নিজের উইকেটের মূল্য বুঝতে পেরেই পরিবর্তন লিটনের

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সামর্থ্য নিয়ে কখনোই সন্দেহ ছিল না। দেশের অন্যতম সেরা প্রতিভাবান হওয়ায় সুযোগও পেয়েছেন অনেক। কিন্তু তারপরও পেরে উঠছিলেন না। হাহাকারটাই ছিল বেশি। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখেও পড়েছেন। তবে গত এক বছরে বদলে গেছে অনেক কিছুই। আগের মতো আর আশা জাগিয়ে হুটহাট আউট হন না লিটন দাস। হাহাকার পরিণত হয়েছে উচ্ছ্বাসে। হঠাৎ করেই বা কেন এতো পরিবর্তন?

অভিষেকের পর নিজেকে সে অর্থে প্রমাণ করতে না পারা লিটন নিজের জাত ২০১৮ সালে প্রথমবার দেখিয়েছিলেন লিটন। ভারতের বিপক্ষে এশিয়াকাপে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। কিন্তু এরপর ফের ব্যর্থতার খোলসে ঢুকে যান তিনি। তবে ২০০০ সালের পর ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা বেড়েছে চোখে পড়ার মতোই।

সাত বছরের ক্যারিয়ারে ৪৯ ইনিংসে ৫টি সেঞ্চুরি ও ৩টি হাফসেঞ্চুরিতে ৩২ গড়ে ১৪৭২ রান করেছেন লিটন।এরমধ্যে প্রথম পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩৩ ইনিংসে ২৪.৭৭ গড়ে করেছেন ৭৬৮ রান। এ সময়ে কেবল একটি সেঞ্চুরি এবং তিনটি অর্ধশতক রয়েছে তার। ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৬ ইনিংসে ৪৬.৯৩ গড়ে করেন ৭০৪ রান। এ সময়ে করেন চারটি সেঞ্চুরি।

পরিবর্তনটা নজর এড়ায়নি কেউরই। সংবাদ সম্মেলনে স্বাভাবিক উঠে আসে এ প্রশ্ন। নানান প্রশ্নের মাঝে একটা কথার প্রতিধ্বনি যেন হলো বারবার, 'আমি এ জিনিসটা নিয়ে চিন্তা করছি, ভাবনা করছি যে, আমার উইকেটের একটা মূল্য আছে। তো নিজের মূল্যটা দিচ্ছি। আশা করি সামনেও দিতে পারবো।'

নিজের উইকেটের মূল্য বুঝেছেন লিটন। তার উইকেট যে কতোটা মূল্যবান তা আরও একবার ক্রিকেট বিশ্ব দেখল আজই। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুক্রবার দৃষ্টিনন্দন এক সেঞ্চুরি হাঁকালেন লিটন। মূলত তার ব্যাটে চড়েই দারুণ এক জয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। উঠেছে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। প্রথম দল হিসেবে পেয়েছে ১০০ পয়েন্ট।

এদিন ১২৬ বলে ১৩৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ ও সিরিজ জয়ের ভিত গড়ে দেন লিটন। সেখানে ইমারত গড়েন বোলাররা। অথচ অসাধারণ এ ইনিংসের পথে নিঃসন্দেহে আতঙ্কের নাম ছিলেন আফগানদের তিন স্পিনার। মূল দুই অস্ত্র রশিদ খান ও মুজিব উর রহমানকে সামলেছেন দারুণভাবে।। অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবিও পাত্তা পাননি।

রশিদ-মুজিবের বিপক্ষে মাইন্ডসেটের এমন পরিবর্তন প্রশ্নে আরও একবার মনে করান সেই কথা। বদলে গেছেন লিটন। হাসির ছলেই তাই বলেন, 'আমরা সিনিয়র হচ্ছি না? আমরাও তো ম্যাচ খেলে খেলে উন্নতি করছি।'

'অবশ্যই যেকোনো একটা নতুন ব্যাটার যখন ক্যারিয়ার শুরু করে, এসব বোলিংয়ের বিপক্ষে খেলে তাদের জন্য কাজটা কঠিন। এখন তো আমরা যারা খেলছি আমরা সবাই... আমি ৫ বছর খেলে ফেলেছি, আফিফরা ২-৩ বছর খেলেছে... তাদের তো একটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে ক্রিকেটের। আমার মনে হয়, এই জিনিসটা নিয়ে আমরা কেউ আর ঐভাবে চিন্তা করি না। আমরা শুধু ম্যাচে কীভাবে কাকে ব্যাটিং করবো সেই প্ল্যানিংটা সাজানোই মূল।'

নিজের এমন পরিণত ব্যাটিংয়ের রহস্যটাও জানান এ ব্যাটার, 'জিনিসটা হচ্ছে আপনি কীভাবে প্ল্যানিং করছেন। গেমটাকে কীভাবে নিয়ে চিন্তা করতেছেন। আমি চাইলে হয়তো শুরুর দিকে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে মেরে দিতে পারতাম। তাতে কী হতো? চার বা ছয়। কিন্তু সেটা হাই রিস্ক থাকতো যে একটা উইকেট চলে যাচ্ছে। এখন আমার উইকেট যাওয়া মানে তো টিম প্রেশারে। আমার মনে হয় যে এই জিনিসটা নিজে থেকে পরিবর্তন করা প্রত্যেক ব্যাটারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।'

 

Comments

The Daily Star  | English

UN says cross-border aid to Myanmar requires approval from both govts

The clarification followed Foreign Adviser Touhid Hossain's statement on Sunday that Bangladesh had agreed in principle to a UN proposal for a humanitarian corridor to Myanmar's Rakhine State

1h ago