শেষ বিকেলের রোমাঞ্চে হতাশায় পুড়ল বাংলাদেশ

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

তাইজুল ইসলাম দ্রুতই রিভিউ নিলেন, অপর পাশে থাকা ইবাদত হোসেন তারও আগে রিভিউর ইঙ্গিত করলেন। রিভিউ না নিয়েই বা উপায় কি? শেষ চেষ্টা তো করতে হবে।  কিন্তু লাভ হলো না। বল ট্র্যাকিং প্রযুক্তি জানালো বাংলাদেশের হারের খবর। বৃষ্টিতে আড়াইদিন ভেস্তে যাওয়ার পরও বিস্ময়কর ব্যাটিং ব্যর্থতায় ম্যাচ বাঁচাতে পারল না বাংলাদেশ।

বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট ইনিংস ও ৮ রানে হেরেছে মুমিনুল হকের দল। প্রথম ইনিংসে ৮৭ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ২০৫ রানে।  আর মিনিট দশেক টিকতে পারলেই ম্যাচ হয়ে যেত ড্র। কিংবা ৮ রান পেরিয়ে লিড নিতে পারলেও পাকিস্তান পেত না আবার ব্যাট করতে নামার সুযোগ। কারণ ইনিংস বিরতির জন্য যথেষ্ট সময়ই যে ছিল না। অল্পের জন্য হয়নি কিছুই। শেষ বিকেলে বাংলাদেশের সঙ্গী হলো আরেকটি হতাশা। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১২৭ রানে ১২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের হন্তারক অফ স্পিনার সাজিদ খানই হয়েছেন ম্যাচ সেরা। 

Sajid Khan
শেষ উইকেট নিয়ে সাজিদ খানের উল্লাস। দ্রুত রিভিউ নিয়েছিল বাংলাদেশ। লাভ হয়নি। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

আগের চারদিন আকাশ গোমরা থাকলেও এদিন সকাল থেকেই বেশ রোদ ঝলমল। কিন্তু সেই ঝলমলে রোদেও বাংলাদেশ দলে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমেই পড়ে যায় ৪ উইকেট। এরপর মুশফিকুর রহিম-লিটন দাসের প্রতিরোধ এবং পরে সাকিব আল হাসানের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ফের মেলে আলোর দেখা। কিন্তু ৬৩ করা সাকিব ফিরে যাওয়ার পরই আর টিকল না বাংলাদেশ।

অথচ এই ম্যাচ থেকে ফল বের করা ছিল বেশ কঠিন কাজ। প্রথম ইনিংসে অদ্ভুতুড়ে ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে পাকিস্তানকে সেই কঠিন সমীকরণই মিলিয়ে দিয়েছে স্বাগতিকরা। দেখিয়েছে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের চরম হতশ্রী দশা।

চতুর্থ দিন শেষ সেশনেই হারের পরিস্থিতি তৈরি করে বাংলাদেশ। ৪ উইকেটে ৩০০ রান করে পাকিস্তান ইনিংস ছেড়ে দেওয়ার পর ব্যাট করতে নেমে অদ্ভুত নেশায় পেয়ে বসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের। উচ্চবিলাসী শট, ঝুঁকি নিয়ে সিঙ্গেল, বার বার ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে আসা মিলিয়ে আত্মঘাতী শটের উৎসবে মাতেন তারা। ২৬ ওভার ব্যাট করেই পড়ে যায় ৭ উইকেট।  শেষ দিনের সকাল বেলা আগের দিনের ৭ উইকেটে ৭৬ রান নিয়ে নেমে আর ১১ যোগ করেই গুটিয়ে যায় তারা। মিরপুরে নিজেদের সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে পড়ে ফলোঅনে।  

Shakib Al Hasan
৬৩ রান করেন সাকিব আল হাসান। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

দ্বিতীয় ইনিংসে নেমেও সেই একই দশা। টপ অর্ডারের আশা যাওয়ার মিছিলে ২৫ রানেই পড়ে যায় ৪ উইকেট। অভিষিক্ত মাহমুদুল হাসান জয় প্রথম ইনিংসে ফিরেছিলেন শূন্য রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে বাউন্ডারিতে রানের খাতা খুলেন তিনি। তবে চতুর্থ ওভারে তার বিদায়েই ধসের শুরু। প্রথম ইনিংসে বলই পাননি হাসান আলি। এই পেসার দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুতেই উইকেট এনে দেন পাকিস্তানকে। হাসানের বলে ফুটওয়ার্কের দুর্বল ব্যবহারে অফ স্টাম্প খোয়ান জয়। ৬ বলে ৬ রানে থামে তার দৌড়।

