ইবাদত নিজেও 'স্যালুট'টা পেতে পারেন

পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে যে প্রভাববিস্তারকারী পারফরম্যান্স তিনি দেখালেন, তাতে ইবাদত নিজেও পেতে পারেন একটি 'স্যালুট'।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

পরিকল্পনা সাজিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটারকে ফাঁদে ফেলে উইকেট তুলে নেওয়ার দৃশ্য টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পেসারদের জন্য খুব চেনা নয়। ভক্ত-সমর্থকদের পক্ষে এমন কিছু স্মরণে আনাও মুশকিল। চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনে সেই ভালো লাগার চিত্র ফুটিয়ে তুললেন ইবাদত হোসেন। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের ৭ উইকেটের অসাধারণ নৈপুণ্যের পাশে এই ডানহাতি ফাস্ট বোলারের দুই উইকেট আহামরি কিছু নয়। তবে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে যে প্রভাববিস্তারকারী পারফরম্যান্স তিনি দেখালেন, তাতে ইবাদত নিজেও পেতে পারেন একটি 'স্যালুট'।

প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানের লিড পাওয়া বাংলাদেশের বোলিংয়ের নায়ক যদি হন তাইজুল, তাহলে নিঃসন্দেহে পার্শ্বনায়ক ইবাদত। ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও জুটি কতটা জরুরি ও কার্যকর হতে পারে, সেটার প্রমাণ রাখেন দুজনে। 

প্রায় তিন বছর ধরে বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলছেন ইবাদত। উইকেট প্রাপ্তির পর তার উদযাপনের ঢং আলাদা করে নজরে পড়ে। কাউকে সাজঘরে ফেরাতে পারলেই আয়োজন করে 'স্যালুট' দেন তিনি। রোববার পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সাজিদ আলিকে উইকেট শিকার করেও সেই 'ট্রেডমার্ক' ভঙ্গিতে উল্লাস।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এদিন ১৪ ওভার বল করেন ইবাদত। স্কিলের কমতি থাকলেও তার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। চার মেডেনসহ মাত্র ১৬ রান দিয়ে তিনি বিদায় করেন ছন্দে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সাজিদ খানকে।

আগের দিন কিছুটা ভুগেছিলেন ইবাদত। ১৩ ওভারে তিন মেডেনসহ ৩১ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। দ্বিতীয় দিনে শুরু থেকেই অসাধারণ এ পেসার। গতির সঙ্গে এদিন লাইন-লেংথ ঠিক রেখে পরিকল্পনামাফিক বোলিং করে নজর কাড়েন। সবমিলিয়ে তার বোলিং ফিগার ২৬-৭-৪৭-৩।

সাদা পোশাকের ক্যারিয়ারের নবম ম্যাচে ইবাদতের এটি দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। তার সেরা ফিগার ৯১ রানে ৩ উইকেট। ২০১৯ সালে কলকাতায় ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক গোলাপি বলের দিবারাত্রির টেস্ট ছিল সেটি।

দিনের শুরুতে একপ্রান্তে তাইজুলকে আক্রমণে আনেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক। অন্যপ্রান্তে বল তুলে দেওয়া হয় ইবাদতের হাতে। প্রথম ওভারে একজন স্পিনারের জোড়া ধাক্কার পর এমন সিদ্ধান্ত কিছুটা অদ্ভুত ঠেকেছিল। তবে মুমিনুল যে কোনো ভুল করেননি তা বুঝিয়ে দেন ইবাদত।

পাঁচ ওভারের ওই স্পেলে পিচ থেকে কাঙ্ক্ষিত মুভমেন্ট আদায় করে নিতে না পারলেও অফ স্টাম্পের বাইরে টানা বল করে যান ইবাদত। এতে পাকিস্তানের ব্যাটাররা যেমন হাত খোলার সুযোগ পায়নি, তেমনি উইকেট শিকারের নেশায় থাকা তাইজুল পান যোগ্য সঙ্গ। এই স্পেলে তিন মেডেনসহ মাত্র ৩ রান দেন তিনি।

নতুন বল নেওয়ার পর ইবাদতকে ফের আক্রমণে ফেরানো হয়। অন্যপ্রান্তে আবু জায়েদ রাহি দুই ওভার করার পর তাইজুলই হন ইবাদতের সঙ্গী। দুজনে মিলে কাঁপিয়ে দেন পাকিস্তানকে। তাইজুল ছিলেন অগ্রণী ভূমিকায়, ইবাদত পেছনে থেকে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

মধ্যাহ্ন বিরতি শেষে খেলা শুরুর পর দারুণ ছক কেটে রিজওয়ানকে কুপোকাত করেন ইবাদত। এই সেশনের প্রথম ওভারে তিনি চারটি আউটসুইং ডেলিভারি করেন। অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে পড়ে বলগুলো বেরিয়ে যায়। কিন্তু নিজের পরের ওভারের প্রথম ডেলিভারিটি তিনি করেন ইনসুইং। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বল গিয়ে আঘাত করে রিজওয়ানের পেছনের পায়ে। আঙুল উঁচিয়ে আউটের সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়ার। রিভিউ না নিয়েই সাজঘরের পথ ধরেন রিজওয়ান। অবশ্য বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, নিলেও লাভ হতো না।

দ্বিতীয় স্পেলে ৭ ওভারে এক মেডেন দিয়ে ইবাদত খরচ করেন কেবল ১১ রান। তার পরের শিকার সাজিদ। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে সামান্য ভেতরে ঢোকা বলে অফ স্টাম্প উপড়ে যায়। সাজিদ ভেবেছিলেন বল হয়তো আরও ভেতরে ঢুকবে। কিন্তু তার ব্যাটের বাইরের দিকের কানা এড়িয়ে বল আঘাত করে উইকেটে।

আগের আট টেস্টে ৯১.৫০ গড়ে মাত্র ৮ উইকেট পাওয়া ইবাদতের পারফরম্যান্স নিয়ে আছে প্রশ্ন, আছে সমালোচনা। পাকিস্তানের বিপক্ষে তার এই এক ইনিংসের বোলিং সেসবের জবাব নয় বটে। নিবেদন, পরিশ্রম আর অনুশীলনের মাধ্যমে ভাণ্ডারে আরও অস্ত্র প্রয়োজন তার। তবে এটিকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের 'বীজ বপন' হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন তিনি। এই পারফরম্যান্সকে পাথেয় করে নিজের অনুপ্রেরণা হতে পারেন ইবাদত নিজেই।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Bank dissolves National Bank board

Troubled NBL offers cash to journalists in snacks box

After the press conference, the bank officials offered packets with snacks to journalists. However, after taking the packet, journalists noticed that it contained an envelope with Tk 5,000 inside

43m ago