উপাচার্য পদত্যাগের আন্দোলন: আলোচনা না সময়ক্ষেপণ?

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে আলোচনার কথা বলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চালাকি, ছলনা এবং উপাচার্যকে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষাবিদরা।

তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকার চাইলেই এই সমস্যার সমাধান আরও আগেই করতো পারত। কিন্তু এখানে উদাসীনতা দেখানো হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শাবিপ্রবির ঘটনায় আলোচনার নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকার এক ধরনের উদাসীনতা দেখাচ্ছে। সেখানে সরকারের আরও তৎপর থাকা উচিত ছিল। কিন্তু সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।'

তিনি বলেন, 'সম্ভবত মনে করা হচ্ছে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে সেখান থেকে সরে যাবেন। তাই তাদের সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের দাবিকে সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে শিগগির সমাধান করা প্রয়োজন।'

ঢাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, 'আলোচনা আলোচনা খেলার মধ্যে দিয়ে এক ধরনের চালাকি করা হচ্ছে। এই চালাকি উপাচার্যকে রক্ষার চালাকি। তারা শিক্ষার্থীদের ডেকে বলতে চান ভিসি তো অনেক ভালো ভিসি, তাকে পদত্যাগ করানো যাবে না। নানা সময় নানা আন্দোলনে এমন আলোচনা-আলোচনা খেলা হয়। শিক্ষার্থীদের চাপ দেওয়ার জন্য আলোচনার এই খেলা হচ্ছে। একটা মানুষকে খুশি করতে গিয়ে লাখ লাখ মানুষকে অখুশি করা হচ্ছে সরকার কি এটি বোঝে না?'

তিনি বলেন, 'সামান্য এক ছোট বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ জন উপাচার্য এক হয়ে গেলেন। আমরা কি কখনো দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দের দাবিতে তাদের এক হতে? আমাদের শিক্ষার্থীরা যে বাজেভাবে হলে থাকে, বাজে খাবার খায়, কই সেসব বিষয়ে বরাদ্দের জন্য তো উপাচার্যদের এক হতে দেখি না। অযোগ্য একজন ভিসিকে বাঁচানোর জন্য অল্প সময়ের মধ্যে সব ভিসি এক হয়ে গেছেন। এগুলো তো ভালো লক্ষণ না।'

তিনি আরও বলেন, 'এই ভিসি জাবির মেয়েদের নিয়ে যে কথা বলেছেন তাতেই তো তার পদত্যাগ করা উচিত। এই আলোচনা কোনো ফলপ্রসূ হবে না। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এক ধরনের চাপের মধ্যে ফেলে যদি কিছু ফায়দা লোটা যায় সেটাই উদ্দেশ্য।'

ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, 'শুরু থেকেই এই বিষয়ে আলোচনা করা যেত। তা না করে ছোট ঘটনাকে বড় ঘটনায় রূপ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুরুতেই সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। তারা যদি প্রত্যেকটি ধাপ চিন্তা করত তাহলে এই ঘটনা এতদূর গড়াত না। শিক্ষার্থীদের আবেগ থাকবে, উচ্ছ্বাস থাকবে এবং তাদেরই স্বপ্ন থাকবে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়। আমাদের লাইফ লাইন হলো আমাদের শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা কোনো সমস্যায় পড়লে যতদ্রুত সম্ভব তাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। শিক্ষার্থীরা আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেক কিছু করতে পারে, বলতে পারে। কিন্তু শিক্ষকদের আরও বেশি নমনীয় হতে হবে। এটা তো নালিশ দেওয়ার জায়গা না।'

তিনি বলেন, 'শাবিপ্রবিতে যা হয়েছে তা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, এমন কি যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুলিশ এভাবে হামলা চালাবে তা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সাউন্ড গ্রেনেড তো যেকোনো জায়গায় মারা হয় না। আমি হেফাজতের আন্দোলনের সময় সাউন্ড গ্রেনেড দেখেছি তারপর শাবিপ্রবির ঘটনায় দেখলাম। শিক্ষার্থীদের ওপর কেন সাউন্ড গ্রেনেড মারা হলো? অবশ্যই আমি মনে করি প্রশাসন সেখানে ভুল করেছে।'

'শিক্ষার্থীদেরও তো আন্দোলন করার একটা সীমা বা ধৈর্য আছে। আমি মনে করি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা উচিত,' তিনি যোগ করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন বলেন, 'আলাপ-আলোচনা কূটনীতির ভাষা। এগুলো রাজনীতির ভাষা। এখানে আলাপ আলোচনা করার কিছু নেই। যে কোনো কারণে শিক্ষার্থীরা চান না এই উপাচার্য সেখানে থাকুক।'

তিনি বলেন, 'শিক্ষামন্ত্রী যা করছেন সেটার মাধ্যমে তিনি নিজেকে এক্সপোজ করছেন। তিনি সরকারকে এক্সপোজ করছেন। সরকারের মনমানসিকতা আসলে কেমন এর মধ্যে দিয়েই বোঝা যাচ্ছে। এগুলো খুব দুঃখজনক। এভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় নষ্ট হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মন ভেঙে দিয়ে কোনো কিছুই ভালো হয় না। সরকার যা করছে তা অকল্পনীয় খারাপ।'

তিনি আরও বলেন, 'আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ছলনা করা হচ্ছে। এগুলো খুব অসুন্দর এবং অশ্রদ্ধেয় কাজ। আমাদের ছেলে মেয়েরা কষ্ট পেয়েছেন এটা বোঝাই যাচ্ছে। তারা তরুণ। তাদের বয়স কম। তাদের কাঁচা আবেগ থাকবে এটাই তাদের সৌন্দর্য। কিন্তু এগুলোকে নিয়ে তো আর রাজনীতি করা চলে না। কূটনীতি করা চলে না। আলাপ আলোচনা করতে হবে, লিখিতভাবে দাবি দিতে হবে, তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে— এগুলো খুব খারাপ কথা। এগুলো ঔপনিবেশিক শাসকদের মতো কথা। এই সরকার মানুষকে অবজ্ঞা করতে করতে এমন পর্যায়ে এসেছে তারা এখন আর কোনো মানুষকেই মানুষ মনে করেন না। এগুলো খুব অসুন্দর, অশ্রদ্ধেয় কাজ।'

Comments

The Daily Star  | English

Sagar-Runi murder: Inconclusive DNA test results stall probe

The task force investigating the 2012 murders of journalist couple Sagar Sarowar and Meherun Runi in its report submitted to the High Court last month said it required more time to complete the probe as the results of the DNA samples collected from the scene were inconclusive.

4h ago