বাজে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের বড় হার

ব্যাটিং ব্যর্থতায় অল্প রানে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। মামুলি লক্ষ্য তাড়ায় উড়ন্ত শুরু পেল আফগানিস্তান। টাইগারদের সাদামাটা বোলিং তেমন পরীক্ষা নিতে পারল না তাদের।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ছন্দে থাকা ওপেনার লিটন দাস একাই করলেন ৮৬ রান। বাকি দশ জন মিলে আনতে পারলেন কেবল ৯৭। ব্যাটিং ব্যর্থতায় অল্প রানে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। মামুলি লক্ষ্য তাড়ায় উড়ন্ত শুরু পেল আফগানিস্তান। টাইগারদের সাদামাটা বোলিং তেমন পরীক্ষা নিতে পারল না তাদের। সঙ্গে যোগ হলো একের পর এক ক্যাচ মিসের মহড়া। তিন তিনবার জীবন পাওয়া রহমানউল্লাহ গুরবাজের সেঞ্চুরিতে আফগানরা পেল সান্ত্বনার জয়।

সোমবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। আগের দুই ম্যাচ জেতায় অবশ্য সিরিজ আগেই ঘরে তোলা নিশ্চিত হয়েছে তাদের।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৬.৫ ওভারে বাংলাদেশ অলআউট হয় মাত্র ১৯২ রানে। অথচ ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেট ছিল দারুণ ব্যাটিং সহায়ক। জবাবে অনায়াসে খেলে ৪০.১ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৩ রান তুলে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় আফগানিস্তান।

আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। তাদের পয়েন্ট ১৫ ম্যাচে ১০০। তবে আফগানদের কাছে হারে গুরুত্বপূর্ণ ১০ পয়েন্ট হাতছাড়া হলো রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যদের। সেই সঙ্গে পাকিস্তানকে টপকে ওঠা হলো না ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বরে। ৯১ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে সাতে রয়েছে বাংলাদেশ। ২ পয়েন্ট বেশি নিয়ে ছয়ে অবস্থান করছে পাকিস্তান।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ওপেনার গুরবাজ অপরাজিত থাকেন ১১০ বলে ১০৬ রানে। তার ব্যাট থেকে আসে ৭ চার ও ৪ ছক্কা। ওপেনিং জুটিতে রিয়াজ হাসানের সঙ্গে ৯৩ বলে ৭৯ ও দ্বিতীয় উইকেটে রহমত শাহর সঙ্গে ১২৩ বলে ১০০ রান যোগ করেন তিনি। গুরবাজ অবশ্য বেঁচে যান তিন দফা। ৬০ ও ৬৩ রানে থাকাকালে তার ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। মাঝে ব্যক্তিগত ৬১ রানে ফাইন লেগে তার ক্যাচ ফেলেন মাহমুদউল্লাহ। তিনবারই দুর্ভাগা বোলার ছিলেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম।

রিয়াজ ৪৯ বলে ৩৫ করে স্টাম্পড হন সাকিব আল হাসানের বলে। দলকে জয়ের একদম কাছে পৌঁছে দেওয়া রহমতও হন স্টাম্পড। তার হন্তারক মেহেদী হাসান মিরাজ। এই অফ স্পিনার পরে এলবিডাব্লিউ করে টিকতে দেননি আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদিকে। কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচে ফেরার আর উপায় নেই বাংলাদেশের। নাজিবউল্লাহ জাদরানকে নিয়ে বাকি থাকা ছোট পথটা পাড়ি দেন গুরবাজ।

অল্প পুঁজি নিয়ে ন্যূনতম লড়াই করতে দরকার ছিল দুর্দান্ত বোলিং। কিন্তু শুরু থেকেই উল্টো চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশের বোলাররা। প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না খুইয়ে আফগানরা আনে ৫৭ রান। পরেও রান তোলার এই গতিতে লাগাম দিতে পারেনি স্বাগতিকরা, পারেনি প্রয়োজনের মুহূর্তে উইকেট আদায় করে নিতে।

মিরাজ ২ উইকেট নেন ৩৭ রানে। উইকেটের দেখা পেতে সাকিবের খরচা ৪৭ রান। আগের দুই ম্যাচের তুলনায় বেশ বিবর্ণ ছিলেন তাসকিন আহমেদ। তার ৬ ওভারে আসে ৩৪ রান। মোস্তাফিজুর রহমান উইকেটশূন্য থাকেন ২৪ রান দিয়ে।

এদিনও কোনো দ্বিধা না রেখে ব্যাটিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম। সতর্ক শুরুর পর দলকে প্রথম অস্বস্তি উপহার দেন তিনিই। প্রথম দুই ম্যাচের মতো এদিনও বাঁহাতি পেসার ফজল হক ফারুকির আড়াআড়ি বল খেলতে অসুবিধা হচ্ছিল তার। আউটও হন তেমনই এক ডেলিভারিতে। প্রথম দুই ম্যাচ থেকে তফাৎ হলো এবার এলবিডব্লিউয়ের বদলে বোল্ড হন তামিম। ২৫ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ১১ রান। ভাঙে ৪৩ রানের উদ্বোধনী জুটি।

লিটনের সঙ্গে মিলে দ্বিতীয় উইকেটে অবশ্য ভালো জুটি পান সাকিব। ৬৯ বলে তাদের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৬১ রান। থিতু হওয়া সাকিব ফেরেন ঢিলেঢালা এক শটে। আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের বল স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন তিনি। ৩৬ বলে তার রান ৩০।

আগের ম্যাচে লিটনের সঙ্গে রেকর্ড জুটি গড়লেও এবার ব্যর্থ মুশফিক। লেগ স্পিনার রশিদ খানের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। ইয়াসির আলি রাব্বি অভিষেকে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিং পাননি। এবার দলের চাপে সুযোগ পেয়ে করেন কেবল ১ রান। তাকেও ছাঁটেন রশিদ।

অন্যপ্রান্তে আসা-যাওয়ার মিছিল চললেও লিটন ছিলেন আশার প্রতীক হয়ে। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দিকেই এগোচ্ছিলেন তিনি। খেলছিলেন অনায়াসে। দলের ভরসা এই ডানহাতি অবশ্য তিন অঙ্কে যেতে পারেননি। কমে আসা রান রেট বাড়ানোর চেষ্টাতেই কিনা মোহাম্মদ নবির বলে খেলেন স্লগ সুইপ। তার আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সতর্ক ঢঙে। কিন্তু টাইমিংয়ের গড়বড় করে ক্যাচ দেন লং অনে গুলবাদিন নাইবের হাতে। 

প্রথম ম্যাচের হিরো আফিফ হোসেন ও মিরাজ ছিলেন আসা যাওয়ার মাঝে। আফিফকে ফেরান নবি, মিরাজ হন রান আউট। তাসকিনকে তুলে নেন রশিদ। শেষ দুই ব্যাটার হন রান আউট। আফগানদের হয়ে সেরা বোলিং তাদের শীর্ষ তারকা রশিদের। তিনি ৩৭ রান নেন ৩ উইকেট।

দ্বিতীয় ওয়ানডের মতো দলের হয়ে এদিনও সর্বোচ্চ লিটনের। ১১৩ বলে ৭ চারে ৮৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে। শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থাকা মাহমুদউল্লাহ ৫৩ বলে করেন ২৯ রান। তার ব্যাট থেকে আসেনি একটি বাউন্ডারিও।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago