সাদা শার্টের যত্ন নেবেন যেভাবে

চোখ বন্ধ করে আপনি যদি কখনো ক্লাসিক পোশাকের কথা চিন্তা করেন, তাহলে প্রথমেই মাথায় আসবে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্টের কথা। যুগ যুগ ধরে ফ্যাশনে নানা বৈচিত্র্য আসলেও সাদা শার্ট কখনোই ফ্যাশনের বাইরে যায়নি।
তাই বিশেষ এই পোশাকের সম্পূর্ণ যত্ন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ অনুযায়ী এই লেখাটি।
সতর্ক হোন ডিওডোরেন্ট ব্যবহারে
আপনার সাদা শার্ট পরার সময় যদি কোনোভাবে সেটাতে ডিওডোরেন্ট লেগে যায়, তাহলে সেই দাগ তোলা প্রায় অসম্ভব। সেক্ষেত্রে ডিওডোরেন্ট ব্যবহারের সময় সেটি পুরোপুরি শুকানোর পরে সাদা শার্ট পরবেন। এতে করে ডিওডোরেন্ট শার্টে লেগে যাবার সম্ভবনা থাকবে না।
তবে অতিরিক্ত ঘাম হলে শার্টের ভেতরে পাতলা স্যান্ডো গেঞ্জি পরে নিতে পারেন। এতে করে ঘামগুলো সব সেখানেই লেগে থাকবে এবং শার্টে দাগ লাগবে না।

সঠিক ডিটারজেন্ট নির্বাচন
সাদা শার্ট পানিতে ভেজানোর সময় একই সঙ্গে অন্য কোনো রঙের কাপড় ভেজাবেন না। কেন না সাদা ছাড়া অন্য কাপড়ের রঙ সাদা শার্টে লেগে যেতে পারে। অথবা সাদা রঙের সঙ্গে মিশে শার্ট কিছুটা হলদে বা অন্য রঙের হয়ে যেতে পারে। তাই সাদা শার্ট আলাদাভাবে পানিতে ভেজাবেন। ওয়াশিং মেশিন হলে সেখানে অন্য রঙের কাপড় একসঙ্গে ওয়াশ করতে দেবেন না।
আলাদাভাবে সাদা শার্ট ভেজানোর আরও অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন অনেক ডিটারজেন্ট পাওডার রয়েছে যেগুলোতে থাকা উপাদান অন্য কাপড়ের রঙ উঠিয়ে ফেলতে পারে বা নষ্ট করে ফেলতে পারে। কিন্তু সাদার ক্ষেত্রে এই সমস্যা নেই। তাই খুব প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ডিটারজেন্ট পাউডার ব্যবহার করতে পারেন সাদা কাপড় ধোঁয়ার জন্য। ডিটারজেন্টের মধ্যে যদি সোডিয়াম সালফেট সল্ট থাকে তাহলে সেটি সাদা শার্ট ধূসর হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
অভিজ্ঞরা বলেন, সাদা শার্টে যদি খাবারের দাগ থাকে কিংবা চা, কফি, বিটরুটের মতো কঠিন কোনো দাগ লেগে যায়, তাহলে এমন ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে হবে যেটিতে সাইট্রিক এসিড বা সোডিয়াম পাইরাবোরেট আছে। কেন না এই উপাদানগুলো খাবারের দাগকে নিমিষেই পানির মধ্যে দ্রবীভূত করে ফেলে। ফলে আপনার সাদা শার্ট আবারও হয়ে উঠবে দাগহীন ধবধবে।
ডিটারজেন্ট নির্বাচনের সময় লক্ষ্য রাখেতে হবে কোন ডিটারজেন্ট আপনার শার্টের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। সে ক্ষেত্রে কয়েকটি ডিটারজেন্ট টেস্ট করে দেখতে পারেন কোনটি কাপড়ের জন্য ভালো।

কঠিন জায়গাগুলো আগেই ধুয়ে ফেলুন
শার্টের কলার এবং কাফস পুরোটা সময়ই শরীরের সঙ্গে লেগে থাকে। ফলে শার্টের অন্যান্য জায়গা থেকে সেই জায়গাগুলোতে বেশি ময়লা জমে এবং কালচে হয়ে যায়। তাই শার্ট ধোয়ার সময় সেই কঠিন ময়লাগুলো তুলে ফেলতে হবে আগেই। সেজন্য শার্ট ভিজিয়ে কলার এবং কাফসগুলোতে ব্রাশের সাহায্য কিছুটা ঘষে নিবেন। এতে করে স্কিন থেকে শার্টে উঠে আসা দাগগুলো চলে যাবে।
যদি দাগ না যায়, তবে মনে করতে হবে স্কিনের মধ্যে থাকা ন্যাচারাল ওয়েল সেই শার্টের সঙ্গে লেগে একটা হলুদাভ দাগ তৈরি করেছে। এ ধরনের দাগ অনেকদিন শার্ট ব্যবহার করলে কিংবা দাগ না উঠিয়ে আয়রন করলে হতে পারে। এই দাগগুলো উঠানো কিছুটা কঠিন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরামর্শ হচ্ছে, পানির সঙ্গে বেকিং সোডা মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে সেই পেস্ট শার্টের দাগযুক্ত জায়গাগুলোতে লাগিয়ে সারারাত রেখে দেওয়া। আপনি ধোঁয়ার ক্ষেত্রে ওয়াশিং মেশিন কিংবা সাধারণ পদ্ধতি যেটাই ব্যবহার করুন না কেন সেখানে বেকিং সোডা যুক্ত করতে পারেন। এতে সাদা কাপড়ের উজ্জ্বলতা অনেকটা বেড়ে যায়।

সূর্যের আলোতে শুকাতে দিন
সূর্যের আলোতে শার্ট শুকাতে দিন। কেন না সূর্যের আলো সাদা শার্টের উজ্জ্বলতা আরও বাড়িয়ে তোলে। তাছাড়া ডিটারজেন্টে থাকা অপটিক্যাল উপাদান সূর্যের আলোর সঙ্গে মিশে শার্টকে আরও বেশি উজ্জ্বল করে তোলে। তাই সাদা শার্ট শুকনোর জন্য খোলামেলা ও রৌদ্রযুক্ত বারান্দা বিশেষভাবে উপযোগী।

আয়রন করা জরুরি
একেবারে শুকনো নয় বরং হালকা ভেজা অবস্থায় শার্ট আয়রন করলে ভালো হয়। আয়রনকে মিডিয়াম টেম্পারেচারে নিয়ে শার্ট আয়রন করুন। আয়রন করার সময় শার্টের কলার এবং কাফসগুলো প্রথমে আরয়ন করে নিন। এর পরে হাতের অংশ আয়রন করে নিন। শেষে শার্টের বডির অংশ আয়রন করুন। অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ না করাই ভালো। কেন না এতে শার্টের কাপড় দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।
তবে আয়রন করতে না চাইলে অবশ্যই শার্ট শুকানোর সময় কোর্ট হ্যাঙ্গার ব্যবহার করুন। হ্যাঙ্গারে কোনো দাগ আছে কি না তা দেখে নেবেন। হ্যাঙ্গার যদি কালো কাঠের হয় তাহলে শুকানোর সময় সেটা ব্যবহার করবেন না। কেন না এতে শার্টে দাগ পড়ে যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
Comments