পোষা প্রাণী যেভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়

ভাবুন তো, আপনার প্রিয় কুকুরটি আপনাকে দেখামাত্রই লেজ নাড়িয়ে অভিবাদন জানাচ্ছে, কিংবা কোলে বসা বিড়ালটি মায়াভরা দৃষ্টিতে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। বিরক্তিকর দিনেও এসব মুহূর্তগুলো আপনার মুখে হাসি ফোটাতে পারে। শুধু তাই নয়, পোষা প্রাণীরা গম্ভীর মানুষকে কোমল স্বভাবের করে দিতে পারে নিমেষেই। 
ছবি: বাঘ অ্যান্ড কো.

ভাবুন তো, আপনার প্রিয় কুকুরটি আপনাকে দেখামাত্রই লেজ নাড়িয়ে অভিবাদন জানাচ্ছে, কিংবা কোলে বসা বিড়ালটি মায়াভরা দৃষ্টিতে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। বিরক্তিকর দিনেও এসব মুহূর্তগুলো আপনার মুখে হাসি ফোটাতে পারে। শুধু তাই নয়, পোষা প্রাণীরা গম্ভীর মানুষকে কোমল স্বভাবের করে দিতে পারে নিমেষেই। 

তবে, পোষা প্রাণীরা যে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে, তা বুঝতে পারে না অধিকাংশ মানুষ। 

ক্ষেত্রবিশেষে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভিন্ন হলেও, পোষা প্রাণীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের মানব সঙ্গীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে কোয়ারেন্টিনের সময়ে পোষা প্রাণীদের স্নেহ ও সাহচর্যের কথা সেটারই ইঙ্গিত করে। 

পারিবারিক পরিবেশে স্নেহ আদান-প্রদান আর দৈনন্দিন ব্যস্ততায় বন্ধুদের আলিঙ্গনের মতো ব্যাপার যখন বিরল হয়ে ওঠে তখন স্পর্শ পাওয়ার মতো মৌলিক চাহিদা অতৃপ্ত থেকে যায়। সেক্ষেত্রে পোষা প্রাণীর স্পর্শ এই চাহিদা পূরণের মাধ্যমে ইতিবাচক সংবেদনশীলতা প্রদান করে। ক্লান্তিকর একটি দিন শেষে বাড়িতে আসার পর তাদের ভালোবাসা মনকে স্বস্তি দেয়। 

তাছাড়া কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণী পোষা বা তাদের সঙ্গে খেলাধুলা করলে অক্সিটোসিন ও ডোপামিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যা ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি করে এবং ব্যক্তি ও তাদের পোষা প্রাণী উভয়ের জন্য একটি ভালো বন্ধন তৈরি করে। 

দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষের ক্ষেত্রে প্রাণী পুষলে ও তাদের আলিঙ্গন করলে সংবেদনশীল উপশম দেয়। সামাজিক উদ্বেগের কারণে স্বাচ্ছন্দ্য থেকে বঞ্চিত মানুষদের জন্য পোষা প্রাণীর সাহচর্য পারস্পরিক সহমর্মিতার উৎস হিসেবে কাজ করে। 

কাছের মানুষকে আলিঙ্গন করতে চাওয়ার ব্যাপারটি যখন প্রশ্নবিদ্ধ কিংবা ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে, তখনো প্রাণীদের সহাবস্থান নির্দ্বিধায় যে কাউকে সুখকর উপলব্ধি দিতে পারে। কোনো প্রকার ভয় ছাড়াই সেরোটোনিনের উৎস হিসেবেও বেশ ভালো কাজ করে। 

দীর্ঘ সময় ধরে যত্ন নেওয়ার মতো কোনো পোষা প্রাণী থাকলে জীবনের দুঃসময়েও ভালোবাসার অনুভূতি দেয়। এমনকি জীবনের কিছু কাঠামো তৈরিতেও ভূমিকা পালন করে। তাকে সময়মতো খাওয়ানো, গোসল করানো, বেড়াতে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো একজন অন্যমনস্ক এবং অগোছালো মানুষকেও নিয়মতান্ত্রিক করে তোলে। 

দৈনন্দিন জীবনে আরও বেশি কর্মঠ হতেও অবদান রাখে পোষা প্রাণী, যা বেশিরভাগ মানুষই নিজের ইচ্ছায় হতে পারে না। দিনভর বিছানায় শুয়ে থেকে বিষন্নতায় সময় কাটানোর চেয়ে প্রিয় কুকুরের সঙ্গে বাইরে বের হওয়া কিংবা বিড়ালের সঙ্গে খেলার মাধ্যমে মনকে উদ্দীপ্ত রাখতে উৎসাহ দেওয়া হয়।

পোষা প্রাণী আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান নয়, তবে হাসির কোনো কারণ না থাকলেও যে তারা আমাদের হাসির কারণ অন্তত হতে পারে।

 

অনুবাদ করেছেন আসরিফা সুলতানা রিয়া। 

 

Comments