প্রথম দিনেই ব্যাকফুটে বাংলাদেশ দল

ড্যারেন সামি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে শক্ত অবস্থানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশকে ২৩৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে বিনা উইকেটে ৬৭ রান তুল দিন শেষ করেছে তারা। হাতে সবগুলো উইকেট নিয়ে তারা পিছিয়ে ১৬৭ রানে।
Kraigg Brathwaite
ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

গতি ও বাউন্স থাকলেও উইকেটে অনেক রান দেখেছিলেন সাকিব আল হাসান। তার কথা মতই আচরণ করল সেন্ট লুসিয়ার বাইশগজ, তবে তার চাওয়া মতো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা পেলেন না বড় রানের দেখা। বাংলাদেশকে গুটিয়ে নিজেদের ইনিংসও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে স্পষ্ট দাপট ক্যারিবিয়ানদের।

ড্যারেন সামি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে শক্ত অবস্থানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশকে ২৩৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে বিনা উইকেটে ৬৭ রান তুল দিন শেষ করেছে তারা। হাতে সবগুলো উইকেট নিয়ে তারা পিছিয়ে ১৬৭ রানে।

উইন্ডিজ কাপ্তান ক্রেইগ ব্র্যাথয়েট অপরাজিত আছেন ৩০ রানে, ৩২ রান নিয়ে খেলছেন আরেক ওপেনার জন ক্যাম্পবেল।

স্বাগতিকদের হয়ে আলাদা কেউ নায়ক নন। বল হাতে বরং তারা সম্মিলিত প্রয়াসে মুড়ে দেয় বাংলাদেশের ইনিংস।

৫০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল আলজেরি জোসেফ, ৫৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন জেডন সিলস। অভিষিক্ত অ্যান্ডারসন ফিলিপ ৩০ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। কাইল মেয়ার্স ৩৫ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট। 

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান আসে লিটন দাসের ব্যাটে। ছন্দে থাকা এই ব্যাটার করেন ৫৩ রান। ৪৬ রান করেন তামিম ইকবাল।

তবে তাদের ইনিংসগুলো যেন আক্ষেপের গল্পও। একাধিক ব্যাটার থিতু হয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি। উইকেটের সুবিধা কাজে লাগানো যায়নি সেভাবে।

মুমিনুল হকের জায়গায় আট বছর পর ফেরা এনামুল হক বিজয়কে একাদশে রেখে টস হেরে ব্যাট করতে যায় বাংলাদেশ।

শুরুর ঝাপটা কোনমতে সামাল দিয়ে দুই ওপেনারের শুরুটা মন্দ ছিল না, কিন্তু সেটা ভালোর দিকে যেতেই পড়ে বাধা। দলের ৪১ রানে ১৩তম ওভারে বিদায় মাহমুদুল হাসান জয়ের। ফিলিপের ভেতরে ঢোকা বল ১০ রানে স্টাম্প উড়িয়ে থামিয়ে দেয় তাকে।

সুযোগ হাতছাড়া করার বেদনায় সবচেয়ে পুড়বেন তামিম। শূন্য রানে আউট হতে পারতেন। আম্পায়ার্স কলে রিভিউ নিয়েও তাকে ফেরাতে পারেনি ক্যারবিয়ানরা। নড়বড়ে ভাব সরিয়ে দারুণ কিছু বাউন্ডারিতে থিতু হয়েছিল। দিচ্ছিলেন বড় রানের আভাস।

কিন্তু ৯ চারে ফিফটির কাছে গিয়ে ব্যাখ্যাতীত এক বাজে শটে পয়েন্টে তুলে দেন ক্যাচ। ৪৬ রানে তার ফেরার পরও আশা বেঁচেছিল। বিজয়কে নিয়ে প্রতিরোধে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। লাঞ্চের পর ফিরে দুজনে কিছুটা সময় অনায়াসে পার করেছিলেন। শান্তকে মনে হচ্ছিল আত্মবিশ্বাসী, সাবলীল। বিজয়ের মাঝেও ছিল না লম্বা সময় পর ফেরার জড়তা। কাভার ড্রাইভে মেরেছেন দেখার মতো চার। শান্ত পুল শট উড়িয়েছেন অনায়াসে।

