ব্যাটসম্যানদের টেকনিকে নয়, অন্য দুই সমস্যা চিহ্নিত করলেন আমিনুল

সাকিব, ডমিঙ্গো ও বুলবুল

অ্যান্টিগা টেস্ট হেরে আসার পর সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, ব্যাটসম্যানদের টেকনিকে সমস্যা আছে। এমনকি বাংলাদেশে টেকনিক্যালি সাউন্ড খুব বেশি ব্যাটসম্যান নেই। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গের আবার মত ছিল ভিন্ন। তার মতে টেকনিক নয়, মনস্ত্বত্ত্বিক বাধাই মূল কারণ।  সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল মনে করেন, রান খরায় থাকা ব্যাটারদের টেকনিকে নয় সমস্যা বরং অন্য জায়গায়।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)'র মাস্টার এডুকেটর  হিসেবে কর্মরত এই সাবেক তারকা দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে ভিন্ন দুটি বিষয় চিহ্নিত করেছেন। তারমতে কোন একটা সিরিজ সামনে রেখে প্রতিপক্ষের স্কোয়াড ও কন্ডিশন বিশ্লেষণ করে যে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, তা নিয়ে আছে বাংলাদেশের ঘাটতি।

এটাকে তিনি বিজ্ঞানের ভাষায় বলছেন, 'নিউরোলজিক্যাল ব্যাটিং ডেভোলাপমেন্ট'। যার ঘাটতি চোখে পড়েছে তার। দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানের মতে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, ১৩৩টি টেস্ট খেলার পরও কোন টেস্টের সঙ্গে টেস্টের সংযোগ ও সমন্বয় তৈরি করতে না পারায়। অর্থাৎ বাংলাদেশ টেস্টে নামে অনেকটা পরিকল্পনাহীন ও বিচ্ছিন্নভাবে।

সমস্যা কি টেকনিকে?

আমিনুলের মতে, 'টেকনিক যেটা বলছে সবাই। আমি ওটা একমত না। এখানে কয়েকটা বিষয় আছে। একটা ফিজিক্যাল টেকনিক একটা মেন্টাল টেকনিক। খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রয়োগ। আমি এখানে একটা গৎবাঁধা কথা বলতে চাইছি না। গৎবাঁধা কথা বলতে- বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের টেকনিক ভাল না। কি টেকনিক ভালো না? জাস্ট একটা কথা বলার জন্য বলে দেওয়া।'

'একটা ছেলে যেমন জয়। সে সাউথ আফ্রিকায় সেঞ্চুরি করল। শান্তর তো শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সেঞ্চুরি আছে। মুমিনুলের একটা সময় গড় ছিল ৮০। যদি টেকনিক ঠিক না থাকত তাহলে এই রানগুলো তারা কীভাবে করল। টেকনিকের থেকে বড় কথা যেটা মনে হয় প্রয়োগটা। প্রয়োগটা বলতে একটা খেলোয়াড়কে প্রস্তুত করা। যেই দেশের সঙ্গে খেলছে সেই দেশের উইকেট, সেই দেশের বোলিংয়ের বিপক্ষে তাদের কতটুকু প্রস্তুত করতে পারছি না। এই প্রস্তুতির একটা বিশাল গ্যাপ বাংলাদেশে। এটা মূল সমস্যা।'

'স্কোয়াড বিশ্লেষণ করে যে প্রস্তুতি নিতে হয়, আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাব, ওখানে কেমন উইকেটে খেলা হবে। কোন বোলারদের সামলাতে হবে। ওদের শক্তির জায়গা কি। স্কোয়াড বিশ্লেষণ করার পর একটা খেলোয়াড়কে যে প্রস্তুত করতে হয়ে, এক নম্বর আমাদের সেরকম কোন প্রস্তুতি হয় না।'

'নিউরোলজিক্যাল ব্যাটিং ডেভোলাপমেন্ট'