পরের ওভারেই বিদায় নড়বড়ে সাদমান ইসলামের। শাহীন শাহ আফ্রিদিকে সামলাতে না পারে মাত্র ২ রান করে এলবিডব্লিউ হন তিনি। অধিনায়ক মুমিনুল হক এক চারে শুরুটা করেছিলেন। দলের বিপর্যয়ে তার ব্যাটের দিকেই প্রত্যাশা ছিল চড়া। কিন্তু হাসানের অ্যাঙ্গেল তৈরি করে ভেতরে ঢোকানো বলে এলবিডব্লিউর শিকার তিনিও। ৮ বলে মুমিনুল ফেরেন ৭ রান করে। তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে ছাঁটেন শাহীন। তার লাফানো বল সামলাতে না পারে গালিতে ক্যাচ দেন ৬ রান করা শান্ত। ২৫ রানেই বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট।

চরম কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে বাঁচাতে জুটি বাধেন মুশফিক-লিটন। প্রথম ইনিংসের পাগলাটে অ্যাপ্রোচ ঝেড়ে তাদের দেখা যায় সতর্ক পথে। ২১তম বলে রানের খাতা খুলেন লিটন। পরে অবশ্য এগিয়েছেন সাবলীল গতিতে। থিতু হতে সময় নেন মুশফিকও। দুজনের জুটিতে বাংলাদেশ বেশ ভালো অবস্থানেই চলে আসছিল। লাঞ্চের পরও তাদের দেখা যায় অনায়াসে খেলতে। এই সিরিজে তৃতীয়বারের মতো ফিফটি পেরুনোর দিকে যাচ্ছিলেন লিটন। 

সাজিদের বলে বাজে শটে তার বিদায়েই ফের ধাক্কা। অনেক শর্ট বল পুল করে শর্ট স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ৪৫ করা লিটন। সাকিব ক্রিজে আসতে সেই জায়গা থেকে দৃঢ়তা দেখান মুশফিক। এই দুজনের জুটিও জমে গিয়েছিল। আশা বাড়ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু চা-বিরতির ঠিক আগে অহেতুক সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টায় কাবু হন মুশফিক। ৪৮ রান করা মুশফিকের বিদায়ে ফের দেখা দেয় শঙ্কা। 

চা-বিরতির পর মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে ছুটছিলেন সাকিব। আগের ইনিংসের হতাশা ভুলে সাকিবের ব্যাটে মিলছিল আশার ছবি। ফিফটিও পেরিয়ে যান তিনি। অপরপাশে মিরাজ দেখাচ্ছিলেন টিকে থাকার নিবেদন। ৫১ রানের জুটির পর শেষ ঘন্টায় মিরাজের আউটই পাকিস্তানের দিকে ম্যাচ হেলে দেয়। একাদশে মাত্র দুই স্পিনার থাকায় অধিনায়ক বাবর নিজেই বল করতে এসেছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাকে প্রথম উইকেট উপহার দেন মিরাজ। অযতা সুইপ করতে গিয়ে হয়ে যান এলবিডব্লিউ। 

খানিক পর  ৬৩ করা সাকিব সাজিদের বলে হয়ে যান বোল্ড। খালেদ আহমেদ আসতেই কাটা পড়েন দ্রুত। তবে শেষ উইকেটে ইবাদতকে নিয়ে লড়াই করছিলেন তাইজুল। ৩৪ বল টিকে ছিলেন তারা। আরও খানিকটা টিকতে পারলে হয়ত গল্পটা হতে পারত ভিন্ন। তা আর হয়নি। আরেকটি হোয়াইটওয়াশ ও আরেকটি ইনিংস হার সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশ দলের। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ৩০০/৪ ইনিংস ঘোষণা 

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩২ ওভারে ৮৭ (সাদমান ৩, জয় ০, শান্ত ৩০, মুমিনুল ১, মুশফিক ৫, লিটন ৬, সাকিব ৩৩, মিরাজ ০, তাইজুল ০, খালেদ ০, ইবাদত ০*; শাহিন ১/৩, নুমান ০/৩৩, সাজিদ ৮/৪২, বাবর ০/১,)।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৮৪.৪ ওভারে ২০৫ (সাদমান ২, জয় ৬, শান্ত ৬, মুমিনুল ৭, মুশফিক ৪৮, লিটন ৪৫, সাকিব ৬৩, মিরাজ ১৪, তাইজুল ৫, খালেদ ০, ইবাদত ০*;  শাহীন ২/৩১, হাসান ২/৩৭, নোমান ০/৪১, ফাহিম ০/৪ , সাজিদ ৪/৮৬, বাবর ১/১)

ফল: পাকিস্তান ইনিংস ও ৮ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাজিদ খান।

ম্যান অব দ্যা সিরিজ: আবিদ আলি

Comments

The Daily Star  | English

Jamaat welcomes polls timeline, criticises Yunus for skipping dialogue before announcement

Expected chief adviser to hold discussions with parties regarding announcing the election timeline, it says

2h ago