মেসি কি স্থান পাবেন সর্বকালের সেরার তালিকায়

সর্বকালের সেরা ফুটবলার নিয়ে তর্ক-বিতর্ক উঠলে পেলে ও দিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে উচ্চারিত হয় লিওনেল মেসি আর ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর নাম। তবে, মেসির ক্ষেত্রে এতদিন সেই আলোচনা জমে ওঠার আগেই একটি দিকের কারণে থেমে যাওয়ার ব্যাপার ছিল। ক্লাব পর্যায়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো মেসির নামের পাশে ছিল না যে জাতীয় দলের জার্সিতে কোনো শিরোপা!
কোপা আমেরিকার শিরোপায় মেসির চুমু। ছবি: টুইটার

সর্বকালের সেরা ফুটবলার নিয়ে তর্ক-বিতর্ক উঠলে পেলে ও দিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে উচ্চারিত হয় লিওনেল মেসি আর ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর নাম। তবে, মেসির ক্ষেত্রে এতদিন সেই আলোচনা জমে ওঠার আগেই একটি দিকের কারণে থেমে যাওয়ার ব্যাপার ছিল। ক্লাব পর্যায়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো মেসির নামের পাশে ছিল না যে জাতীয় দলের জার্সিতে কোনো শিরোপা!

মেসির দুঃখ বলা হোক কিংবা দুর্ভাগ্য, সেটা অবশেষে ঘুচেছে। রোববার কোপা আমেরিকার ফাইনালে মারাকানা স্টেডিয়ামে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে তাদের মাটিতেই হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা।

একটি আন্তর্জাতিক শিরোপার যে অধরা স্বপ্ন মেসি এতদিন বুকে পুষে রেখেছিলেন, সর্বকালের তো বটেই, সময়ের সেরার লড়াইয়েও তার প্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদো সেই দিক থেকে ছিলেন অনেকটাই নির্ভার। পাঁচ বছর আগেই পর্তুগালের হয়ে ইউরো জিতেছিলেন রোনালদো। পরে তিনি জেতেন উয়েফা নেশন্স লিগের প্রথম আসরের শিরোপাও।

মেসির ওপর তাই প্রত্যাশার চাপ বাড়ছিলই। রোনালদোর সঙ্গে পাল্লা দিতে কিংবা শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে অনেক ভক্ত-সমর্থক থেকে শুরু করে ফুটবলবোদ্ধাও আন্তর্জাতিক যে শিরোপাকেই মানদণ্ড মানেন, অবশেষে বহু আরাধ্য সেই রত্নের খোঁজ পেয়েছেন মেসি।

মারাকানায় শেষ বাঁশি বাজার পর রেকর্ড ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘এটা পাগলাটে ব্যাপার। আমি যে আনন্দ অনুভব করছি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। (ফাইনাল থেকে) আমাকে অনেকবার দুঃখের সঙ্গে বিদায় নিতে হয়েছে। কিন্তু আমি জানতাম, এক সময় না এক সময় এটা ঘটবে।’

দেশের হয়ে এর আগে চারটি ফাইনাল খেলেছিলেন ৩৪ বছর বয়সী মেসি। কোপা আমেরিকায় তিনবার (২০০৭, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে) এবং বিশ্বকাপে একবার (২০১৪ সালে)। তবে, কোনোবারই শিরোপার স্বাদ নিতে পারেননি তিনি। ওই আসরগুলোতে তার ব্যক্তিগত পুরস্কারের ঝুলি সমৃদ্ধ হলেও দলীয় অর্জন ছিল অধরা। পঞ্চমবারের চেষ্টায় তিনি পেয়েছেন সফলতার দেখা।

অনেক দুঃখ ছাপিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে শিরোপা জয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা পূরণ হওয়ায় মেসির বক্তব্য, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল পরিষ্কার এবং আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। এই আনন্দ অতুলনীয়। আমি বহুবার এই স্বপ্ন দেখেছি। খেলা শেষ হওয়ার পর আমি আমার পরিবারের কথা ভেবেছি। আমাদের অনেকবার ভুগতে হয়েছে। আমরা ছুটিতে গিয়েও প্রথম কয়েকটি দিনে বেদনায় ভারাক্রান্ত থেকেছি।’

স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনায় মেসি যেভাবে নিজেকে উজাড় করে দেন, সেভাবে আর্জেন্টিনা তাকে পায় না- এমন অভিযোগও অনেক বছরের। তবে, কোপার শিরোপা জয়ের পথে এবার তিনি অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড হাতে পরে নেতৃত্ব দেন সামনে থেকে। আসরটিকে তাই মেসিময় বললেও অত্যুক্তি হবে না।

দলের সাত ম্যাচের প্রতিটিতে খেলে চারবারই ম্যাচসেরা হন মেসি। নিজে করেন সর্বোচ্চ চার গোল। পাশাপাশি নিজের সতীর্থদের দিয়েও করান আরও পাঁচটি। এতে আসরের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব যেমন তিনি জেতেন, তেমনি হন সর্বোচ্চ গোলদাতাও।

অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখানোর পর সবশেষে শিরোপাও জেতা হয়েছে মেসির। স্বাগতিক ব্রাজিলের বিপক্ষে ফাইনাল নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি, এই ম্যাচটা ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাবে। কারণ, আমরা কেবল চ্যাম্পিয়ন হইনি, ব্রাজিলকেও তাদের মাটিতে হারিয়েছি।’

কোপার শিরোপা জয়ে ব্রাজিলের সাবেক মহাতারকা পেলে কিংবা স্বদেশি প্রয়াত কিংবদন্তি ম্যারাডোনাকে মেসি ছাপিয়ে গেছেন, এমন কিন্তু নয়। কারণ, পূর্বোক্ত দুই ফুটবলারের হাতে শোভা পেয়েছে বিশ্বকাপ।

পেলে তিনবার (১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০) আর ম্যারাডোনা একক নৈপুণ্যে একবার (১৯৮৬) নিজ নিজ দলকে বানিয়েছিলেন বিশ্বের সেরা। মেসির সে অভিজ্ঞতা অজানাই রয়ে গেছে এখনও। তবে, কোপা জয় নিশ্চিতভাবেই তাকে সর্বকালের সেরার প্রশ্নে মজবুত ভিত দিয়েছে। যা পূর্ণতা পেতে পারে বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

9h ago