পাগলাটে দলবদল শেষে কোন দলে কারা এলেন

করোনাভাইরাস যেমন মানুষদের স্বাভাবিক জীবন বদলে দিয়েছে, তেমনি বদলে দিয়েছে ফুটবল বিশ্বকেও। অবিশ্বাস্য সব পাগলাটে দলবদলই হয়েছে এ মৌসুমে। ক্লাব বদলেছেন লিওনেল মেসি, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, সের্জিও রামোস, আতোঁয়ান গ্রিজমানদের মতো প্রতিষ্ঠিত তারকা খেলোয়াড়রা। এমন ট্রান্সফার উইন্ডো শেষে কেমন হলো দলগুলো হিসাব-নিকাস।
দলবদলে এবার সবচেয়ে বেশি চমক দেখিয়েছে পিএসজি। সের্জিও রামোস, জিয়ানলুইজি ডোনারুমা, জিওর্জিনো উইনালদামদের মতো প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়দের দলে টানার পর ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মেসিকে নিয়ে আসে তারা। আর তাদের সবাইকেই এনেছে ফ্রি ট্রান্সফারে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। মাঝে ইন্টার মিলান থেকে আশরাফ হাকিমিকে কিনে আনে তারা। শেষ দিকে নুনো মেন্দেসকে ধারে এনে শক্তি আরও বাড়িয়েছে দলটি।
এছাড়া নানা নাটকের পর কিলিয়ান এমবাপেকেও ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে পিএসজি। মৌসুম জুড়েই তার রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার গুঞ্জন ছিল চড়া। রিয়াল ও এমবাপে দুই পক্ষই মরিয়া ছিলেন। এমবাপের ২০০ মিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত প্রস্তাব দিয়েছিল রিয়াল। চার মৌসুম আগে এরচেয়ে কম মূল্যে তাকে কিনে এনেছিল পিএসজি। কিন্তু তারপরও এমবাপেকে ছাড়েনি তারা।
পিএসজির পর বড় চমকটা উপহার দেয় ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডই। মাত্র ২০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সময়ের আরেক সেরা তারকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে জুভেন্টাস থেকে উড়িয়ে আনে দলটি। এর আগে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড জাডন সাঞ্চো ও রিয়াল মাদ্রিদ থেকে রাফায়েল ভারানেকে এনে চমক দেখিয়েছিল তারা। শেষ দিনে অবশ্য উইঙ্গার ড্যানিয়েল জেমসকে ছেড়ে দিয়েছে তারা। যোগ দিয়েছেন লিডস ইউনাইটেডে।
খেলোয়াড় টানায় চমক দেখাতে না পারলেও খেলোয়াড় ছাড়ায় এবার সেরা ছিল হয়তো বার্সেলোনাই। আর্থিক ঘাটতির কারণে মেসিকে ছাড়া নিয়ে পুরো বিশ্বই নড়েচড়ে বসেছিল। এ মহাতারকাকে ছাড়ার পর শেষ দিনে গ্রিজমানকেও ছেড়ে দেয় তারা। এছাড়া এমারসন রয়্যাল, ইলিয়াস মোরিবা ও জুনিয়র ফিরপোর মতো উঠতি তরুণদের হাতছাড়া করে দলটি। তবে ফ্রি ট্রান্সফারে সের্জিও আগুয়েরো, মেমফিস ডিপাই, এরিক গার্সিয়াদের দলে টানে তারা। শেষ দিনে সেভিয়া থেকে ধারে লুক ডি ইয়ংকে টেনেছে কাতালান ক্লাবটি।
একই মৌসুমে দলের সেরা দুই ডিফেন্ডার সের্জিও রামোস ও রাফায়েল ভারানেকে ছেড়ে আলোচনার সৃষ্টি করে রিয়াল মাদ্রিদ। সে ঘাটতি অবশ্য কিছুটা কমিয়েছে ফ্রি ট্রান্সফারে ডেভিড আলাবাকে টেনে। তবে মৌসুম জুড়ে এমবাপেকে দলে টানতেই ছুটেছিল তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিএসজির গোঁয়ার্তুমিতে তা আর হয়ে ওঠেনি। এমবাপে রিয়াল আসতে মরিয়া হলেও এবারও তাকে খেলতে হবে পিএসজির হয়েই। তবে শেষ দিনে পিএসজির টার্গেট এদুয়ার্দ কামাভিঙ্গাকে স্বাক্ষর করিয়েছে দলটি।
