পুরান-মেয়ার্সের ঝড়ে উড়ে গেল মাহমুদউল্লাহর দল

Nicholas Pooran
নিকোলাস পুরান। ছবি- টুইটার

উইকেট ছিল কিছুটা মন্থর। তাতে লিটন দাস আর আফিফ হোসেনের ব্যাটে ১৬৩ রানের পুঁজি পেয়ে লড়াইয়ের আশায় ছিল বাংলাদেশ। বাজে বোলিং আর ক্যারিবিয়ান ঝড়ে সে লড়াই আর হলো কই। কাইল মেয়ার্স আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক নিকোলাস পুরানের ঝড়ে স্রেফ উড়ে গেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।

বৃহস্পতিবার গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ক্যারিবিয়ানরা। বাংলাদেশের ১৬৩ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেরিয়ে যায় ১০ বল আগেই।
দলকে জিতিয়ে ৩৯ বলে ৫ চার, ৫ ছক্কায় ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন পুরান। এর আগে ওপেনার মেয়ার্স করে যান ৩৮ বলে ৫৫। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ স্বাগতিকরা জিতল ২-০ ব্যবধানে। 

এই পুঁজি নিয়ে জিততে হলে শুরুতেই দরকার ছিল উইকেট। সেটা এলও।  প্রথম ওভারে বল হাতে নিয়েই ওয়াইডের পর বাজে লেন্থে বল ফেলে ছক্কা খান নাসুম আহমেদ। পরে পুষিয়ে নিয়ে ওই ওভারেই ব্র্যান্ডন কিংকে ফিরিয়ে দেন তিনি। নাসুমের বলে ওভার দ্য টপ খেলতে গিয়ে মিড অনে ধরা দেন আগের ম্যাচের ফিফটি করা ওপেনার। 

চতুর্থ ওভারে আসে আরেক উইকেট। তিনে নেমে দুই চারে ঝলক দেখানো শারমাহ ব্রোকস শেখ মেহেদী হাসানকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ধরা দেন স্কয়ার লেগে। 

স্লগ করতে চারে পাঠানো হয়েছিল ওডেন স্মিথকে। সুযোগ কাজে লাগেনি। ৪ বলে ২ রান করে সাকিব আল হাসানের বলে এলবিডব্ললিউ হয়ে যান তিনি। ৪৩ রানে তারা হারায় ৩ উইকেট। বাংলাদেশ তখন বেশ আশায় দেখছিল। সেই আশা পরের কয়েক ওভারে দ্রুত মিইয়ে দেন পুরান-মেয়ার্স। 

ওপেন করতে নামা  মেয়ার্স শুরুতে ছিলেন দর্শক, পরে নাটাই নেন নিজের হাতে। মেলতে থাকেন ডানা।  পুরানের সঙ্গে জমে উঠে তার জুটি। মোস্তাফিজুরকে পিটিয়েছেন অনায়াসে। ক্যালিপসো ছন্দে মেরেছেন চার-ছয়। মোস্তাফিজের পর মোসাদ্দেক হোসেনকে উড়িয়ে ৩৩ বলে পুরো করেন ফিফটি। 

ফিফটির পর নাসুমের বলে আরেক ছক্কার চেষ্টায় বিদায় নেন তিনি। ভাঙে ৫৫ বলে ৮৫ রানের জুটি।  ক্যারিবিয়ান কাপ্তান পুরান দমে না গিয়ে নাসুমকে ছক্কায় উড়িয়ে ৩০ বলেই স্পর্শ করেন ফিফটি। 

উইকেটে বল গ্রিপ করায় মোস্তাফিজ হতে পারতেন আদর্শ। কিন্তু তিনি করেছেন সবচেয়ে হতাশ। তাকে দিয়ে দুই ওভারের বেশি বলই করানো যায়নি। সেই ২ ওভারেই তিনি খসিয়েছেন ২৭ রান। আরেক পেসার শরিফুল করেন কেবল এক ওভার। তাতে তিনি দেন ১৩ রান। 

নাসুম দুই উইকেট পেলেও দেন ৪৪ রান। ম্যাচআপের হিসেব নিকেশ করতে গিয়ে সাকিবের দুই ওভার রয়ে যায় অব্যবহৃত। 

ক্রিজে দুই বাঁহাতি দেখে সাকিবকে আর বল করতে আনছিলেন না মাহমুদউল্লাহ। নিজের প্রথম ওভারে কেবল ৪ রান দিয়ে এক উইকেট নেওয়া সাকিব বোলিংয়ে ফেরেন ১৭তম ওভারে। তার বোলিং কোটা পূরণের বাস্তবতা ততক্ষণে শেষ। পুরানের ঝড়ে তখন দিশেহারা বাংলাদেশ ম্যাচ থেকেও ছিটকে গেছে। 

ম্যাচের আর কোন গতি নেই দেখে আফিফকে বল দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এই অনিয়মিত স্পিনারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আগের ম্যাচের নায়ক রভম্যান পাওয়েল। তাতে কেবল সময় ক্ষেপনই হয়েছে, ম্যাচে কোন প্রভাব পড়েনি। স্বাগতিক অধিনায়ক সফরকারী অধিনায়ককে ছক্কায় উড়িয়ে শেষ করে দেন খেলা

এর আগে টস জিতে সতর্ক শুরু আনেন লিটন ও এনামুল হক বিজয়। বিজয় অবশ্য হাতখুলে মারার আগেই বিদায় নেন। সাকিব ক্রিজে নেমে ৩ বল টিকে ফেরেন ৫ রান করে। এরপর লিটন-আফিফের ৫৫ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। প্রান্ত ধরে খেলতে থাকা লিটন মারতে শুরু করতেই বিদায় নেন ৪১ বলে ৪৯ করে। আফিফ থামেন ৩৮ বলে ৫০ করে। 

স্লগ ওভারে নেমে দলের চাহিদা অনুযায়ী ঝড় তুলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ২০ বলে খেলে ২২ রান করে বিদায় নেন তিনি। পরে অধিনায়কত্বেও তাকে দেখা গেছে বেশ সাদামাটা। শরীরী ভাষায় লড়াইয়ের কোন ঝাঁজ তৈরি করতে পারেননি তিনি। টানা খারাপ খেলতে থাকা মাহমুদউল্লাহ নিজের অবস্থানকে করলেন আরও প্রশ্নবিদ্ধ। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬৩/৫ (লিটন ৪৯, এনামুল ১০, সাকিব ৫, আফিফ ৫০, মাহমুদউল্লাহ ২২, সোহান ২*, মোসাদ্দেক ১০*; মেয়ার্স ০/১৪, ম‍্যাককয় ০/২৯, আকিল ০/৩১, স্মিথ ১/৩৪, শেফার্ড ১/১৯, ড্রেকস ০/৬, ওয়ালশ জুনিয়র ২/২৫)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৮.২ ওভারে ১৬৯/৫ (কিং ৭, মেয়ার্স ৫৫, ব্রুকস ১২, স্মিথ ২,  পুরান ৭৪*, পাওয়েল ৫, আকিল ৩*; নাসুম ২/৪৪, মেহেদি ১/২১, সাকিব ১/১০, মোসাদ্দেক ০/৩৪, মুস্তাফিজ ০/২৭, শরিফুল ০/১৩, আফিফ ১/১০, মাহমুদউল্লাহ ০/৭)

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী। 

সিরিজ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-০ তে জয়ী। 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নিকোলাস পুরান। 
 

Comments

The Daily Star  | English

Without reforms, Feb election unacceptable: Nasiruddin Patwary

'We won't give even one percent concession in July Charter,' says Nahid

1h ago