‘এটা একটা চমৎকার টিম এফোর্ট’

ঐতিহাসিক জয়ের পেছনে বাংলাদেশের চমৎকার দলগত প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। ছবি: সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে বুধবার বর্তমান টেস্ট চ্যাম্পিয়নদেরকে ৮ উইকেটে হারিয়ে দিলো বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের পর নিজেদের মাঠে প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশের কাছেই প্রথম টেস্ট হারল কিউইরা। আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আসরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এটাই প্রথম জয়।

এই ঐতিহাসিক জয়ের পেছনে বাংলাদেশের চমৎকার দলগত প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।

বুধবার রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমার কাছে মনে হয়েছে যে এটা একটা চমৎকার টিম এফোর্ট। বোলিং ও ব্যাটিংয়ের বিষয়ে বলব যে চমৎকার। ফিল্ডিংয়ের বিষয়ে বলব যে কিছু ক্যাচ ড্রপ হয়েছে, কিছু চমৎকার ক্যাচও আমরা ধরেছি। এটা ভালো একটা জ্যামিং কিংবা মিক্স-আপ। এখানে কোনো হানড্রেড নেই, কিন্তু বড় বড় অনেকগুলো ইনিংস হয়েছে। যেগুলো সহজে আমাদের হয় না। এক কথায় অসাধারণ। তবে, এটাকে ধরে রাখার জন্য কীভাবে আমরা এই অসাধারণ পারফরম্যান্সটা করলাম, সেদিকে নজরদারিটা রাখতে হবে।'

'টেস্ট ক্রিকেটে আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে না পারলেও কোনো একদিন ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ, যাদের সঙ্গে আমরা কখনো ভালো করতে পারিনি, তাদের সঙ্গে আমাদের জয়ের শুরু হবে- সেই আশাটা সব সময় ছিল। তবে সেটা যে নতুন একটা দলের মাধ্যমে সূচনাটা হবে এটা ভাবিনি। এই দলটা তাদের পারফরম্যান্সের মাধ্যমে আমাদের বিস্মিত করেছে। আমি বলব, শুধু বাংলাদেশ না সমগ্র ক্রিকেট বিশ্বে তারা বিস্ময় তৈরি করেছে। টপ মোস্ট টেস্ট প্লেয়িং দেশকে এত বড় একটা ব্যবধানে ৮ উইকেট এবং ওভারের হিসাবেও এটা খুব ভালো অর্জন।' 

সাবেক এই ক্রিকেটার বলেন, 'জয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যাশার একটা ব্যাপার থাকে, আরেকটি বিষয় থাকে সুযোগ। ভালো করার জন্য সবগুলো বিষয় সম্মিলিত হয়ে জয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। সাকিব (আল হাসান), তামিম (ইকবাল) ছাড়া নিউজিল্যান্ডের মাটিতে গিয়ে নতুন একটা দলের জয় ছিনিয়ে নিয়ে আসাটা কল্পনার বাইরে ছিল। তা ছাড়া, টিম ম্যানেজমেন্টের জন্যও একটা বড় পরীক্ষা ছিল। তাদেরকেও সাধুবাদ জানাতে হবে।'

'এর বাইরে কিছু যদি বলতে হয় তাহলে বলব, ইবাদতের (হোসেন) বোলিং স্পেলটা ছিল অসাধারণ,' যোগ করেন তিনি।

'নিউজিল্যান্ডের (রস) টেইলর যে ভালো খেলে, কোনো ইনিংসে টেইলর কিছু করতে পারেনি। এই জিনিসগুলো সাধারণত কখনো হয় না। সাধারণত আমরা উপরের দিকে ৪-৫টা উইকেট নিয়ে নিলেও পরের দিকে ব্যাটসম্যানরা এসে তাদের অভাব পূরণ করে ফেলে। এবার আমরা ঘুরে দাঁড়াতে দেইনি। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে খুবই ভালো উইকেট ছিল। তার মধ্যে কিছু অনিয়মিত বাউন্স ছিল। ক্রিটিকাল সুইং তো ছিলই। তার মধ্যে আমরা বলব যে একটা ভালো সময় আমরা ব্যাট করতে পেরেছি এবং মেধার সঙ্গে ব্যাট করতে পেরেছি। অযাচিত শট খেলতে যাইনি। যখনই আমরা অযাচিত শট খেলতে গেছি, তখনই আমরা আউট হয়ে গেছি। যেমন লিটন দাসের আউটটা। এ ধরনের শট খেলতে গিয়ে আমরা এর আগেও অনেক বেশি আউট হয়েছি। এই ধরনের শটগুলো আমরা এই সিরিজে পরিহার করছিলাম, সে জন্য আমরা একটা ফলাফল দেখতে পেয়েছি।'

'আমার কাছে মনে হয়েছে, সবচেয়ে বড় সহায়ক ছিল, যে ধরনের বাউন্স আমরা আশা করছিলাম যে নিউজিল্যান্ডে আমাদের সবচেয়ে বেশি ভোগাবে, এই উইকেট থেকে সেই বাউন্সটা আদায় করতে পারেনি অথবা এই উইকেট সেই বাউন্স অফার করেনি। যেটা আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য কিছুটা কমফোর্ট জোন দিয়েছে,' বলেন তিনি।

'এই সুইংয়ের পাশাপাশি বাউন্সটাও যোগ হলে বোলিংয়ের লেংথ ভিন্ন হয়ে যাবে। সবকিছু ভিন্ন হয়ে যাবে। সেটা আমাদের ভোগাতে পারে। সেটাই চিরাচরিত নিউজিল্যান্ডের চ্যালেঞ্জ। সেই রকম চ্যালেঞ্জ আমাদের ফেস করতে হয়নি। আমাদের নতুন ব্যাটসম্যানদের কোনোভাবেই খাটো করতে চাই না। যারা আউট অব ফর্ম ছিল, লিটন দাস, মমিনুল (হক), (নাজমুল হোসেন) শান্ত। এটা এক ধরনের মিরাকল। নতুন এসেই (মাহমুদুল হাসান) জয়ের একটা বড় ইনিংস খেলা। মানুষের লাইফ টাইমে এরকম স্বপ্নের মতো স্পেল হয়, ইবাদতের সেটা এই ম্যাচেই হয়ে যাওয়া।'

'এই টেস্ট আমাদের খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করবে' উল্লেখ করে লিপু বলেন, 'ক্রাইস্টচার্চের উইকেট কী অফার করে সেই ড্রিলগুলো এখন থেকে করা উচিত। ধারাবাহিকভাবে আমাদের ভালো পারফর্ম করা কঠিন সেটা আমরা জানি। সেখানে কী কৌশল অবলম্বন করতে হবে এটা টিমের অ্যানালিস্ট তাদের দেখাবে যে ক্রাইস্টচার্চের উইকেট থেকে কেমন বাউন্স সাধারণত হয়।'

'তবে আমি নিশ্চিত যে তারা সেখানে ঘাসের আকার অনেক বেশি রাখবে। আমাদের ভোগানোর জন্য যাবতীয় কঠিন কন্ডিশন তারা সৃষ্টি করবে। আমাদের অনেক বড় একটা যুদ্ধে অবর্তীর্ণ হতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Representational image of Bangladeshi migrant workers.

UN experts express dismay over situation of Bangladeshi migrants in Malaysia

UN experts today expressed dismay about the situation of Bangladeshi migrants in Malaysia, who had travelled there in the hope of employment after engaging in the official labour migration process

Now