ব্রাজিলকে হারিয়ে ২৮ বছরের অপেক্ষা শেষে চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা
প্রথমার্ধে পাওয়া লিড ধরে রাখল আর্জেন্টিনা। বিরতির পর মুহুর্মুহু আক্রমণ শানিয়েও প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙতে পারল না ব্রাজিল। তাদেরকে আটকে রেখে কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হলো আর্জেন্টিনা। ২৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিযোগিতায় শিরোপা জেতার স্বাদ পেল তারা।
রবিবার সকালে মারাকানা স্টেডিয়ামে আসরের ফাইনালে স্বাগতিক ব্রাজিলের বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতেছে লিওনেল স্কালোনির দল। ম্যাচের ২২তম মিনিটে জয়সূচক গোলটি আসে আনহেল দি মারিয়ার পা থেকে।
শিরোপা জেতার মাধ্যমে পূরণ হলো ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির অধরা স্বপ্ন। জাতীয় দল আর্জেন্টিনার জার্সিতে এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হলেন তিনি। বিপরীতে, ম্যাচে অসাধারণ খেলেও ব্রাজিলের নেইমারের কোপা জয়ের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হলো।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে ফুটবলের চিরায়ত সৌন্দর্যের দেখা সেভাবে মেলেনি। ফাউলের ছড়াছড়ি ছিল ম্যাচ জুড়ে। আর্জেন্টিনা ফাউল করেছে ১৯টি, ব্রাজিল করেছে ২২টি।
বল দখলের আধিপত্য করার পাশাপাশি আক্রমণেও প্রাধান্য দেখায় ব্রাজিল। তাদের গোলমুখে নেওয়া ১৩ শটের কেবল দুইটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, আর্জেন্টিনাও ছয়টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারে দুইটি।
শুরুর দিকে খেলা হয় হয় মাঝমাঠে। গুছিয়ে আক্রমণে উঠতে বেশ সময় নেয় দুই দলই। ১৩তম মিনিটে ম্যাচের প্রথম সুযোগ তৈরি করে ব্রাজিল। ফরোয়ার্ড রিচার্লিসনের পাসে ডি-বক্সের ভেতরে নেইমারের শট ব্লক করেন নিকোলাস ওতামেন্দি।
২২তম নিজেদের প্রথম আক্রমণ থেকে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। নিজেদের অর্ধ থেকে লম্বা করে ডান প্রান্তে আড়াআড়ি পাস দেন রদ্রিগো দে পল। বল ক্লিয়ার করার সুযোগ থাকলেও ব্যর্থ হন লেফট-ব্যাক রেনান লোদি। দারুণ প্রথম ছোঁয়ায় বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে চিপ করে গোলরক্ষক এদারসনের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে পাঠান দি মারিয়া।
সাত মিনিট পর ফের সুযোগ আসে তারকা উইঙ্গার দি মারিয়ার সামনে। তার বাঁ পায়ের শট আটকে দেন ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা। আলগা বল গোলমুখে থাকা আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লাউতারো মার্তিনেজের দিকে যাচ্ছিল। তবে আগেই তা বিপদমুক্ত করেন মার্কুইনোস।
৩৪তম মিনিটে ভালো জায়গায় ফ্রি-কিক পায় ব্রাজিল। তবে সামনে থাকা রক্ষণপ্রাচীরে মেরে সুযোগ নষ্ট করেন নেইমার। প্রথমার্ধের বাকি অংশে গোল শোধের তাগিদ দেখা যায় ব্রাজিলের মধ্যে।
৪২তম মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে এভারতনের নেওয়া শট আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগে বাধা পাওয়ার পর অনায়াসে লুফে নেন ম্যাচে দারুণ খেলা আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। পরের মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে রিচার্লিসন গোলমুখে ফেলেন অসাধারণ এক ক্রস। কিন্তু লুকাস পাকেতা ডাইভ দিয়েও বলে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি।
দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে তিতের শিষ্যরা। ৫২তম মিনিটে রিচার্লিসন জালে বল পাঠালেও অফসাইডের কারণে তা বাতিল করা হয়। তিন মিনিট পর এমিলিয়ানোর দক্ষতায় বেঁচে যায় আর্জেন্টিনা। নেইমারের পাসে রিচার্লিসনের শট রুখে দেন তিনি।
৮৩তম মিনিটে বদলি নামা গ্যাব্রিয়েল বারবোসা পারেননি ব্রাজিলকে গোল এনে দিতে। তার শট প্রতিহত করেন সেন্টার-ব্যাক জার্মান পেজ্জেয়া। কিছুক্ষণ পর দানিলোর দূরপাল্লার শট গোলপোস্টের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায়।
চার মিনিট পর আবারও আলবিসেলেস্তেদের ত্রাণকর্তা এমিলিয়ানো। নেইমারের ক্রস রক্ষণভাগে বাধা পাওয়ার পর পেয়ে যান বারবোসা। তার বাঁ পায়ের শটও কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক।
৮৯তম মিনিটে আর্জেন্টিনার ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। আক্রমণ তৈরি করে ম্যাচে দুর্দান্ত পারফর্ম করা দে পলের কাছ থেকে ফিরতি পাস পান তিনি। ছয় গজের বক্সের ভেতরে কেবল এদারসনকে পরাস্ত করতে হতো তাকে। কিন্তু ব্রাজিল গোলরক্ষককে এড়াতে গিয়ে বল হারিয়ে ফেলেন মেসি।
বাকিটা সময়েও উত্তেজনা ছিল চড়া। ব্রাজিলের আক্রমণভাগের ধাক্কা সামলে স্নায়ুর পরীক্ষায় উতরে যায় আর্জেন্টিনা। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে তারা মাতে সীমাহীন উল্লাসের জোয়ারে।
Comments