সাবেক অধিনায়ক তার বিশ্লেষণে বলেন,  'যেমন কেমার রোচের বল কীভাবে খেলব। ধরেন ওই যে (কাইল) মেয়ার্স, সে কিন্তু জোরে বল করে না। ও কিন্তু খুব মাথা খাটিয়ে বল করল। ওর কোন বলটা ভেতরে আসে, বাইরে যায়। তার সিমের পজিশনটা কি থাকে। এই জিনিসগুলোকে বিজ্ঞানের টার্মে বলে 'নিউরোলজিক্যাল ব্যাটিং' ডেপোলাপমেন্ট। এই কাজগুলো হয় না।'

russell domingo and jamie siddons

কোচদের তবে ভূমিকা কি?

'জাতীয় দলের কোচ তো একটা খেলোয়াড় তৈরি করে না। জাতীয় দলের কোচের কাজ হচ্ছে প্লেয়ারের যে অস্ত্রগুলো আছে সেগুলো কীভাবে ম্যানেজ করা হলো সেটা। সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ছোট ছোট এডজাস্টম্যান করে জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচরা। কাজ তো হয় নিচে।

'আমরা খুব সহজে বলে দেই টেকনিক ভাল না। টেকনিক তো আপনি একটা স্কুলের ছেলেকে নিয়ে কাজ করবেন। টেকনিকের ব্যাবহার করে বলেই তারা রান করে। খেলার জন্য যে প্রস্তুতি দরকার। কার বিরুদ্ধে খেলছে সেটা মাথায় রেখে সেটা হয় না। সেটা হয় না বলেই ধারাবাহিকতা হয় না আমাদের। প্রতিপক্ষ ও কন্ডিশন মাথায় রেখে আমরা প্রস্তুত হতে পারি না।'

বিচ্ছিন্নভাবে টেস্ট খেলে বাংলাদেশ

আমিনুল সবচেয়ে জোর দিয়ে যা বললেন তা হলো সংযোগ না থাকা। তার মতে বাংলাদেশ টেস্ট খেলে অনেকটা বিচ্ছিন্নভাবে,  'আজকে ১৩৩টা টেস্ট খেলার সারাংশ যদি তৈরি করেন। ১৩৩ টা টেস্ট খেলার পরে আপনি কি বলতে পারবেন আমাকের কোন লিংক আছে কিনা। যে প্রথম টেস্ট থেকে দ্বিতীয় টেস্ট। দ্বিতীয় টেস্ট থেকে তৃতীয় টেস্ট। এভাবে কোন লিঙ্ক নাই তো। আমরা বিচ্ছিন্নভাবে খেলছি। এটা একদম সহজ বাক্য। এইগুলো করাতে যে লোকগুলো কাজ করছে তারা কি করছে তাদের প্রশ্ন করা উচিত। কোন পরিকল্পনা নাই। পরিকল্পনা থাকলে এক লোক দিয়ে সব কাজ করাতেন?'

বাংলাদেশের টেস্ট ব্যাটারদের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে বিশ্লেষকরা নিয়মিত আলোচনা করছেন। আমিনুলের মতে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের থেকে এখন বাস্তবায়নের জায়গায় কাজ করা উচিত,  ' টেকনিকাল ব্যাখ্যা থেকে বড় হচ্ছে আপনি কি আসলেই অ্যাড্রেস করতে পারছেন? আমি দুইটা জিনিস বললাম আমরা কি টেস্ট বাই টেস্ট লিঙ্ক করতে পারি কিনা। আর একটা সিরিজে প্রতিপক্ষ ও কন্ডিশন বিচারে খেলোয়াড়দের কতটুকু প্রস্তুত করতে পারছি। এই দুটো মিলিয়ে দেখেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Trump says no summit deal reached with Putin over ending war in Ukraine

The anticlimactic end to the closely watched summit was in stark contrast to the pomp and circumstance with which it began

1h ago