৩৭ রানের জুটির পর ফিলিপের হালকা নিচু হয়ে ভেতরে ঢোকা বল কাবু করে দেয় বিজয়কে। ৩৩ বলে ২৩ করে এলবিডব্লিউতে ফিরে যান। পরের ওভারে মেয়ার্সের শিকার শান্ত। আবারও ২৬ রানে ডানহাতি পেসারের অ্যারাউন্ড দ্য উইকেটে আসা বল হন্তারক তার।

দ্রুত দুই উইকেটের ধাক্কা লিটনের সঙ্গে মিলে সামাল দিতে পারেননি সাকিব। মাত্র ৮ রান করে অনেকটা উইকেট ছুঁড়ে দেন তিনি। জায়গায় না গিয়ে খেলতে গিয়ে প্লেইড হন হয়ে বোল্ড হন। কিপার নুরুল হাসান সোহানকে বিদায় করে জোসেদের আচমকা বাউন্সার।

মেহেদী হাসান মিরাজ কিছুটা টিকে থাকার চেষ্টা করেও সফল হননি। চা-বিরতির পর মেয়ার্সের শর্ট বল তাকে গালিতে বদলি ফিল্ডার থমাসের দারুণ ক্যাচে পরিণত করে।

এরপর ক্রিজে টেল এন্ডার দেখে দ্রুত মেরে রান বাড়াতে থাকেন লিটন। এভাবে তুলে নেন টেস্টে নিজের ১৪তম ফিফটি। ফিফটির পরই আরও রান বাড়ানোর চেষ্টায় আউট তিনি।

১৯১ রানে লিটনের বিদায়ের পরও আরও ৪৩ রান যোগ করতে পারে বাংলাদেশ। যার পুরো কৃতিত্ব ইবাদত হোসেন ও শরিফুল ইসলামের। ৩৫ বলে ২১ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে অপরাজিত থেকে দৃঢ়তা দেখান ইবাদত। শরিফুল আগ্রাসী খেলে ১৭ বলে করে যান ২৬। নবম উইকেটে তাদের জুটিতে আসে ৩০ বলে ৩৪ রান।

এই দুজনের ব্যাটিং দেখিয়ে দেয় ব্যাটসম্যানরা আসলে হাতছাড়া করেছেন বড় রানের সুযোগ। জবাব দিতে নেমে তা দেখিয়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজও। বাংলাদেশের কোন বোলারই এখনো পর্যন্ত তাদের চাপ দিতে পারেননি। ব্র্যাথওয়েট-ক্যাম্পেল রান আনছেন প্রায় ওয়ানডে গতিতে।

ম্যাচে ফিরতে দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকে দারুণ বল করতে হবে বাংলাদেশকে। জ্বলে উঠতে হবে পেসারদের, ভূমিকা রাখতে হবে স্পিনারদের। তেমনটা হলে এখনো বেশ ভালোভাবেই খেলায় ফিরতে পারে সাকিব আল হাসানের দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

(প্রথম দিন শেষে)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৬৪.২ ওভারে ১৫৯/৬ (তামিম ৪৬, জয় ১০, শান্ত ২৬, এনামুল ২৩, লিটন ৫৩, সাকিব ৮, সোহান ৭, মিরাজ ৯, ইবাদত ২১*, শরিফুল ২৬, খালেদ ১ ; রোচ ০/৫৭, সিলস ৩/৫৩, জোসেফ ৩/৫০, ফিলিপ ২/৩০, রিফার ০/৬, মেয়ার্স ২/৩৫)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস:  ১৬ ওভারে ৬৭/০  (ব্র্যাথওয়েট ৩০*, ক্যাম্পবেল ৩২* ; শরিফুল ০/১৯, খালেদ ০/১৭, সাকিব ০/৯, ইবাদত ০/৮, মিরাজ ০/৯)

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

One of the two units of the Rooppur Nuclear Power Plant will be commissioned this December if transmission lines are ready although the deadline for the project’s completion has been extended to 2027.

6h ago