সোমারের বীরত্বের পরও টাইব্রেকার জিতে সেমিতে স্পেন

কিছু বুঝে উঠার আগেই দুর্ভাগ্যজনক গোলে পিছিয়ে পড়েছিল সুইজারল্যান্ড। দ্বিতীয়ার্ধে জেরদান শাকিরি সেই গোল শোধ করার পরই আবার লাল কার্ডের ধাক্কা। এরপর ১০ জন নিয়েও নির্ধারিত সময়ের ১৩ আর অতিরিক্ত সময়ের ৩০ মিনিট পার করে দেয় তারা। স্পেনের একের পর এক আক্রমণ ঠেকিয়ে যেন অতি মানবীয় হয়ে উঠেন গোলরক্ষক ইয়ান সোমার। কিন্তু টাইব্রেকারের গিয়ে স্নায়ুচাপে ডুবল সুইসরা। রোমাঞ্চকর ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে উঠল স্পেন।
শুক্রবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে ইউরো কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে সুইজারল্যান্ডকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়েছে স্পেন। ঘটনাবহুল মূল ম্যাচ ১-১ গোলের সমতায় শেষ হওয়ার পর স্নায়ু পরীক্ষায় পাশ করেছে লুইস এনরিকের দল।
স্পেনের হয়ে পেনাল্টি শ্যুট আউটের প্রথমটিই মিস করেন সার্জিও বুসকেটস। গোলরক্ষক সোমার উলটো দিকে ঝাঁপিয়ে পড়লেও বুসকেটসের দুর্বল শট লাগে বারে।
সুইজারল্যান্ডের হয়ে প্রথম শটে লক্ষ্যভেদ করতে ভুল করেননি মারিও গারভানোভিচ। স্পেনের হয়ে পরেরটায় জালে জড়ান ডানি ওলমো। সুইজারল্যান্ডের ফ্যাবিয়ান শার দুর্বল শটে মিস করে ফেলেন পরেরটি।
ছুটে যাওয়া আশা আবার বাড়ান ম্যাচে দারুণ খেলা সোমার। স্পেনের রদ্রির শট বা দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন তিনি। ফের সম্ভাবনা বাড়ে সুইসদের। কিন্তু এরপরের দুই পেনাল্টিও মিস করে সুইজারল্যান্ড। বাজে শটে গোল করতে ব্যর্থ হন ম্যানুয়েল আকাঞ্জি আর রুবেন ভারগাস। এরপর মিকেল ওয়ারজাবাল গোল করলে ৩-১ ব্যবধানে জিতে যায় স্পেন।
এর আগে মূল ম্যাচ ছিল সুইসদের ধারালো প্রতি আক্রমণ, স্পেনের মুহুর্মুহু আক্রমণ, সোমারের বীরত্ব এবং রেফারির অতি কঠোর এক লাল কার্ডের গল্প।
খেলার শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে সুইজারল্যান্ড। ৮ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে কোকের নেওয়া শট বেঁকে বা প্রান্তের বক্সের বাইরে জর্দি আলভার পায়ে আসে। আলভার দূরপাল্লার জোরালো শট সুইস ডিফেন্ডার ডেনিস জাকারিয়ার পায়ে লেগে দিক বদল হয়ে জালে ঢুকে গেলে এগিয়ে যায় স্পেন।
২১ মিনিটে গিয়ে বলার মতো সুযোগ পায় সুইসরা। শাকিরির বাড়ানো বল অবশ্য ধরতে পারেননি গোলরক্ষকের সামনে থাকা হারিস সেফেরোভিচ।
২৪ মিনিটে কোকের কর্নার থেকে সিজার আজপিলিকুয়েতা হেড সোজা যায় সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সোমারের হাতে।
৩৪ মিনিটে শাকিরির কর্নার থেকে ভাল উচ্চতায় বল পেয়েও হেডে বাইরে মারেন ম্যানুয়েল আকাঞ্জি। পরের মিনিটে আরেকটি কর্নার কাজে লাগাতে পারেনি সুইসরা।
প্রথমার্ধের বাকি সময়ে কোন দলই আর তেমন কোন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।
বিরতির পর প্রথম সুযোগ পায় স্পেন। পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে ফেরান তরেসের ক্রস ধরে ড্যানিয়েল ওলমো গোলে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু তা ধরতে অসুবিধা হয়নি সোমারের।
৫৫ মিনিটে কর্নার থেকে সমতায় আসার সুযোগ ছিল সুইসদের। আকাঞ্জির মারা হেড অল্পের জন্য বার ঘেঁষে যায়। ৫৮ মিনিটে কোকের বাড়ানো বল থেকে অল্পের জন্য গোল মিস করেন তরেস।
৬৪ মিনিটে দুর্দান্ত সুযোগ পায় সুইজারল্যান্ড। মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে দারুণ গতিতে ছুটে গিয়ে বক্সে ঢুকি পড়েছিলেন স্টিভেন জুবের। তার নেওয়া শট দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমন।
৬৮ মিনিটে আসে সুইসদের আনন্দের মুহূর্ত। ডান দিক থেকে আসা আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে স্পেনের ডিফেন্ডার পাও তরেসের পায়ে লেগে বল চলে যায় রেমো ফ্রেউলারের কাছে। তার নিখুঁত ক্রস ধরে ঠান্ডা মাথায় বল জালে ঢুকান শাকিরি।
৭৭ মিনিটে সুইসদের জন্য আসে বড় বিপদ। আলবার্তো মোরেনোর কাছে থাকা বল ঠেকাতে স্লাইড ট্যাকল করতে গিয়ে ফাউল করে বসেন ফ্রেউলার। রেফারি মাইকেল ওলিভার সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে দেন ফ্রেউলারকে। রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে রেফারি এই ফাউলে একটু নমনীয় হয়ে হলুদ কার্ড দিতে পারতেন।
১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর সব ছক এলোমেলো হয়ে যায় সুইসদের। শাকিরি আর গারভানোভিচকে তুলে নেন কোচ ভ্লাদিমির পেটকোভিচ। রক্ষণ শক্ত করার কৌশল নেয় সুইজারল্যান্ড।
তাতে সফলও তারা। নির্ধারিত সময়ে ১০ জনের সুইসদের বিপক্ষে আর গোল পায়নি স্পেন। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে আলভার ক্রস থেকে সুর্বণ সুযোগ হারান নিকো এলভাডি। তার মারা শট যায় বারের সামান্য বাইরে দিয়ে।
মিনিট দুয়েক পর আলভার শট দারুণ দক্ষতায় ফিষ্ট করে দেন সোমার। দশ মিনিটে আরেকটি দুর্দান্ত সেভ করেন সোমার। মোরানোর শট ফিস্ট করে ফেরান। দুই মিনিট পর আরও দুটি দুর্দান্ত সেভ দেখান তিনি। গোল বঞ্চিত হন ওলমো।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধেও একের পর এক সুযোগ তৈরি করতে থাকে স্পেন। কিন্তু তা প্রতিহত করতে প্রাণপণ দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যায় সুইস ডিফেন্স। বিশেষ করে গোলরক্ষক সোমার হয়ে উঠেন অতি মানবীয়। তার হাত থেকে বল বেরিয়ে যাওয়ার যেন কোন উপায়ই নেই।
শেষ পর্যন্ত তার বীরত্বে খেলা টাইব্রেকারে গেলেও তা কাজে লাগিয়ে ইতিহাস গড়া হয়নি এবারের ইউরোর চমক সুইজারল্যান্ডের।
Comments