টি-টোয়েন্টিতে সেই পুরনো ফল নতুন চেহারার বাংলাদেশের

২০৬ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় পুরো ওভার খেলে বাংলাদেশ করেছে ৬ উইকেটে ১৮৮ রান।
ছবি: এএফপি

ওয়েসলি মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজার হাফসেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে বিশাল লক্ষ্য দিল জিম্বাবুয়ে। জবাবে লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর পর অধিনায়ক নুরল হাসান সোহানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগাল টাইগাররা। শেষ ২ ওভারে হাতে ৫ উইকেট নিয়ে তাদের দরকার দাঁড়াল ৩২ রান। কিন্তু পেসার রিচার্ড এনগারাভা ১৯তম ওভারে মাত্র ৪ রান দেওয়ার পাশাপাশি ফেরালেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। সেখানেই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে গেল সফরকারীরা।

শনিবার হারারেতে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের কাছে ১৭ রানে হেরেছে নতুন চেহারার বাংলাদেশ। ২০৬ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় পুরো ওভার খেলে তারা করেছে ৬ উইকেটে ১৮৮ রান। অর্থাৎ এই সংস্করণে সেই ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দি থাকল রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। সবশেষ নয় ম্যাচে এটি তাদের অষ্টম হার।

নেতৃত্বের অভিষেকে ব্যাট হাতে আলো ছড়ালেও দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে পারেননি সোহান। ছয়ে নেমে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ২৬ বলের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে তিনি মারেন ১ চার ও ৪ ছক্কা।

দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় টাইগাররা। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে বাজে শটে পয়েন্টে ক্যাচ দেন ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার। ৮ বলে তিনি করেন ৪ রান। এই আঘাত সামলে দ্বিতীয় উইকেটে ৩৩ বলে ৫৮ রানের জুটি পায় বাংলাদেশ। সেখানে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন লিটন। তিনি পাল্টা আক্রমণে চড়াও হন জিম্বাবুয়ের বোলারদের ওপর।

পাওয়ার প্লে শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৬০ রান। অর্থাৎ লক্ষ্য তাড়ার জুতসই শুরু পায় তারা। কিন্তু সপ্তম ওভারে বিস্ময়কর কায়দায় আউট হয়ে যান লিটন। বাঁহাতি স্পিনার শন উইলিয়ামসের ডেলিভারিতে র‍্যাম্প শট খেলেন তিনি। বলে চলে যায় শর্ট ফাইন লেগে। এনগারাভা বল হাতে জমালেও ধরে রাখতে পারেননি। কিন্তু আউট হয়ে গেছেন ভেবে ততক্ষণে সাজঘরের দিকে হাঁটা দেন লিটন। সেই সুযোগে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে স্টাম্প ভেঙে দেন উইলিয়ামস।

দ্বিধায় থাকা মাঠের আম্পায়াররা দ্বারস্থ হন তৃতীয় আম্পায়ারের। তিনি দেন রানআউটের সিদ্ধান্ত। ১৯ বলে ৬ চারে লিটনের রান ৩২। এরপর ছোট ছোট আরও দুটি জুটি পায় বাংলাদেশ। কিন্তু গতি কমে যায় রানের। অনেকটা সময় ক্রিজে থাকা এনামুল হক বিজয় ২৭ বলে ২৬ রান করে শিকার হন রাজার। শান্তর আক্রমণাত্মক ইনিংস থামে ৩৭ রানে। ২৫ বল মোকাবিলায় ৩ চার ও ১ ছয় মেরে পেসার লুক জঙ্গুয়ের বলে ক্যাচ দেন তিনি।

ইনিংসের শেষ ৪ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৬০ রান। প্রথম ২ ওভারে ২৮ রান আনলেও পরের ২ ওভারে তারা করতে পারে মাত্র ১৪ রান। মোসাদ্দেক ফেরেন ১০ বলে ১৩ রানে। ২০তম ওভারে সোহান সবগুলো বল মোকাবিলা করলেও ১ ছক্কা হাঁকানো ছাড়া কিছু করতে পারেননি। বাকি ৪ রান আসে লেগ বাই থেকে। ফলে তীরে নোঙর ভেড়ানো হয়নি টাইগারদের।

জিম্বাবুয়ের পক্ষে জঙ্গুয়ে ২ উইকেট নেন ৩৪ রানে। তার পাশাপাশি উইকেটের স্বাদ নেন মাসাকাদজা, রাজা ও এনগারাভা। উইকেট না পেলেও ভীষণ নিয়ন্ত্রিত ছিলেন উইলিয়ামস। তার ২ ওভারে আসে ৭ রান। ব্যাটে-বলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন রাজা।

এর আগে বাংলাদেশের বোলারদের বেধড়ক পেটায় স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রান তোলে তারা। প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৭৪ রান তোলা ক্রেইগ আরভিনের দল পরের ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে যোগ করে আরও ১৩১ রান। ইনিংসের শেষ ৬ ওভারেই তারা জমা করে ৯১ রান!

পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৪৩ রান তুলেছিল জিম্বাবুয়ে। স্কোরবোর্ডে প্রতিপক্ষের এই সংগ্রহ নিয়ে তখন হয়তো খুশিই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তরুণ বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের করা দ্বাদশ ওভার থেকে পাল্টে যায় চিত্র। উইলিয়ামস তাকে ২ চার ও ১ ছক্কা মারলে ওই ওভার থেকে আসে ১৮ রান। এরপর প্রতি ওভারেই নিয়মিত বাউন্ডারি আসতে থাকে।

মাধেভেরে এক প্রান্ত আগলে রাখেন। উইলিয়ামসের বিদায়ের পর অন্য প্রান্তে তাণ্ডব চালান রাজা। তাতে ফুলে-ফেঁপে ওঠে স্বাগতিকদের পুঁজি। ১৯ ও ২০তম ওভারে ১৯ রান করে খরচ করেন যথাক্রমে শরিফুল ও মোস্তাফিজ।

আহত আবসরে যাওয়ার আগে মাধেভেরে ৪৬ বলে ৬৭ রান করেন ৯ চারের সাহায্যে। জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংকে গতি পাইয়ে দেওয়া উইলিয়ামস ৪ চার ও ১ ছক্কায় করেন ১৯ বলে ৩৩ রান। তৃতীয় উইকেটে তারা দুজনে যোগ করেন ৩৭ বলে ৫৬ রান।

এরপর বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে চতুর্থ উইকেটে মাধেভেরের সঙ্গে ৪৩ বলে ৯১ রানের জুটি গড়েন রাজা। মাত্র ২৩ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করা রাজা অপরাজিত থাকেন ৬৫ রানে। ২৬ বলের বিস্ফোরক ইনিংসে তিনি মারেন ৭ চার ও ৪ ছক্কা।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২ উইকেট নিলেও সবচেয়ে খরুচে ছিলেন বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। তার ৪ ওভার থেকে আসে ৫০ রান। অফ স্পিনে ১ উইকেট নিতে মোসাদ্দেক ৩ ওভারে দেন ২১ রান। এছাড়া, ৪ ওভার করে হাত ঘুরিয়ে শরিফুল ৪৫, তাসকিন আহমেদ ৪২ ও নাসুম আহমেদ ৩৮ রান খরচ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshi students terrified over attack on foreigners in Kyrgyzstan

Mobs attacked medical students, including Bangladeshis and Indians, in Kyrgyzstani capital Bishkek on Friday and now they are staying indoors fearing further attacks

2h ago