নানান স্বাদের কাবাব

কাবাব খেতে ভালোবাসেন অনেকেই। ওপরটায় স্মোকি স্বাদ আর ভেতরে নরম মশলাদার মাংসের এক মজাদার কাবার। 
ছবি: সংগৃহীত

কাবাব খেতে ভালোবাসেন অনেকেই। ওপরটায় স্মোকি স্বাদ আর ভেতরে নরম মশলাদার মাংসের এক মজাদার খাবার কাবাব। 

এই কাবাবের আছে নানা রকমফের। শুধু মাংস পোড়ালেই কাবাব হয় না। বলা হয়ে থাকে, ভালো কাবাব করতে হলে ঘামতে হয়; কারণ, বাইরে পোড়া ভাব থাকবে, কিন্তু ভেতর হবে সুসিদ্ধ ও মোলায়েম। মানুষ যখন থেকে আগুনে পুড়িয়ে খাবার খেতে শিখেছে তখন থেকেই মূলত কাবাবের শুরু।

এশিয়ার নানা অঞ্চলে বিভিন্নরকম মসলার চাষ হতো৷ সেসবের সংস্পর্শে এসে কাবাব পায় ভিন্নমাত্রা। আজ আমরা যে ধরনের কাবাব বানাই, এই কাবাব মূলত মোগলদের আবিষ্কার। তাদের হাত ধরে আসে এই উপমহাদেশে। তবে এর আগেও তুর্কিদের মধ্যে কাবাব খাওয়ার প্রচলন ছিল। ১৩৭৭ সালে কাইসা-ই-ইউসুফ গ্রন্থে প্রথম এভাবে তৈরি কাবাবের উল্লেখ পাওয়া যায়।
 
রেশমি, বটি, শিক, জালি, সামীসহ নানারকম কাবাব রয়েছে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক এদের সম্পর্কে। 

ছবি: সংগৃহীত

রেশমি কাবাব

রেশম থেকে এসেছে এই কাবাবের নাম। এটি তৈরির আগে বিভিন্ন উপাদানের সাহায্যে মেরিনেট করে রাখা হয়। এই মেরিনেট করার প্রক্রিয়ায় দই, মাখনের মতো উপাদান ব্যবহার করা হয়। এর ফলে এই কাবাবের স্বাদে একটা আলাদা স্নিগ্ধতা চলে আসে। ভেতরটা হয়ে পড়ে খুবই মোলায়েম, যেন মুখে দিলেই গলে যাবে। এই কাবাব মোগলদের হাত ধরে প্রথম আসে উত্তর ভারতে। তারপর ছড়িয়ে যায় পুরো ভারতবর্ষে।

বটি কাবাব
 
উর্দু ভাষায় মাংসের টুকরোকে বলা হয় বটি। এই কাবাবের বিশেষত্ব হলো এখানে মাংসের টুকরোগুলো চৌকো করে কাটা থাকে। আরেকটা ব্যাপার হলো, এখানে মাংস হতে হয় হাড় বা চর্বি ছাড়া। এটা সাধারণত কাঠিতে গাঁথা হয় না। তাওয়ায় ভাজা হয়। পাকিস্তানে এই ধরনের কাবাব বেশি প্রচলিত।

ছবি: সংগৃহীত

শিক কাবাব 

আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত কাবাবগুলোর একটি হলো এই শিক কাবাব। শিকে গেঁথে অনেক সময় নিয়ে তন্দুরি ধরনে বা গ্রিলড করে তৈরি করা হয়। মাংসের কিমার সঙ্গে বিভিন্ন মসলা, মরিচ ব্যবহার করা হয়। এরও আছে বিভিন্ন ধরন, যার ভেতর গুলাতি শিক কাবাব, কাকোরি শিক কাবাব, গিলাফি শিক কাবাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।  

ছবি: সংগৃহীত

সামী কাবাব

এই কাবাব দেখতে হয় চপের মতো। এখানে মূলত মাংসের কিমা ব্যবহার করা হয়। সঙ্গে বুটের ডাল ও ফেটানো ডিমেরও ব্যবহার থাকে। কিমাগুলো আরও বিভিন্ন মসলা সহযোগে ম্যারিনেট করে তারপর ফেটানো ডিমে ডুবিয়ে নিয়ে ডুবো তেলে ভাজা হয়। বিকেলের নাস্তা হিসেবে এটি বেশ জনপ্রিয়।   

জালি কাবাব
 
এটির আকৃতি সামী কাবাবের মতোই। তবে পাউরুটি ব্যবহার করার ফলে উপরে কিছুটা জালের মতো আস্তরণ আছে বলে মনে হয়। এটি তৈরির জন্য মাংস একেবারে খুব ছোট ছোট করে টুকরো করে নিতে হয়। এ ছাড়া এখানে ডিম, মসুর ডাল ও বুটের ডালের ব্যবহার আছে। এটিও ডিমে ডুবিয়ে তুলে ডুবো তেলে ভাজা হয়।

টিক্কা কাবাব
 
এটি সহজভাবে টিকিয়া বলে পরিচিত। এখানেও মাংস খুব ছোট ছোট করে কেটে কিমার মতো করে ব্যবহার করা হয়৷ তবে এটি একটু চ্যাপ্টা ধরনের গোল আকৃতি দিয়ে বানানো হয়। এটিও ডুবোতেলে ভেজে তৈরি করা হয়। মসলার বেশ ব্যবহার থাকে এতে।

গুর্দা কাবাব 

পুরান ঢাকা বা মোহাম্মদপুরের বাসিন্দাদের কাছে এই কাবাব বেশি পরিচিত। গরু, খাসি বা মুরগির কিডনি আর হৃদপিণ্ডকে একসঙ্গে মিশিয়ে গুর্দা বলে বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন রকম মসলা, অল্প টকদই সহযোগে ম্যারিনেট করে রেখে তারপর ডুবো তেলে ভাজা হয়। স্বাদের জন্য এই কাবারের আলাদা সুনাম রয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত

খিরি কাবাব 

এটিও মূলত পুরান ঢাকার কাবাব। এটি তৈরি করা হয় গরু বা খাসির 'ওলান' দিয়ে। ব্যতিক্রমধর্মী এই কাবাবটি অন্যগুলোর তুলনায় অনেকের কাছে অল্পপরিচিত, তবে শিক আকারে বা ডুবোতেলে ভেজে করা এই কাবাব পুরান ঢাকায় বেশ জনপ্রিয়।  

দম কাবাব  

এই কাবাবের বিশেষত্ব হলো এখানে বড় হাঁড়িতে রান্না করার পাশাপাশি নিচে আবার একটি পানির পাত্র নিয়ে সেখানে পানি রাখা হয়। তবে পানি যেন মাংসের ভেতর চলে না যায়, সেটিও খেয়াল রাখতে হয়। এক্ষেত্রে ঘি-এর ব্যবহারও আছে। মাংস কিছু পরিমাণ ঘিতে ভেজে আবার মাংসের ওপরে পরে ঘি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অল্প আঁচে অনেকক্ষণ ধরে দমে দমে এই কাবাব তৈরি হয়।

ছবি: সংগৃহীত

সুতি কাবাব

পুরান ঢাকার চকবাজার এই কাবাবের আদিভূমি। বিশেষত রমজান মাস এলেই এর চাহিদা তুমুলভাবে বেড়ে যায়। এটি একরকম শিক কাবাবই, তবে এতে এত পাতলা করে কাটা মাংস ব্যবহৃত হয় যে, এটি খুলে পড়ে যেতে পারে। তাই একে সুতা বা সুতলির সাহায্যে শিকের সঙ্গে গেঁথে নেওয়া হয়। ঘ্রাণের কারণে একে 'বাসনা কাবাব'-ও বলা হতো।   

বিন্দি কাবাব 

বিন্দ বলতে বোঝায় ছোট ছোট দানা। এই কাবাবে মাংসের কিমাকে একেবারে ছোট ছোট বলে পরিণত করে তা তেলে ভাজা হয়। তবে এখানে ঘি, পাউরুটি ও পোস্তদানার ব্যবহার কাবাবটির স্বাদে আলাদা মাত্রা এনে দেয়।

 

Comments

The Daily Star  | English
IMF calls for smaller budget

IMF suggests raising power, gas and fertiliser prices

The International Monetary Fund yesterday recommended reducing government subsidies by hiking prices of power, gas and fertiliser, and spending the saved money on society safety net programmes.

15h ago