বিশাল হারে সান্ত্বনা হয়ে থাকল লিটনের নান্দনিক সেঞ্চুরি

Liton Das
ছবি: সংগৃহীত

প্রথম দুদিনেই বড় হারের সমস্ত আয়োজন হয়ে গিয়েছিল। এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে কয়েকজনকে খেলতে  হতো লম্বা ইনিংস। লম্বা ইনিংস খেললেন কেবল লিটন দাস। বাকি সব জঞ্জালের ভিড়ে সেই ইনিংস যেন হয়ে থাকল মায়াবী বিভ্রম, ঘোর লাগা সব শটে দলের চরম বিপর্যয়ে বুক চিতিয়ে মোহনীয় ব্যাটিংয়ে লিটন করলেন চোখ ধাঁধানো এক সেঞ্চুরি। অন্য পাশে আর কেউ বলার মতো সঙ্গ দিতে না পারায় তিনদিনেই বাংলাদেশ হারল ইনিংস ব্যবধানে।

মঙ্গলবার ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ ইনিংস ও  ১১৭ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। প্রথম দিন পর এমন ফলেরই অপেক্ষা ছিল। কিন্তু বড় হারের আগে সব আলো যেন নিজের দিকে টেনে নিলেন লিটন। কম্পাস টেনে দেওয়ার মতো স্ট্রেট ড্রাইভ, চাবুকের মতো পুল, নিখুঁত স্কয়ার কাট, মনোহর কাভার ড্রাইভে রাঙিয়ে গেছেন নিজের ইনিংস। অথচ এমন দিনে দলের ভাগ্যে লেখা বড় হার। 

মাউন্ট মাঙ্গানুইতে ঐতিহাসিক জয় পাওয়ায় সিরিজ অবশ্য হারছে না মুমিনুল হকের দল। এই প্রথম নিউজিল্যান্ড থেকে সিরিজ ড্র করে ফিরছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। প্রথম টেস্ট হারের পর ঘুরে দাঁড়িয়ে রস টেইলরের বিদায়ী টেস্ট স্মরণীয় করে রাখল স্বাগতিকরা।

প্রতীকী হিসেবেই যেন বাংলাদেশের শেষ উইকেটটা নিলেন টেইলরই। এমনিতে বল করেন না তিনি। ১১২ টেস্টে কেবল ২ উইকেট ছিল তার। তৃতীয় উইকেট পেলেন জীবনের শেষ টেস্টে।

প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ড টম ল্যাথামের ডাবল সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৫২১ করার পর জবাব দিতে নেমেই সব গোলমাল হয়ে যায় বাংলাদেশের। চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১২৬ রানে গুটিয়ে ফলোঅনে পড়তে হয়।

তৃতীয় দিনে ফলোঅনে বিশাল রানের বোঝা মাথায় নিয়ে নেমে শুরুটা হয় সতর্ক। দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও নাঈম শেখ হাঁটেন ধীরলয়ে। উইকেটে প্রথম ঘণ্টা কাটিয়েও দিয়েছিলেন তারা। এরপর কাইল জেমিসনের বলে টম ব্লান্ডেলের রিফ্লেক্স ক্যাচে বিদায় নেন সাদমান। তিনে নেমে নাজমুল হোসেন শান্ত ছুটছিলেন ওয়ানডে মেজাজে।

নেইল ওয়েগনারের সঙ্গে চলছিল তার শীতল লড়াই। ওয়েগনারের বাউন্সারে কুঁকড়ে না গিয়ে সীমানা ছাড়ার দিকে মন দেন তিনি। ওয়েগনারও দিতে থাকেন একের পর এক শর্ট বল। ফাইন লেগে ফিল্ডার রেখে পাতেন ফাঁদ। ২৯ রান করা শান্ত ধরা দেন সেই ফাঁদে।

অভিষিক্ত নাঈম প্রথম ইনিংসে ফিরেছিলেন খালি হাতে। দ্বিতীয় ইনিংসেও তাকে দেখাচ্ছিল নড়বড়ে। তবে টিকে গিয়েছিলেন। একশোর কাছাকাছি বল খেলে থিতু হওয়ার পর তাকে ছাঁটেন সাউদি। লাঞ্চের পর সাউদির বাইরের বলে ব্যাট লাগিয়ে স্লিপে দেন ক্যাচ। আবারও ছোবল মেরে তা হাতে জমান ল্যাথাম।

অধিনায়ক মুমিনুল ক্রিজে এসে ছিলেন অস্বস্তিতে। অবশ্য কিছু সময় পর মানিয়ে রান বের করছিলেন তিনি। লিটনের সঙ্গে জুটিও জমার আভাস ছিল। কিন্তু ৩৭ রান করে মুমিনুলও ক্যাচ দেন স্লিপে। প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা ইয়াসির আলি এসেই ফিরে যান দ্রুত।

