এমন সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন আফিফ

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

৮ বলে চাই তখন ১ রান। মহাবিপদ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে হাতের মুঠোয় তখন জয়। গুলবাদিন নাইবের অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে মিড উইকেট দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দিলেন আফিফ হোসেন। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে আফগানিস্তানকে হারানোর আনন্দে মেতে উঠল বাংলাদেশ দল। অপর প্রান্তে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ ভাসলেন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে। লাফিয়ে উঠলেন, এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন স্ট্রাইক প্রান্তের সতীর্থকে। কিন্তু আফিফ থাকলেন তার গোটা ইনিংসের মতো শান্ত মেজাজে।

বুধবার আফগানদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আফগানদের ২১৫ রানে অলআউট করে তারা ম্যাচ জিতেছে ৭ বল আর ৪ উইকেট হাতে রেখে। ১১ চার ও ১ ছক্কায় আফিফ খেলেন ১১৫ বলে ৯৩ রানের অপরাজিত ইনিংস। তার সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ১৭৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে রেকর্ড গড়া মিরাজ অপরাজিত থাকেন ১২০ বলে ৮১ রানে। তিনি মারেন ৯ চার।

বাঁহাতি আফিফ ক্রিজে যান ইনিংসের অষ্টম ওভারে। অফ স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে সাকিব আল হাসান বোল্ড হওয়ার পর। বাংলাদেশের রান তখন কেবল ২৮। নেই ৫ উইকেট। সাকিবের আগে ফজল হক ফারুকির শিকার হয়ে ততক্ষণে সাজঘরে ফিরে গেছেন লিটন দাস, অধিনায়ক তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও অভিষিক্ত ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে আফিফের জুটি জমেনি। বাজে শটে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ ক্যাচ দেন লেগ স্পিনার রশিদ খানের বলে। তাতে দ্বাদশ ওভারে মাত্র ৪৫ রানে পড়ে যায় স্বাগতিকদের ৬ উইকেট। সাদামাটা লক্ষ্যটা হয়ে যায় অনেক দূরের কণ্টকাকীর্ণ পথ।

এরপর শুরু হয় আফিফ আর মিরাজের অবিশ্বাস্য এক লড়াই। শুরু থেকেই ঠাণ্ডা মাথায় খেলেন দুজনে। বিশেষ করে, আফিফ ছিলেন অনেকটা নির্ভার। তার কাছ থেকে আত্মবিশ্বাস পেয়ে মিরাজও হয়ে ওঠেন নিজের ওপর আস্থাশীল। ম্যাচের বাকি সময়টা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য কাটে স্বপ্নের মতো। অভিজ্ঞদের ব্যর্থতার দিনে দুই তরুণ ব্যাট হাতে জ্বলে উঠে হয়ে ওঠেন আসরের মধ্যমণি।

বাংলাদেশকে জিতিয়ে গর্বিত আফিফ ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে জানান, নিজেকে মেলে ধরার বড় সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করতে চাননি তিনি, 'দেশের জন্য ভালো খেলাটা সব সময় গর্বের একটা ব্যাপার। তো চেষ্টা থাকে সবসময় ভালো করার। কোনো সময় হয়, কোনো সময় হয় না। তো আজকে যেহেতু বড় একটা সুযোগ ছিল, এরকম বড় সুযোগ পাওয়া যায় না। বড় সুযোগ পেয়েছি, এটা কাজে লাগাতে চেয়েছি।'

২২ বছর বয়সী আফিফ এই ম্যাচে নামেন কেবল সাত ওয়ানডের অভিজ্ঞতা নিয়ে। অষ্টম ম্যাচে এসে তিনি পান ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরির দেখা। নিজের ব্যাটিং নিয়ে স্বল্পভাষী এই ক্রিকেটারের মন্তব্য, 'আমি যখন ব্যাটিং করি, আমার মাথায় অনেক বেশি পরিকল্পনা থাকে না। আমি কেবল চিন্তা করি, (নির্দিষ্ট) এই বল আমি কীভাবে খেলব, ওই বল আমি কীভাবে খেলব।'

ফিফটি ছোঁয়ার পরও আফিফ ছিলেন ভাবলেশহীন। ব্যাট উঁচিয়ে উদযাপন করেননি। তিনি যেন খুব ভালোভাবে বুঝে নিয়েছিলেন, ব্যক্তিগত অর্জনেই তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে না, তরী ভেড়াতে হবে একদম তীরে। মিরাজকে যোগ্য সঙ্গী হিসেবে পাওয়ার দিনে বাহারি সব শটের পসরা মেলে ধরে দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়ে বিজয়ীর বেশেই মাঠ ছাড়েন আফিফ। আফগানদের তিন স্পিন ত্রয়ী রশিদ খান, মুজিব উর রহমান ও মোহাম্মদ নবি আর দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠা পেসার ফারুকিকে সামলান কর্তৃত্বের সঙ্গে, দক্ষতা দিয়ে।

বিশ্বমানের বোলারদের সঙ্গে দ্বৈরথে জিতে আফিফের কণ্ঠে সন্তুষ্টি ঝরেছে নিজের ব্যাটিং নিয়ে, 'আমার কাছে আজকের ইনিংসটা অবশ্যই তুলনামূলকভাবে সেরা। কারণ, আজকের ইনিংসটা বিশ্বমানের বোলারদের বিপক্ষে ছিল। অনেক হিসাব করে তাদের বিপক্ষে খেলতে হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

22 sectors still pay wages below poverty line

At least 22 sectors in Bangladesh continue to pay their workers much less than what is needed to meet basic human needs.

4h ago