তালগোল পাকানো অদ্ভুত অ্যাপ্রোচে বাংলাদেশের বিশাল হার

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

১৯তম ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের একটি ফুলটাস বলে ড্রাইভ করে লংঅনে দিয়ে চার মারলেন টম ব্লান্ডেল। পাশেই ছিলেন ফিল্ডার আফিফ হোসেন। কিন্তু বল ধরার খুব একটা তাড়া ছিল না তার মধ্যে। চেষ্টা করলে হয়তো বাউন্ডারি ঠেকাতে পারতেন। কিন্তু কোনো চেষ্টাই করেননি তিনি। অনুশীলনে রানিং করার মতো দৌড়ে এসে বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠালেন বোলারকে। এটা স্রেফ প্রতীকী চিত্র হলেও পুরো ম্যাচের চিত্রই ছিল এমন।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেটে কদিন আগেই অস্ট্রেলিয়াকে নাস্তানুবাদ করে ছেড়েছে টাইগাররা। আর নিউজিল্যান্ডকে প্রথম ম্যাচে রীতিমতো গুঁড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। তাতেই যেন আত্মতুষ্টিতে পেয়ে বসে মাহমুদউল্লাহদের। কিউইদের ১২৯ রানের লক্ষ্য যেন ১০ ওভার হাতে রেখেই জয়ের তাড়া ছিল তাদের। শুরু থেকেই তেড়েফুঁড়ে খেলার চেষ্টা। আর তার খেসারৎ ভালোভাবেই দিতে হলো তাদের। হেরেই গেল বাংলাদেশ।

রোববার বাংলাদেশকে ৫২ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজে ফিরেছে নিউজিল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১২৮ রান করে তারা। জবাবে ২ বল বাকি থাকতে ৭৬ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

লক্ষ্য তাড়ায় এদিন শুরু থেকেই আগ্রাসী মুডে ছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে পর পর দুই বলে দুটি বাউন্ডারি মারেন লিটন। পরের বলেও মারতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে প্রায় ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও ক্ষান্ত হননি তিনি। সে যাত্রায় বাঁচলেও এর পরের বলে আর পারেননি। ম্যাককনকির শর্ট বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা শেখ মেহেদী হাসান ফিরে যান প্রতিপক্ষকে ক্যাচিং অনুশীলন করিয়ে।

দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের প্রয়োজন ছিল কিছুটা রয়েসয়ে ব্যাটিং করা। সেখানে চারে নেমে প্রথম বলেই ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে ছক্কা হাঁকাতে যান সাকিব আল হাসান। লাইন মিস করে প্যাডে লাগলে সে যাত্রা বেঁচে যান তিনি। কিন্তু পরের বলে একই ঢঙ্গে খেলতে গিয়ে ঠিকই ক্যাচ তুলে দেন লংঅনে। দলীয় ২৫ রানেই বাংলাদেশের তিন উইকেট পেয়ে যেন উজ্জীবিত হয়ে যায় কিউইরা। উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে অসাধারণ বোলিং করতে থাকেন তারা।

ব্যক্তিগত ১১ রানে জীবন পাওয়া মোহাম্মদ নাঈম শেখকে বোল্ড করে দেন রাচিন রবীন্দ্র। সে ধারায় দলীয় ৪৩ রানে টাইগারদের জোড়া ধাক্কা দেন এজাজ প্যাটেল। অধিনায়ককে মাহমুদউল্লাহকে নিকোলসের ক্যাচে পরিণত করার পরের বলেই বোল্ড করে দেন আফিফকে। দলের রান তখন ৬ উইকেটে ৪৩। শঙ্কা জাগে নিজেদের সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাওয়ার। আর শঙ্কাই যেন সত্যি হচ্ছিল। স্কোরবোর্ডে ৫ রান যোগ হতেই আউট হতে পারতেন নুরুল হাসান সোহান। অল্পের জন্য রানআউট হওয়া থেকে বেঁচে যান তিনি।

তবে এক প্রান্ত আগলে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে পারেননি। উল্টো ধীর গতির ব্যাটিংয়ে রান রেট বেড়ে যায় টাইগারদের। শেষ ৭ ওভারে জিততে হলে করতে হতো ৭২ রান। তাই রানের গতি বাড়াতে চেষ্টা চালিয়েছিলেন সোহান। কিন্তু লাভ হয়নি। উল্টো বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে দলের চাপ আরও বাড়িয়ে দেন। পারেননি পরের ব্যাটসম্যানরাও। শেষ পর্যন্ত দেশের মাটিতে সর্বনিম্ন রানেই অলআউট হয় তারা। তবে অপরাজিত থেকে যান মুশফিক। ৩৭ বলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়া করেন ২০ রান! বাংলাদেশের সর্বোচ্চও বটে। 

এর আগে নিজেদের ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ডের শুরুটাও ছিল কিছুটা আগ্রাসী। কিন্তু দলীয় ১৬ রানে ফিন অ্যালেন আউট হয়ে গেলে দেখে শুনেই ব্যাট করতে থাকে তারা। দ্বিতীয় উইকেটে জুটিতে উইল ইয়াংকে নিয়ে ৩০ রানের জুটিতে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন রবীন্দ্র। যদিও এ জুটি ভাঙতে ১৬ রানের ব্যবধানে ৪টি উইকেট হারায় তারা। সেখান থেকে দলকে উদ্ধারকে করেন হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল। গড়েন অবিচ্ছিন্ন ৬৬ রানের দারুণ এক জুটি। চলতি সিরিজে নিজেদের সর্বোচ্চ জুটিতে ভর করেই লড়াকু সংগ্রহ তুলে নেয় দলটি। বাংলাদেশ পায় চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করে অপরাজিত থাকেন নিকোলস। ২৯ বলে ৩টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। ৩০ বলে ৩টি চারের সাহায্যে অপরাজিত ৩০ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন ব্লান্ডেল। এছাড়া রবীন্দ্র ও ইয়াং দুইজনই ২০ বলে ২০ রান করে করেন। বাংলাদেশের পক্ষে ২৮ রানের খরচায় ২টি উইকেট পেয়েছেন সাইফউদ্দিন। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১২৮/৫ (অ্যালেন ১৫, রাচিন ২০, ল্যাথাম ৬৫*, ইয়াং ২০, ডি গ্র্যান্ডহোম ০, লাথাম ৫, নিকলস ৩৬*, ব্লান্ডেল ৩০*; মেহেদি ১/২৭, নাসুম ০/১০, মোস্তাফিজ ১/২৯, সাকিব ০/২৪, সাইফ ২/২৮, মাহমুদউল্লাহ ১/১০)।

বাংলাদেশ: ১৯.৪ ওভারে ৭৬ (নাঈম ১৩, লিটন ১৫, মেহেদি ১, সাকিব ০, মুশফিক ২০*, মাহমুদউল্লাহ ৩, আফিফ ০, সোহান ৮, সাইফ ০, নাসুম ১, মুস্তাফিজ ৪; ডাফি ০/১৫, এজাজ ৪/১৬, ম্যাককনকি ৩/১৫, রবীন্দ্র ১/১৩, কুগেলাইন ১/১৪, ডি গ্র্যান্ডহোম ১/৩)।

ফলাফল: নিউজিল্যান্ড ৫২ রানে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: এজাজ প্যাটেল (নিউজিল্যান্ড)। 

সিরিজ: বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে।  

Comments

The Daily Star  | English

AL attack on NCP rally venue: Four killed as violence grips Gopalganj

At least four people were killed and dozens injured in daylong running battles between law enforcers and Awami League followers in Gopalganj yesterday.

5h ago