ইফতারে যা খেতে পারেন

ছোলা। ছবি: আসিয়া আফরিন চৌধুরী

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে রমজান মাস একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এবারের রমজানে বাংলাদেশে গরমের প্রভাবটা একটু বেশি। সেক্ষেত্রে সুস্থ থাকতে নির্বাচন করতে হবে সঠিক খাবার। যেন এই পবিত্র মাসেও আপনি প্রাণবন্ত থাকতে পারেন।

আমাদের দেশে রোজার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ ঘণ্টা। এই দীর্ঘ সময় রোজা রাখতে গিয়ে শারীরিকভাবে দুর্বলতা আর ক্লান্তি অনুভব করেন। তার উপর অনেকেই ইফতারে খেয়ে থাকেন ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়সহ ভারী খাবার। সারাদিন রোজা রাখার পর এইসব খাবার অন্ত্রে চাপ সৃষ্টি করে। ফলাফল স্বরূপ দেখা যায় হজমের সমস্যা, মাথা ব্যথা, এসিডিটি, দুর্বলতা,পেট ফাপাসহ নানান সমস্যা। তাই ইফতারে খাদ্য নির্বাচনে হতে হবে সতর্ক। পাশাপাশি খাবারটাও হতে হবে স্বাস্থ্যকর, সুষম ও পুষ্টিকর।

কী রাখতে পারেন ইফতারে

ইফতারে অবশ্যই খেজুর রাখবেন। খেজুরে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, শর্করা, পটাশিয়াম ও আয়রন। যা সারাদিন রোজা রাখার পর শরীরের জন্য খুবই দরকারি। তাছাড়া খেজুর পানিশূন্যতাও দূর করে।

রাখতে পারেন এক মুঠো বাদাম। চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট, পামকিন সিডস ইত্যাদি। যা আপনার সারাদিনের পুষ্টির চাহিদা অনেকখানি পূরণ করবে।

ওটস ও কলা। ছবি: পিন্টারেস্ট

যেহেতু গ্রীষ্মকাল তাই এই সময়টাতে প্রচুর পরিমাণে ফল পাওয়া যাবে। প্রচুর পানিযুক্ত ফল যেমন তরমুজ, আনারস, ডাব, কমলা, বাঙ্গি ইত্যাদি ফল রাখতে পারেন। এসব ফলের জুস করেও খেতে পারেন, তবে এতে বাড়তি চিনি যোগ না করাই উত্তম। তাছাড়া ইফতারে যোগ করতে পারেন এক বাটি ফলের সালাদ। 

ফ্রুট সালাদ। ছবি: আসিয়া আফরিন চৌধুরী

শরীর ঠাণ্ডা রাখে এ জাতীয় খাবার যেমন ভেজানো চিনি, ওটস, চিয়া সিডস, টক দই, রঙিন সবজি। এছাড়া পাতলা করে রান্না করা খিচুড়ি কিংবা আঁশসমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল আটা, শস্য, ছোলা, ডাল ইত্যাদি খাবারও রাখতে পারেন ইফতারে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মিলবে স্বস্তি।

চেষ্টা করবেন ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার। এতে শরীরের দূষিত বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে যাবে অপরদিকে হজমশক্তিও ভালো থাকবে।

তরমুজের শরবত। ছবি: পিন্টারেস্ট

ইফতারে যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন

ইফতারে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত তেল-চর্বি যুক্ত খাবার। বাঙালির ইফতারে প্লেটে পেঁয়াজু, বেগুনি, ভাজা ছোলা, চপ, বিরিয়ানির মতো খাবারগুলো অনেকটাই ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়। পুরো রোজার মাস জুড়ে যদি ইফতারে একজাতীয় খাবার গুলো থাকে তবে আলসার, কোষ্ঠকাঠিন্য, নিদ্রাহীনতা দেখা দিতে পারে।

সারাদিন রোজা রাখার পর অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার আপনার কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। হঠাৎ করে অতিরিক্ত চিনি হজমও হতে চায় না, সেক্ষেত্রে ওজন বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এড়িয়ে চলুন সফট ড্রিংকস, বাজারের প্যাকেটজাত জুস। ঘরের বানানো শরবতে চিনির পরিবর্তে গুড় বা মধু যোগ করতে পারেন।

কমাতে হবে চা, কফির মাত্রা, তা না হলে পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ঘুমের সমস্যাও হতে পারে। ধূমপানের অভ্যাস থাকলেও সেটি বাদ দেওয়ার উত্তম সময় রমজান মাস।

বাদ দিন ফ্রোজেন ফুড। সময় বাঁচানো কিংবা মুখরোচক খাবারের জন্য অনেক সময় আমরা বাইরে থেকে 'ফ্রোজেন ফুড' বা 'প্রসেসড ফুড' নিয়ে আসি। এই ধরনের খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রিজারভেটিভ ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান। 

অনেকেই আছেন যারা ঝামেলা কমানোর জন্য মোড়ের দোকানের মুখরোচক ভাজাপোড়া কিনে আনেন। একে তো ভাজাপোড়া তার উপর দীর্ঘদিনের পুরানো, মানহীন পোড়া তেল আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেবে। তাই বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন।

ইফতারে যে খুব দামী খাবার রাখতে হবে তা হয়। বরং দেশীয় শাক-সবজি আর ফলমূলেই পাবেন আপনার প্রয়োজনীয় পুষ্টি। মধ্যম আয়ের যারা আছেন তারা ইফতারে রাখতে পারেন ঘরে পাতা দই, চিড়া, সাগুদানা, ঘরে বানানো ছাতু, দেশীর রসালো ফল। যেমন আনারস,কলা ইত্যাদি।

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলের পুষ্টিবিদ দেবাশীষ রায় বলেন, 'রোজায় খাবার নির্বাচন করতে হবে সচেতনভাবে। কারণ রোজায় যদি আপনার ওজন বাড়ে তা শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তাছাড়া স্যাচুরেটেড ফ্যাট বাদ দিতে হবে। একই তেলে বারবার ভাজা খাবার গুলোতে এই ফ্যাট তৈরি হয়।'

স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বয়সের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন করুন আপনার পরিবারের ইফতার। পরিবারে অসুস্থ, গর্ভবতী নারী, ডায়াবেটিস কিংবা হৃদরোগী থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে আগেই পরামর্শ করে নিন।

ইফতার মানেই পেট ভর্তি খাবার নয়, বরং পুষ্টিকর খাবার নির্বাচনটাই এ সময়ে বেশি জরুরি।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago