কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফুটবলকে বিদায় বললেন আগুয়েরো

প্রায় দুই মাস আগের ঘটনা। স্প্যানিশ লা লিগায় বার্সেলোনার ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যুতে আলাভেসের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন তারকা স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরো। কেউ কি ঘুণাক্ষরেও তখন ভেবেছিলেন, সেই ম্যাচটিই হয়ে থাকবে আর্জেন্টিনার এই ফুটবলারের পেশাদার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ?

হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে বুধবার সব ধরনের ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন আগুয়েরো। ক্যাম্প ন্যুতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি শোনান বিদায়ের বাণী, 'এই সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করা হয়েছে এজন্য যে আমি পেশাদার ফুটবল খেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা অনেক কঠিন একটি মুহূর্ত। আমি আমার স্বাস্থ্যের কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রায় দেড় মাস আগে যে সমস্যা হয়েছিল সেটার কারণে।'

গত অক্টোবরের শেষদিকে আলাভেসের বিপক্ষে ম্যাচের ৪২তম মিনিট বুকে ব্যথা অনুভব করেন আগুয়েরো। তৎক্ষণাৎ মাঠে শুয়ে পড়েন তিনি। সেখান থেকে তাকে সরাসরি নেওয়া হয় হাসপাতালে। পরে তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা চিহ্নিত করেন চিকিৎসকরা।

অ্যারিথমিয়া বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনে ভুগছেন আগুয়েরো। বার্সা পরবর্তীতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, তিন মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাকে। তবে তখন থেকেই তার অবসর নিয়ে গুঞ্জন চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত, ৩৩ বছর বয়সেই বুটজোড়া তুলে রাখতে হচ্ছে তাকে।

মেডিকেল স্টাফদের প্রশংসার পাশাপাশি আগুয়েরো জানান, শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে আশাব্যঞ্জক কিছু দেখতে না পাওয়ায় বেশ কয়েকদিন আগেই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি, 'মেডিকেল স্টাফরা আমার ভালো যত্ন নিয়ে যাচ্ছে। খেলা চালিয়ে যাওয়ার আশায় সম্ভাব্য সবকিছু করার পর গত দশ দিন আগে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

ক্লাব পর্যায়ে বার্সার পাশাপাশি আতলেতিকো মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার সিটির প্রতিনিধিত্ব করেন আগুয়েরো। আর জাতীয় দল আর্জেন্টিনার জার্সিতে দেড় দশক মাঠে আলো ছড়ান তিনি। সাফল্যমণ্ডিত ও বর্ণাঢ্য এই ক্যারিয়ার নিয়ে গর্ব হয় তার, 'আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে গর্বিত। পাঁচ বছর বয়সে প্রথমবার বলে পা ছোঁয়ানোর পর থেকে আমি সবসময় একজন পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি।'

পুরনো দুই ক্লাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি 'কুন' নামে খ্যাত এই ফরোয়ার্ড, 'আমি আতলেতিকো মাদ্রিদকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা আমাকে খেলার সুযোগ দিয়েছিল, যখন আমার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। আর ম্যানচেস্টার সিটিকে। সবাই জানে সিটির ব্যাপারে আমি কী অনুভব করি এবং তারা কতটা ভালোভাবে আমার দেখাশোনা করেছে।'

বার্সেলোনার ভক্ত-সমর্থক ছাড়াও আগুয়েরোর বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তার সাবেক ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিরা। তাদের মধ্যে ছিলেন ম্যান সিটির বর্তমান কোচ পেপ গার্দিওলাও।

চলতি মৌসুমের শুরুতে বিনা ট্রান্সফার ফিতে ইংলিশ ক্লাব সিটি ছেড়ে বার্সেলোনায় নাম লেখান আগুয়েরো। চোট সঙ্গে করেই স্পেনে এসেছিলেন তিনি। মাংসপেশির ওই চোটে প্রথম দুই মাস খেলা হয়নি তার। সেই চোট থেকে সেরে মাঠে ফিরলেও হৃদযন্ত্রের সমস্যা ধরা পড়ায় থমকে গেল তার পেশাদার ক্যারিয়ারই। কাতালানদের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫ ম্যাচে ১ গোল করেন তিনি। সেই গোল এসেছিল বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে।

নিজ দেশের ক্লাব ইন্দিপেন্দিয়েন্তের হয়ে নজর কাড়ার পর ২০০৬ সালে আতলেতিকোতে পাড়ি জমান আগুয়েরো। লা লিগায় পাঁচ মৌসুমে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে ম্যান সিটিতে যোগ দেন তিনি। ইতিহাদ স্টেডিয়ামে এক দশক কাটিয়ে ব্যাপক ব্যক্তিগত ও দলীয় সাফল্য উপভোগ করেন তিনি।

সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৬০ গোল করে সিটিজেনদের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড নিজের করে নেন আগুয়েরো। প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি গোল করা বিদেশি খেলোয়াড়ের কীর্তিও তার দখলে। ১৮৪ গোল নিয়ে ইংল্যান্ডের শীর্ষ ফুটবল আসরে এক ক্লাবের পক্ষে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও গড়েন তিনি।

আর্জেন্টিনার হয়ে ১০১ ম্যাচে আগুয়েরো করেন ৪১ গোল। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে রানার্সআপ হওয়া স্কোয়াডের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। জাতীয় দলের জার্সিতে তার শিরোপা জয়ের অপেক্ষা শেষ হয় গত জুলাইতে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে তাদের মাটিতেই হারিয়ে কোপা আমেরিকার মাটিতে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা।

Comments

The Daily Star  | English

The Daily Star, HSBC honour high achievers in O- and A-Level exams

To commemorate the victims of the July Uprising, the programme began with a one-minute silence, followed by the rendition of the national anthem

2h ago