্যান্ডের। কিন্তু টেল এন্ডাররা মিলেই বদলে দেন ম্যাচের চেহারা। ১৬ রান করে ইশান্ত আউট হলে ২০৯ রানে ৮ম উইকেট হারায় ভারত। কিন্তু বিস্ময়করভাবে আর উইকেটই পড়েনি। বুমরাহ-শামি বনে যান পুরো ব্যাটসম্যান। 

ইংল্যান্ডের পেসারদের গোলা সামলে টিকে যান ক্রিজে। শুধু টিকে থাকাই নয় আসতে থাকে রানও। কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা, কিছুটা প্রতিপক্ষের ভুল মিলিয়ে জমে যায় জুটি। এক পর্যায়ে গিয়ে ব্যাটসম্যানদের মতো অ্যাপ্রোচ দেখা যায় দুজনেরই। মঈন আলিকে চার-ছক্কায় উড়িয়ে শামি তুলে নেন ফিফটি। বুমরাহ সঙ্গ দেন দারুণভাবে। লাঞ্চের পরও আরও কিছু রান বাড়িয়ে জুটিতে ৮৯ তুলে অবিচ্ছিন্নই থেকে যান তারা। 

নিজেদের একদম নিরাপদ জায়গায় নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। ঘোষণাটা দিতে একটু দেরি হয়ে গেল কিনা তখন সেই প্রশ্ন চড়া হয়েছিল। কারণ ৬০ ওভার টিকে ইংল্যান্ডের ম্যাচটা বাঁচিয়ে ফেলা মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব। 

তবে বল হাতে নিয়ে শুরুতেই ভারতের জেতাই সম্ভব করে তুলেন ব্যাটিংয়ের দুই হিরো বুমরাহ-শামি। 

একদম তৃতীয় বলেই রোরি বার্নসকে তুলে নেন বুমরাহ। পরের ওভারে ডম সিবলিকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান শামি। ১ রানে ২ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডে দুই অঙ্কে যাওয়ার আগেই হারাতে পারত হাসিব হামিদকেও। 

বুমরাহর বলে স্লিপে তার ক্যাচ ছেড়ে দেন রোহিত শর্মা। অধিনায়ক জো রুট আরেক পাশে একাই খেলে যাচ্ছিলেন। তাকে কিছুটা সঙ্গ দেওয়া হামিদ জীবন পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি। 

৯ রান করে এই তরুণ কাবু হন ইশান্ত শর্মার স্যুয়িংয়ে। এলবিডব্লিউতে তাকে তুলে নেওয়া ইশান্ত খানিক পরই একই কায়দায় শিকার করেন জনি বেয়ারস্টোকেও। 

এরপর রুটকে স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে বুমরাহ উল্লাসে মাতলে ম্যাচ চলে আসে ভারতের দিকে।  ৬৭ রানে ৫ উইকেট হারানো স্বাগতিকদের ভরসা তখন জস বাটলার। 

এই কিপার ব্যাটসম্যানকেও দ্রুতই তুলে নেওয়া যেত। বুমরাহর বলে ০ রান তার ক্যাচ ফেলে দেন কোহলি। 

জীবন পাওয়া বাটলারই বাড়াতে থাকেন চিন্তা। মঈনকে নিয়ে গড়েন শক্ত প্রতিরোধ। ১৬ ওভারের বেশি টিকে থাকার পর এই প্রতিরোধ ভাঙ্গেন সিরাজ। তার বলে খোঁচা দিয়ে স্লিপে যায় মঈনের ক্যাচ। এবার মিস করেননি কোহলি। পরের বলেই স্যাম কারানকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান তিনি। 

বাটলার দৃঢ়তা দেখিয়েই যাচ্ছিলেন। ওলি রবিনসনকে নিয়ে টিকে যান আরও ১০ ওভার। রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে দারুণ এক ডেলিভারিতে রবিনসনকে বুমরাহ এলবিডব্লিউ করলে খুলে যায় বাধন। ভারতের গলার কাটা হয়ে থাকা বাটলারও হাল ছেড়ে দেন। সিরাজের  বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। জেমস অ্যান্ডারসনকে মুড়ে শেষটাও করেন সিরাজ। 
সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত প্রথম ইনিংস: ৩৬৪

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৩৯১

ভারত দ্বিতীয় ইনিংস: ১০৯.৩ ওভারে ২৯৮/৮ (ইনিংস ঘোষণা)  (রাহুল ৫, রোহিত ২১, পূজারা ৪৫, কোহলি ২০, রাহানে ৬১, পান্ত ২২, জাদেজা ৩, ইশান্ত ১৬, শামি ৫৬,  বুমরাহ ৩৪ ;  অ্যান্ডারসন ০/৫৩, রবিনসন ২/৪৫, উড ৩/৫১, কারান ১/৪২, মঈন ২/৮৪, রুট ০/৯)

ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: ৫১.৫ ওভারে ১২০  (বার্নস ০, সিবলি ০, হাসিব ৯, রুট ৩৩, বেয়ারস্টো ২, বাটলার ২৫, মঈন ১৩, কারান ০, রবিনসন ৯, উড ০*, অ্যান্ডারসন ০;  বুমরাহ ৩/৩৩, শামি ১/১৩, জাদেজা ০/৫, সিরাজ ৪/৩২, ইশান্ত ২/১৩) 

ফল: ভারত ১৫১ রানে জয়ী। 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: লোকেশ রাহুল। 

সিরিজ: ৫ ম্যাচ টেস্ট সিরিজ ভারত ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে। 

Comments

The Daily Star  | English

Israel lifts air raid warnings, says intercepted 'most' Iran missiles

Israel says conducted 'extensive strikes' in Iran's west, while explosions near Tel Aviv, sirens blare across Israel; smoke rises after explosion in Iran’s Tabriz

11h ago