কলেজ ভবনে ৭০টি মৌচাক, ৫২ হাজার টাকার মধু বিক্রি

কলেজ ভবনের জানালার কার্নিশজুড়ে অসংখ্য মৌচাক। চারিদিকে ওড়াউড়ি করছে মৌমাছি। এ দৃশ্য দেখতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন কলেজ প্রাঙ্গণে। এ ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা কলেজে।
জানা গেছে, কলেজের ওই ভবনটিতে মৌমাছির দল ৭০টি চাক বেঁধেছে।
এ বিষয়ে কলেজের হিসাব সহকারী মো. নাজমুল হুদা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৫২ হাজার টাকায় ৭০টি চাক বিক্রি করা হয়েছে। এই টাকা কলেজের রাজস্ব খাতে জমা হবে।'
তার ধারণা, কলেজের আশেপাশে অনেকে বাণিজ্যিকভাবে সরিষা চাষ করেন। সেই কারণেই হয়তো এখানে মৌমাছি চাক বেঁধেছে।

নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, 'সাধারণত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত নকলা উপজেলায় সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। এ বছর ৬ হাজার ৫০০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ৩-৪ বছর আগেও মধুর উৎপাদন এত বেশি ছিল না।'
তিনি বলেন, 'নকলায় সরিষার আবাদ বাড়ায় মধুর উৎপাদন বেড়েছে। গত বছর প্রায় ১ হাজার ৮০০ একর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছিল। এ বছর ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। বাজার মূল্য ঠিক থাকলে আগামীতে সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যেতে পারে।'
কলেজ প্রাঙ্গণে এতগুলো মৌচাক শিক্ষার্থীদের জন্য হুমকি কি না জানতে চাইলে নাজমুল হুদা বলেন, 'কয়েক বছর ধরেই মৌচাক আছে। এবার বেশি হয়েছে। ৩-৪ বছরে মৌমাছি কাউকে কামড় দেয়নি। আগে আমরা মধু সংগ্রহ কলেজের স্টাফরা ভাগাভাগি করে নিতাম। এবার বিক্রি করা হয়েছে।'
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে প্রতিবছর ৫ থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের উপপরিচালক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে দেশে প্রতিবছর দেশে ১ লাখ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন করা সম্ভব।'
তিনি বলেন, 'বর্তমানে প্রতিবছর ৭০০ থেকে ৮০০ টন মধু জাপানের রপ্তানি করা হয়। আমরা উৎপাদন বাড়াতে পারলে আরও বেশি মধু বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা সম্ভব। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার না করায় অনেক সময় আমরা ভালো মধু সংগ্রহ করতে পারি না।'
দেশে মধু উৎপাদন বাড়াতে নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা ২ হাজার মৌ-বক্স কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছি। এই বক্সগুলো মধু উৎপাদনের পাশাপাশি মৌমাছির পরাগায়নে সাহায্য করবে।'
মধুকে বলা হয়ে থাকে মহৌষধ। মধুর উপকারিতার কথা আমরা কম-বেশি সবাই জানি। কোষ্ঠকাঠিন্য, হাঁপানি, নিদ্রাহীনতা ও ত্বকের লাবণ্য ফেরাতে মধু কার্যকর ভূমিকা রাখে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মধুতে সরাসরি গ্লুকোজ থাকে না। মধুতে ফ্রুকটোজ থাকে। গ্লুকোজ যেমন সরাসরি রক্তে চলে আসে, মধু আবার গ্লুকোজে কনভার্ট হয়ে রক্তে আসে। মধু খেলে সরাসরি রক্তে সুগার আসে না। সুগার সরাসরি রক্তে মিশে যে ক্ষতি হয় মধুতে সে ধরনের ক্ষতিকর কিছু নেই।'

তিনি বলেন, 'চিনি সরাসরি যে ক্ষতি করে, মধু খেলে তেমন ক্ষতি হয় না। সুগার বেশি পরিমাণ খেলে শুধু ডায়াবেটিস হচ্ছে তা না। তার পাশাপাশি কার্ডিওভাসকুলার রোগের জন্য ক্ষতি করে। কার্ডিওভাসকুলার হার্ট বা রক্তনালীর ওপর সংক্রমণ করে।'
রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি বলেন, 'মধু দেহে তাপ ও শক্তি যোগায়। মধুতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়। কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে।'
তিনি বলেন, 'মধু ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এক চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়। মধু রক্তশূন্যতা, হাঁপানি ও ফুসফুসের যাবতীয় রোগ, অনিদ্রার, যৌন দুর্বলতায় প্রতিরোধে, তারুণ্য ধরে রাখতে, দাঁতের ক্ষয়রোধ ও মধু মুখের ঘায়ের জন্য উপকারী।'
তিনি আরও বলেন, 'রূপচর্চার ক্ষেত্রে মধু অনেক বেশি কার্যকর। মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির মধু ব্যবহৃত হয়।'
দেশে বিভিন্ন ফুল থেকে মধুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে কৃষকরা।
Comments