১০৫ রানে ৩ উইকেট পড়লে ক্রিজে এসেছিলেন লিটন। তিনি আসার খানিক পর পড়ে যায় এই দুই উইকেট। এরপর সোহানকে এক পাশে রেখে গড়েন শতরানের জুটি। নান্দনিক ব্যাটিংয়ে মেলে ধরেন স্ট্রোকের পসরা। ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে চলে তার শৈল্পিক পথচলা। এক পাশে সঙ্গী হারনো চললেও লিটন ঠিকই পেয়ে যান তার দ্বিতীয় টেস্ট শতক।

ক্রাইস্টচার্চে মঙ্গলবার লিটন শুরুতে ছিলেন সতর্ক, ছুটছিলেন ধীরলয়ে। পরে মেলে ধরেন ডানা। প্রথম ১৫ রান করেন ৪৭ বলে, পরের ৮৫ রান আসে কেবল ৬০ বলে। এত দ্রুত গতিতে খেললেও একদমই ঝুঁকিপূর্ণ কোন শট ছিল না। খেলেছেন ক্রিকেটীয় সব শটই।

সেঞ্চুরির পথে ৬ষ্ঠ উইকেটে লিটনকে সঙ্গ সোহান। জুটিতে ১০৫ বলে আসে ১০১ রান। যাতে সোহানের অবদান ৫৪ বলে ৩৬। সোহান ফেরার পরই উলটোপথে হাঁটে বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজ করেন মাত্র ৩ রান। পরে তাসকিন আহমেদকে একপাশে রেখে ১০৭ বলে সেঞ্চুরি তুলেন লিটন।

সেঞ্চুরি করার খানিক পরই অবশ্য আউট থামে তার ছুটে চলা। জেমিসনের ভেতরে ঢোকা বলে ১০২ রানে বিদায় লিটনের। ১১৪ বলের ইনিংসে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান মেরেছেন দৃষ্টিননন্দন ১৪ চার ও ১ ছক্কা। তিনি ফিরে যাওয়ার পর বাংলাদেশের ইনিংসও থেমে যায় দ্রুত।

লিটনের অমন দাপুটে দিনেও প্রথম টেস্টে ঐতিহাসিক জয় পেয়ে সিরিজে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টে করতে পারেনি লড়াই। বোলিং হয়নি একদম জুতসই। প্রথম ইনিংসে দুজন ছাড়া হতাশ করেন সবাই। দ্বিতীয় ইনিংসে হাসে কেবল লিটনের ব্যাট। সব মিলিয়ে এই টেস্টেও কিছু প্রাপ্তি থাকছে বাংলাদেশের। সিরিজে থাকছে বড় প্রাপ্তি। তবে কঠিন কন্ডিশনে ধারবাহিকভাবে ভালো খেলার ঘাটতি নিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা হচ্ছে বড়। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ১২৮.৫ ওভারে ৫২১/৫ (ইনিংস ঘোষণা)  (ল্যাথাম ২৫২,  ইয়ং ৫৪, কনওয়ে ১০৯, টেইলর ২৮, নিকোলস ০, মিচেল ৩, ব্ল্যান্ডেল ৫৭*, জেমিসন ৪*   ; তাসকিন  ০/১১৭ , শরিফুল ২/৭৯,  ইবাদত ২/১৪৩, মিরাজ ০/১২৫, শান্ত ০/১৫, মুমিনুল ১/৩৪)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪১.২ ওভারে ১২৬ (সাদমান ৭, নাঈম ০, শান্ত ৪, মুমিনুল ০, লিটন ৮, ইয়াসির ৫৫ , সোহান ৪১, মিরাজ ৫, তাসকিন ২, শরিফুল ২, ইবাদত ০*  ; সাউদি ৩/২৮  , বোল্ট ৫/৪৩,   জেমিসন ২/৩২, ওয়েগনার ০/২৩ )

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৭৯.৩ ওভারে ২৭৮ (সাদমান ২১, নাঈম ২৪, শান্ত ২৯, মুমিনুল ৩৭, লিটন ১০১, ইয়াসির ২, সোহান ৩৬, মিরাজ ৩, তাসকিন ৯*, শরিফুল ০, ইবাদত ৪; সাউদি ১/৫৪, বোল্ট ০/৪২, জেমিসন ৪/৮২, ওয়েগনার ৩/৭৭, মিচেল ১/১৮, টেইলর ১/০)

ফল: নিউজিল্যান্ড ইনিংস ও ১১৭ রানে জয়ী।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus gives election preparation deadline

Complete polls preparations by December: Yunus

Asks to review if those who served as polling officers in past three elections shall not be assigned the same roles again

1h ago