ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ 

গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বুধবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ইনিংসের মাঝপথেই ঠিক হয়ে যায় ম্যাচের গতিপথ
tamim iqbal
ছবি: আইসিসি

টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বিধ্বস্ত হলেও প্রিয় সংস্করণ ওয়ানডেতে দেখা গেল ভিন্ন দৃশ্য। গায়ানার মাঠে 'মিরপুরের মতো' উইকেট পেয়ে জ্বলে উঠলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। ঘরের মাঠেই ভিনদেশের চ্যালেঞ্জের মতো খাবি খেয়ে ডুবল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টানা দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দাপট দেখিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিল তামিম ইকবালের দল।

গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বুধবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ইনিংসের মাঝপথেই ঠিক হয়ে যায় ম্যাচের গতিপথ। মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাসুম আহমেদের স্পিনে মাত্র ১০৮ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ওই রান পেরিয়ে জিততে লেগেছে ২০.৪ ওভার। পড়েছে কেবল ১ উইকেট। অর্থাৎ  ৯ উইকেটের বড় জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করেছে সফরকারীরা। দলকে জিতিয়ে ঠিক ৫০ রানে অপরাজিত ছিলেন তামিম, অপরাজিত ৩২ রান করেন লিটন দাস। 

এই নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা ১০ ওয়ানডে জিতল বাংলাদেশ, জিতল টানা চারটি ওয়ানডে সিরিজও।

মন্থর ও টার্নিং উইকেটে প্রতিপক্ষের মামুলি পুঁজি তাড়া করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ওপেন করতে নামেন অধিনায়ক তামিম। সম্ভবত বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেনকে পেয়ে বসতে না দিতেই এমন কৌশল। ওপেনিং জুটিতেই চলে আসে ৪৮ রান।

ভালো শুরু পাইয়ে ২০ রান করে ফিরে যান শান্ত। গুডাকেশ মুটিকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা দেন তিনি। নিয়মিত ওপেনার লিটন তিনে নেমে খেলেছেন অনায়াসে। দ্রুত বের করেছেন বাউন্ডারি। খেলা শেষ হয়ে যায় তার ঝলকে। দৃষ্টিনন্দন ৬ চার আসে তার ব্যাটে। বাউন্ডারি মেরে খেলা শেষ করে দেওয়ার সঙ্গে ৬২ বলে ফিফটিও স্পর্শ করেন তামিম। 

Mehedi Hasan Miraz & Mustafizur Rahman

এর আগে ম্যাচের প্রথম ভাগে নির্ধারিত হয়ে যায় ম্যাচের গতিপথ। টস জিতে বোলিং বেছে আরও একবার স্পিন বিষে ক্যারিবিয়ানদের নাজেহাল করে ছাড়ে বাংলাদেশ।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সতর্ক শুরু আনেন স্বাগতিক দুই ওপেনার শেই হোপ ও কাইল মেয়ার্স। ১০ ওভার টিকে থেকে ওভারপ্রতি তিনের নিচে রান তুলছিলেন তারা। অবশ্য ১০ ওভারের আগেই উদ্বোধনী জুটি ভাঙার সুযোগ এসেছিল।  মিরাজের বলে হোপকে আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করেন কিপার নুরুল হাসান সোহান। ক্যাচ ও স্টাম্পিং হাতছাড়া করেন তিনি।

৪ রানে জীবন পেয়েও তা আর কাজে লাগাতে পারেননি হোপ। আরেক ওপেনার মেয়ার্স বিপদজনক হওয়ার আগেই তাকে ছেঁটেছেন তাসকিন আহমেদের বদলে নামা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। মোসাদ্দকের হালকা টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে ঠিক আগের ম্যাচের মতই অফ স্টাম্প খুইয়েছেন মেয়ার্স।

দুই ওভার পরই ব্রোকসকে বোল্ড করে উইকেট নেওয়া শুরু নাসুমের। ১৮তম ওভারে তিনি থামিয়ে দেন থিতু হতে থাকা হোপকে। ওই ওভারে নেমেই প্রথম বলে নাসুমের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক পুরান। উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি দারুণ আঁটসাঁট বোলিংয়ে প্রতিপক্ষের শ্বাস বন্ধ করে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করেন এই বাঁহাতি।

রভম্যান পাওয়ালের সঙ্গে মিলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেননি ব্র্যান্ডন কিংও। পাওয়াল ঝড় তুলতে পারেননি শরিফুল ইসলামের বলে ক্যাচ দিয়ে দেওয়ায়। কিং পরে বোল্ড হয়ে যান মিরাজের বলে। আকিল হোসেন শিকার হন রানআউটের। আগের ম্যাচে শেষ দিকে কিছু রান এনে দেওয়া রোমারিও শেফার্ডকে এবার বাড়তে দেননি মিরাজ। আলজেরি জোসেফকেও ছাঁটেন তিনি।

এক পাশে উইকেট পতনের মাঝে একা চালিয়ে রান বাড়ান কেমো পল। দলকে তিন অঙ্ক পার করান তিনিই। তবে তার একার পক্ষে আর বেশিদূর টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। গুডাকেশ মুটিকে এলবিডব্লিউ করে ইনিংসও মুড়ে দেন মিরাজ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভাবে ধসে পড়ার পরই খেলার ফল অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। উইকেটে মন্থরতার সঙ্গে টার্ন ছিল বিস্তর। কিছু বল অস্বাভাবিক নিচু হয়েছে। ব্যাট করার জন্য কঠিন কন্ডিশনেও ৫০ ওভারে ১০৯ রানের লক্ষ্য আসলে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার মতো।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং, পরিকল্পনাও ছিল খাপছাড়া। স্পিনারদের তারা কাজে লাগাতে পারেননি একেবারে। দলে কোন অফ স্পিনিং অপশন না থাকায় বাংলাদেশের বাঁহাতি ব্যাটারদের চাপে রাখা যায়নি।

উইকেট, কন্ডিশন আর প্রতিপক্ষের শক্তির বিচার মাথায় রেখে বাংলাদেশ খেলেছে পেশাদার ক্রিকেট। কোন রকম সুযোগ না দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার মানসিকতা দেখা গেছে তাদের মাঝে। 

Comments

The Daily Star  | English
books on Bangladesh Liberation War

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

16h ago