লিটন-মুশফিকের ব্যাটে গর্জন, বাংলাদেশের রেকর্ড সংগ্রহ

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বঙ্গোপসাগরের খুব কাছেই অবস্থান চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের। এই মাঠে শুক্রবার শোনা গেল গর্জন। ঢেউয়ের নয়! লিটন দাসের ব্যাটের গর্জন! মুশফিকুর রহিমের ব্যাটের গর্জন! চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরির স্বাদ নিলেন লিটন। মুশফিক থামলেন তিন অঙ্ক থেকে সামান্য দূরে। তাদের নৈপুণ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে রানের পাহাড়ে চড়ল বাংলাদেশ।

তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে আলো ছড়ান ওপেনার লিটন। অভিজ্ঞ মুশফিকের ব্যাট থেকেও ঝরে হাসি। তাতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পুরো ৫০ ওভার খেলে স্বাগতিকরা তুলেছে ৪ উইকেটে ৩০৬ রান। এই সংস্করণে আফগানদের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলীয় স্কোর। ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা সফরকারীদের তাই সিরিজে টিকে থাকার কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে সামনে।

লিটন ১২৬ বলে খেলেন ১৩৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস। ৪৭তম ওভারে ডানহাতি পেসার ফরিদ আহমাদের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেওয়ার আগে তিনি মারেন ১৬ চার ও ২ ছক্কা। পরের বলেই সাজঘরের পথ ধরেন মুশফিক। র‍্যাম্প শট খেলার চেষ্টায় থার্ড ম্যানে ধরা পড়েন ফারুকির হাতে। ৯৩ বলে ৮৬ রানের ইনিংসে তিনি মারেন ৯ চার। লিটন ও মুশফিক মিলে ১৮৬ বলে যোগ করেন ২০২ রান। ওয়ানডেতে তৃতীয় উইকেটে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

৪৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ২৮৪ রান। অর্থাৎ স্কোরবোর্ডে ৩২০ বা এর চেয়েও বেশি রান জমা করার জোরালো সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি। শেষ ৪ ওভারে টাইগাররা তোলে মোটে ২২ রান। লিটন ও মুশফিকের বিদায়ের পর থাকেনি দ্রুত গতিতে রান তোলার ধারাবাহিকতা। মাহমুদউল্লাহ ৯ বলে ৬ ও আফিফ হোসেন ১২ বলে ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন।

প্রথম ওয়ানডেতে শুরুতেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ দল। বাঁহাতি আফগান পেসার ফজল হক ফারুকির আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল টপ অর্ডার। এদিন দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ৬ ওভারেই স্কোরবোর্ডে জমা পড়ে ৩৬ রান। তাতে দুই ওপেনার লিটন ও তামিম ইকবালের অবদান অবশ্য ছিল কমই। একাদশে ঢোকা ফরিদের এলোমেলো লাইন-লেংথে অতিরিক্ত রান মেলে অনেক।

সপ্তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক তামিম। তার আউটটি ছিল আগের ম্যাচের কপি! ফারুকির ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তিনি। রিভিউ নিয়েছিলেন। তাতে কাজ হয়নি। ২৪ বলে ১২ রানে থামে তার ইনিংস। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জমে গিয়েছিল লিটনের জুটি। তবে বড় হতে পারেনি। লেগ স্পিনার রশিদ খানের সোজা বলে বিদায় নেন সাকিব। স্পিন করবে ভেবে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন। তার সংগ্রহ ৩৬ বলে ২০ রান।

পরের গল্পটা লিটন আর মুশফিকের। ৮৩ রানে ২ উইকেট পড়ে গেলেও রান তোলার গতি শুরু থেকেই ছিল ভালো। পিচ থেকেও তেমন কোনো সুবিধা আদায় করতে পারছিলেন আফগানিস্তানের বোলাররা। কোনো ঝুঁকি নিয়ে না খেললে এমন উইকেটে রান করা কঠিন নয়। সেই পথেই হাঁটেন লিটন ও মুশফিক। তাদের কাঁধে চড়ে প্রতিপক্ষকে বড় লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় টাইগাররা।

জিম্বাবুয়ের সফরে বাংলাদেশের সবশেষ ওয়ানডে সিরিজে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন লিটন। তিন ইনিংস পর আবার তিনি পেলেন তিন অঙ্কের দেখা। তৃতীয় ওভারেই অবশ্য তার বিপক্ষে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করেছিল আফগানিস্তান। আম্পায়ারের সাড়া না পেয়ে রিভিউও নিয়েছিল। কিন্তু ফারুকির বল লেগ স্টাম্পের বাইরে পড়ায় ধোপে টেকেনি তাদের আবেদন।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

রশিদের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে কভারের ওপর দিয়ে চার মেরে ১০৭ বলে সেঞ্চুরিতে পৌঁছান লিটন। তখন পর্যন্ত তার ব্যাট থেকে আসেনি কোনো ছক্কা। মাইলফলক স্পর্শ করার পর আগ্রাসী হয়ে ওঠেন তিনি। পরে মুখোমুখি হওয়া ১৯ বলে করেন ৩৪ রান। অন্যদিকে, মুশফিক ক্যারিয়ারের ৪১তম হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ৫৫ বলে। তিনিও রশিদকে চার মেরেই পৌঁছান ব্যক্তিগত অর্জনে। রশিদ ছিলেন একেবারেই নির্বিষ ও খরুচে। তার ১০ ওভার থেকে আসে ৫৪ রান।

বাংলাদেশকে যা কিছুটা ভোগাতে পারেন অফ স্পিনার মুজিব উর রহমান। লিটন ও মুশফিক দুজনই একবার করে বেঁচে যান তার বিপরীতে। ইনিংসের ৩৮তম ওভারে লিটন শর্ট কভারে ক্যাচ তুলেছিলেন। কিন্তু সহজ সুযোগ বেরিয়ে যায় আফগান দলনেতা হাশমতউল্লাহ শহিদির হাত গলে। তখন লিটন ছিলেন ৮৭ রানে।

এরপর ৪২তম ওভারে মুশফিককে স্টাম্পিং করতে ব্যর্থ হন চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া রহমানউল্লাহ গুরবাজের জায়গায় নামা উইকেটরক্ষক ইকরাম আলী খিল। অনেক সময় পেলেও বল হাতেই জমাতে পারেননি তিনি। মুশফিক তখন খেলছিলেন ৬৯ রানে। তবে তিনি দ্বিতীয় জীবনকে সেঞ্চুরিতে রূপ না দিতে পারলেও লিটন সুযোগ কাজে লাগাতে কোনো ভুল করেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Trump calls for Iran's 'unconditional surrender' as Israel-Iran air war rages on

Israel and Iran attacked each other for a sixth straight day on Wednesday, and Israeli air power reigns over Iran, but needs US for deeper impact

7h ago