এবারের দলবদলে দারুণ কিছু সাইনিং করেছে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ। বিশেষকরে শেষ দিনে নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকা গ্রিজমানকে ফেরানো। মাঝমাঠের শক্তি বাড়াতে উদিনেসে থেকে রদ্রিগো দি পলের মতো খেলোয়াড় আগেই নিয়ে এসেছিল তারা। এছাড়া এবারের অলিম্পিকে চমক দেখানো ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ম্যাথুস কুনহাকে টেনেছে দলটি। শেষদিনে অবশ্য চেলসির কাছে সাউল নিগেজকে ছেড়ে দিয়েছে দলটি।
চমকে ভরা দলবদলটা এক অর্থে হতাশার বলা যায় ম্যানচেস্টার সিটির জন্য। যদিও রেকর্ড ব্রিটিশ রেকর্ড ভেঙে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে অ্যাস্টন ভিলা থেকে জ্যাক গ্রিলিশকে আনে তারা। কিন্তু তাদের মূল লক্ষ্য ছিল একজন স্ট্রাইকার। হ্যারি কেইন, মেসি ও রোনালদোর জন্য চেষ্টা করেও সফলতা দেখেনি দলটি।
ইন্টার মিলান থেকে দলের সাবেক তারকা রোমেলু লুকাকুকে দলে টানে বর্তমান ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন চেলসি। শেষ দিনে ধারে নিয়ে অ্যাতলেতিকো থেকে ধারে এনেছে সাউলকে। লিভারপুল অবশ্য দলবদলে বেশ নীরব ছিল। শুরুতেই ইব্রাহিম কোনাতেকে রক্ষণভাগের ব্যাকআপের জন্য কিনেছিল। তবে ছেড়ে দিয়েছে জর্দান শাকিরি ও উইনালদামকে।
ইংলিশ ক্লাবগুলোর মধ্যে অনেক টাকা খরচ করলেও সে অর্থে তারকা কোনো খেলোয়াড়দের কিনতে পারেনি আর্সেনাল। বেন হোয়াইট, লোকোঙ্গা, ওডেগার্ড, রামসডেলেদের দলে টানার পর শেষ দিনে বোলোনিয়া তাকেহিরো তুমিয়াসোকে টেনেছে তারা। আর ধারে ছেড়েছেন হেক্টর বেলেরিনকে। তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী টটেনহ্যাম শেষ পর্যন্ত হ্যারি কেইনকে ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে। কিনেছেও দারুণ কিছু খেলোয়াড়। আতালান্তা থেকে ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো ও সেভিয়া থেকে ব্রায়ান গিলকে টানে তারা। শেষ দিনে বার্সা থেকে এসেছেন এমারসন রয়্যাল। তবে এরিক লামেলাকে ছেড়ে দিয়েছে দলটি।
বায়ার্ন মিউনিখও তাদের ঘর গুছিয়েছে। ডেভিড আলাবাকে ছাড়তে হয় আগেই। লাইপজিগ থেকে মিডফিল্ডার মার্সেল সাবিতজার ও ডিফেন্ডার দায়োত উপামেকানোকে দলে টেনেছে তারা। চলে যাওয়ার গুঞ্জন উঠলেও থেকে গেছেন লেভানদোভস্কি। সাঞ্চোকে ছেড়ে দিলেও তার জায়গায় ভালো কাউকে দলে টানতে পারেনি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব ডর্টমুন্ড।
ইন্টার মিলান থেকে এবার চলে গেছেন লুকাকু। দল ছেড়েছেন আশরাফ হাকিমিও। তবে গুঞ্জন থাকলেও থেকে গেছেন লাউতারো মার্তিনেজ। যোগ দিয়েছেন আরকে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড হোয়াকিন কোরেয়া। ফ্রি ট্রান্সফারে এসেছেন হাকান শালানুলু ও স্ট্রাইকার এডিন জেকোকে দলে টেনেছে তারা। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী জুভেন্টাস রোনালদোর জায়গায় এনেছেন ময়জে কিনকে। এছাড়া মিডফিল্ডার ম্যানুয়েল লোকাতেল্লিকে দলে টেনেছে ওল্ড লেডিরা। চেলসির ফিকোয়া টোমোরিকে নিশ্চিত করার পর সে দল থেকে অলিভিয়ের জিরুকেও এনেছে আরেক ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলান।
Comments